অনলাইন

উইকেট দিয়ে পেটাচ্ছিলো আর বলছিলো- এ নে আজাদি

অনলাইন ডেস্ক

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

দিল্লিতে মুসলিসম জনগোষ্ঠির ওপর ভয়াবহ নৃশংসতা চলছে। কোন কারণ ছাড়াই নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে তাদের। জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে বাড়িঘর। রাস্তা থেকে ধরে মুসলিম যুবকদের ওপর চলছে নির্যাতন। হামলাকারীরা হুমকি দিয়ে বলছে, গুজরাটের মতো দাওয়ায় না দিলে চলবে না। সেই ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র ওঠে এসেছে আনন্দবাজার প্রত্রিকার এক রিপোর্টে।    

আনন্দবাজার লিখেছে- ‘তোদের নাগরিকত্ব চাই? দিচ্ছি, দাঁড়া!’
মৌজপুরে মহম্মদ ইব্রাহিমের বাড়ির গেট ভেঙে ঢুকে এক দল লোক যখন পেট্রল ছড়াচ্ছে, তাদের মুখে একটাই শাসানি। আবার খাজুরি খাসে বিএসএফ জওয়ান মহম্মদ আনিসের বাড়িতে তাণ্ডব শুরুর সময় একই সুরে গালিগালাজ— ‘ইধার আ পাকিস্তানি! তুঝে নাগরিকতা দেতে হ্যায়।’ প্রথমে বাড়ির বাইরে গাড়িতে আগুন লাগানো হয়, তার পরে আনিসের বাড়িতে ঢুকে গ্যাস সিলিন্ডার খুলে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা, ২০০২ সালে গুজরাতের মতোই। বাবা, কাকা, খুড়তুতো বোনকে নিয়ে কোনও ক্রমে পালান আনিস। তাঁর আর বোনের বিয়ের জন্য টাকা, গয়না রাখা ছিল বাড়িতেই। সব পুড়ে ছাই।

মৌজপুর-বাবরপুর চক থেকে বাঁ দিকে বাঁক নিলেই সারি সারি দোকানের ধ্বংসস্তূপ কালো ছাই মেখে দাঁড়িয়ে। দোকানের সামনে আবিদ হুসেন বলছিলেন, ‘আগুন লাগানোর সময় বাধা দিয়ে বললাম, কী দোষ করেছি? মারতে মারতে বলল, তোদের বড্ড বাড় বেড়েছে। গোটা দেশকে শাহিন বাগ বানাতে চাইছিস!’

মঙ্গলবার রাতে ভজনপুরায় পাঁচ যুবককে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়। কারখানার কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁদের একজন, বছর কুড়ির হাবিবের মাথায় ব্যান্ডেজ। মুখ ফেটেছে। হাবিব বলেন, ‘উইকেট দিয়ে পেটাচ্ছিল আর বলছিল, তোদের নাকি আজাদি চাই? এই নে আজাদি।’

জাফরাবাদের রাস্তার পাশের মাঠে শাহিন বাগের মতোই দু’মাস ধরে সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে ধর্না চলছিল। সীলমপুর থেকে জাফরাবাদ পর্যন্ত দু’কিলোমিটার রাস্তায় বন্ধ দোকানের শাটারে কালো কালিতে লেখা: ‘নো সিএএ, নো এনআরসি’। জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের হলুদ

রঙের দেয়াল, রাস্তার মধ্যে মেট্রো লাইনের স্তম্ভের গায়েও একই স্লোগান। জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের নীচের রাস্তায় ধর্না শুরুর পরেই বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র তিন দিনের মধ্যে রাস্তা খালি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। বুধবার পুলিশ-আধাসেনা জাফরাবাদের রাস্তা খালি করার পরে কপিল ঘোষণা করেন, ‘আর কোনও শাহিন বাগ হবে না।’

একই কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে জাফরাবাদ, মৌজপুর, ভজনপুরা, মুস্তফাবাদ, ব্রিজপুরী, গোকুলপুরীতে। গোকুলপুরীর ছাই হয়ে যাওয়া টায়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী ইউসুফ হারুন বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে ওরা একের পর এক দোকানে আগুন লাগিয়েছে। আর বলেছে, গোটা দিল্লিটাকে শাহিন বাগ করতে দেব না।’ ব্যবসাদার জামিল সিদ্দিকির কথায়, ‘ওরা বলছিল, তোরা গোটা দেশে সিএএ-এনআরসি নিয়ে অশান্তি পাকাচ্ছিস। গুজরাতের মতো আর একটা দাওয়াই না-দিলে চলবে না।’

বধ্যভূমি উত্তর-পূর্ব দিল্লির এ-সব আলাদা ঘটনার একটাই যেন যোগসূত্র— সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-আন্দোলনের মুখ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা। দিল্লির উদাহরণ দেখিয়ে শাহিন বাগের মতো আন্দোলন আর কোথাও দানা বাঁধার আগেই শেষ করে দেয়া।

দিল্লির ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডিজ় অব ডেভেলপিং সোসাইটিজ়’-এর অধ্যাপক হিলাল আহমেদের মন্তব্য, ‘বার্তা স্পষ্ট। রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নিয়ে মত প্রকাশের অধিকার নেই। বিশেষত আপনি যদি গরিব, চাষি, মহিলা, দলিত, আদিবাসী বা মুসলিম হন।’

তা অবশ্য মানতে চান না শিব বিহারের প্রবীণ বাসিন্দা নারায়ণ শর্মা। পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘জাফরাবাদের রাস্তায় দেখেছেন সব দোকানের গায়ে নো সিএএ, নো এনআরসি লেখা? একটা দোকানের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তা হলে কারা হামলা চালিয়েছে? কাদের প্রাণ বাঁচাতে পাল্টা মার দিতে হয়েছে?’

২০১১-র জনগণনা বলছে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির প্রায় ২২.৪ লক্ষ মানুষের ৬৮.২ শতাংশ হিন্দু। যেখানে দুই সম্প্রদায় মিলেমিশে বাস করছিল, সেখানেই সংঘর্ষ হয়েছে। নারায়ণ বলছেন, ‘মুসলিমরা এ বার নিজেদের মহল্লার মধ্যেই থাকবে। ভাইচারা শব্দটাই শিকেয় উঠে গেল। ভেদাভেদ এখন আরও স্পষ্ট।’
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status