দেশ বিদেশ

দাম বেড়েছে চাল-চিনির

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে আবারও বেড়েছে চাল ও চিনির দাম। সাধারণ মানুষের খাবার বিভিন্ন জাতের মোটা চাল সপ্তাহ খানেক আগেও ৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দেড় থেকে দু’শো টাকা। অন্যদিকে, বাজারে প্রতি কেজি চিনি দুই থেকে তিন টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হয়। রাজধানীর কাওরানবাজার, নয়াবাজার ও সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ও বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। চালের বাজারের এ অস্থিরতা রোধে বাজার নিয়ন্ত্রণে মিল মালিকদের ওপর নজরদারিতে গুরুত্ব আরোপ করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, নিত্যপ্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতি বছর এসময় বিশেষ করে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ধানের সরবরাহ কম থাকে। তাই সব ধরনের চালের দাম বেড়ে যায়। আবার এপ্রিলে যখন নতুন ধান আসে তখন আগের দামে ফিরে আসে। তবে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেছনে কোনো কারণ থাকলে সেটা মিল মালিকরাই বলতে পারবেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত মাস থেকে বাড়তি দরে সব ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে। আমন মৌসুমের চাল বাজারে আসতে শুরু করলেও কমার কোনো লক্ষণ নেই। খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৫৫ টাকায়। আর সর্বোচ্চ উঠেছে ৬০ টাকা পর্যন্ত। গত মাসে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫২ টাকায় পাওয়া যেতো এ চাল। এছাড়া আরেক পদের সরু চাল নাজিরশাইলের দাম ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় উঠেছে। বৃহস্পতিবার বাজারগুলোতে মোটা চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণ চাল বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা। নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫৫-৬০ টাকা এবং প্রতি কেজি পাইজাম চাল বিক্রি হয় ৪৫-৫০ টাকায়।

এদিকে, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে ৫০ টাকা, যা গত মাসে বিক্রি হয়েছিল ৪৫ টাকা, আর গত সপ্তাহে ৪৮ টাকা। নাজিরশাইল ৪৭ থেকে ৫১ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪৭ থেকে ৪৯ টাকা। গত সপ্তাহে ২৮ চাল প্রতিকেজি ৩২ থেকে ৩৪ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বেড়ে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইজাম ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা স্বর্ণা প্রতিকেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানায়, বাজারে মিনিকেট চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মিনিকেট চালের দাম প্রতি কেজি ৫৪ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৫০ টাকায়। এটি গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ২টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে, এক মাস ধরে স্বর্ণা চাল কেজিতে ৩.০৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ১০.২০ শতাংশ বেশি দরে। আর পাইজাম চাল কেজিতে ৪.৫৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, মিলগেইটে গত দুই সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৯ টাকা, যা আগেছিল ৪৭ টাকা। নাজিরশাইল প্রতিকেজি ৪৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা। ২৮ প্রতিকেজি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইজাম প্রতি কেজি ২৮ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা প্রতি কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চালের কোনো সংকট নেই। তারপরও মিলাররা সব ধরনের চাল বাড়তি দরে বিক্রি করছেন। যে কারণে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে না। বাবুবাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা ও সরকার ট্রেডিং এজেন্সির মালিক ইব্রাহিম জানান, গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম।

বাবুবাজারের পাইকারি আড়তদার দয়াল ভাণ্ডারের ম্যানেজার সাঈদ আহমেদ বলেন, এখন ধানের মৌসুম শেষ তাই মিলাররা কারসাজি শুরু করেছে। তারা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কাছে চালের অর্ডার দিলে তারা বাড়তি রেট আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে। তাই সে দামেই আমাদের আনতে হচ্ছে। বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দরে। অপরদিকে বাজারে এক কেজি চিনি ৬৫-৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬২-৬৫ টাকা। টিসিবির হিসাবে, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এর আগে বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। নয়াবাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন বলেন, বাজারে চিনির সরবরাহ কমে গেছে। মিলগেটে চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যে কারণে পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে; যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।

বেসরকারি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে জীবনযাপন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার বাজেট থাকছে না। সরকারি নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতার জন্য ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। উল্লেখ্য, রপ্তানির অনুমোদন দেয়ার পর চালের দাম এক দফা বেড়েছিলো। গত ৩১শে জানুয়ারি চালের রপ্তানি মূল্যের ওপরে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পর দাম ফের বাড়তে শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাল রপ্তানির ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়। এ কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আপাতত রপ্তানির অনুমোদন দেয়া থেকে বিরত রয়েছে। কিন্তু তারপরও দাম বৃদ্ধি থেমে নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status