দেশ বিদেশ
জুরুর মামলার জালে আশা টার্গেট ১০ কোটি টাকার জমি
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
২৪ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন
প্রায় ১০ কোটি টাকা দামের জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টায় মামলায় জর্জরিত করা হয়েছে সরাইলের আশা বেগমকে (৪৪)। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায়ও দেয়া হয়েছে মামলা। ক্ষুর দিয়ে পোঁচানো হয়েছে তার শরীর। সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে উচালিয়াপাড়া মোড়ে ওই জমির অবস্থান। যেখানে প্রতি শতক জমির মূল্য ৮ লাখ টাকা। অভিযোগ লোভনীয় ওই জমি হাতিয়ে নিতেই এই নির্যাতন। আশা বেগমের দাবি- নিজ সরাইল মৌজার ওই ১২১ শতক জমির মালিকানা তার বাপ-চাচাদের। এর একাংশ একই এলাকার প্রয়াত মাজম খাঁর কাছে বিক্রি করেছিলেন তার পূর্ব পুরুষরা। ওই অংশটি কয়েক বছর আগে কিনে নেয়ার পর পুরো জমি দখলে তাদের নানাভাবে নির্যাতন শুরু করেন বড় দেওয়ানপাড়ার জুরু মিয়া। এই তৎপরতায় গত ১৮ মাসে বিভিন্ন লোককে বাদী করে মাদক ব্যবসা, মারধরসহ নানা অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা দেয়া হয়। এসব মামলার বাদীরা তাকে চেনে না, এমনকি তিনিও বাদীদের চেনেন না। এসব মামলায় তার পরিবারের আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়। স্বামী-সন্তানসহ ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বসবাসকারী আশা লিভারের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন গত বছরের ১৭ থেকে ১৯শে ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে ১৮ই ফেব্রুয়ারি বড় দেওয়ানপাড়ার জাবেদ মিয়ার আঙ্গুল ভাঙ্গার অভিযোগে মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। যদিও মামলার ঘটনা মিথ্যা ও সাজানো বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে। ২০১৯ সালের ১৫ই জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন সরাইল থানার তৎকালীন এসআই মো. এনামুল হক। এরপরই জুরু মিয়া সরাইল সার্কেলের সে সময়কার সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকিরকে দিয়ে ওই এসআইকে বদলি করে দেন। পরে মামলাটি পুনঃতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। আশার অভিযোগ জুরু মিয়ার মালিকানাধীন একটি ভবনের ভাড়াটিয়া সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়। এই শক্তি কাজে লাগিয়ে এই মামলাটি ছাড়াও আরো সাতটি মামলায় জড়ানো হয় তাদেরকে। সব মামলার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি নিয়ে একাধিকবার সে সময়কার ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছে গেলে তাকে পাত্তা দেননি ওসি। এদিকে জাবেদের মামলায় গত ৫ই মার্চ থেকে ১৩ই মার্চ পর্যন্ত কারাভোগ করেন আশা। জামিনে বের হওয়ার পরদিনই হামলা হয় তার ওপর। ১৪ই মার্চ রাত সোয়া ৯টার দিকে সরাইলের বড্ডাপাড়া এলাকায় বোনের বাড়ি থেকে ফেরার পথে জুরুসহ তার কয়েকজন সহযোগী আশা ও তার মেয়ে রুমাকে ক্ষুর দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অথচ আদালতে ৭ ধারার একটি মামলায় দাঙ্গা-হাঙ্গামায় না জড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন জুরু। তবে জুরু মিয়ার দাবি, সেখানকার ১০৪ শতক জমি তার ক্রয় করা। ১৫-২০ বছর আগে মাজম খাঁ ও আবদুল বারীর কাছ থেকে তিনি এই জমি কিনেছেন। আশা তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। সে জেল থেকে বের হয়ে আমার বিরুদ্ধে একটা নাটক সাজাইছে।
সরাইল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, জুরু মিয়া ও আশা বেগমের মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আমি জানতাম। তবে আশার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কারণ, আমি থানা থেকে ছুটিতে গেলে ওই সময়ের মধ্যে জুরু থানায় কর্মরত অন্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মামলা কিংবা পুলিশ প্রতিবেদন করাতেন। এ ব্যাপারে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সরাইল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, জুরু মিয়া ও আশা বেগমের মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আমি জানতাম। তবে আশার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কারণ, আমি থানা থেকে ছুটিতে গেলে ওই সময়ের মধ্যে জুরু থানায় কর্মরত অন্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মামলা কিংবা পুলিশ প্রতিবেদন করাতেন। এ ব্যাপারে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।