বাংলারজমিন

কামারখন্দে দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৭:৩১ পূর্বাহ্ন

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে উপজেলায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প এবং দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের সভাপতিরাই জানেন না কিভাবে প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। এ অবস্থায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেয়া নতুন প্রকল্পের ২৯টি ঘরের কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, কাজ অসমাপ্ত রেখেই ভুমিহীনদের মাঝে গুচ্ছগ্রামের ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। যে কারনে ভূমিহীন পরিবারগুলোকে নিজেদের অর্থায়নে মাটি ভরাট সহ অন্যান্য কাজ করে নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরগুলো ধসে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা। কাজের তদারকির দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার থাকলেও বিধি ভেঙ্গে নিজেই ঠিকাদারের ভূমিকায় কাজগুলো সম্পন্ন করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় ১৯টি দুর্যোগ সহনীয় ঘর ও দুটি গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয় উপজেলা প্রশাসন। প্রকল্পগুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রকল্পের তদারকি করা হবে জানিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দের টাকার চেক অগ্রিম স্বাক্ষর করে উপজেলায় জমা নেয়া হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব নিজ নিজ প্রকল্পের সভাপতির। সভাপতি হয়েও কাজ করার সুযোগ না থাকায় নতুন কোনো প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে রাজি হচ্ছে না জনপ্রতিনিধিরা। যে কারণে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নতুন প্রকল্পের ২৯টি ঘরের কাজ এখনো শুরু করতে পারছে না উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-সহকারী সাইদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশেই প্রকল্পের বরাদ্দের চেক স্বাক্ষর করে জনপ্রতিনিধিরা জমা দিয়েছেন। পরে নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ মতো তা খরচ করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী নাসির শেখ জানান, প্রকল্পের প্রায় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এখনও ইউএনও স্যারের কাছে জমা আছে। যে কারণে ৬ মাস অতিবাহিত হলেও বাকিতে কেনা ইটের দাম, রাজমিস্ত্রী ও রং মিস্ত্রির মজুরিসহ বিভিন্ন কিছুর মূল্য এখনও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রেখেই গত ৬ই ফেব্রুয়ারি চৌবাড়ি গুচ্ছগ্রাম-২ প্রকল্পের নির্মিত ১০টি ঘরের উদ্বোধন ও ভুমিহীনদের মাঝে চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘরগুলো বালুর ওপর কোনমতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘরের ভিতর  আসবাবপত্র রাখার মত কোন পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করেছেন ঘরপ্রাপ্ত ভুমিহীনরা। আর গুচ্ছগ্রাম-১ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এখনও শুরু হয়নি। চৌবাড়ি গুচ্ছগ্রাম-২ প্রকল্পের সভাপতি ও রায় দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান জানান, আমি এই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের নামমাত্র সভাপতি। কাজের বিষয়ে আমার কোন মতামত নেয়া হয়নি। কিন্ত ইউএনও’র নির্দেশে বরাদ্দ টাকার চেক অগ্রিম স্বাক্ষর করে উপজেলায় জমা দিতে হয়েছে।
কামারখন্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, প্রকল্পের যাচাই বাছাইয়ে এসিল্যান্ডকে দায়িত্ব দিয়েছেন ইউএনও। আমি এই অফিসে জয়েন্ট করার পর ইউএনও স্যারকে বলেছিলাম প্রকল্পগুলো কিভাবে শেষ করবো। তখন ইউএনও স্যার বলেছিলেন এ বিষয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আয়েশা সিদ্দিকা আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই সুবিধাভোগী নির্বাচনসহ প্রকল্পের কাজ করেন। যে কারনে জনপ্রতিনিধিরা নতুন কোন প্রকল্পের সভাপতি হতে চাচ্ছেন না। তাই গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৯টি ঘর নির্মানে নতুন প্রকল্পের বরাদ্দ পেলেও তা এখনো  শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে  বলেন, উদ্বোধন করা গুচ্ছ গ্রাম বসবাসের জন্য উপযোগী না হলেও বাসিন্দারা এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ইউএনও বলেন, বারবার প্রকল্প কর্মকর্তাকে তালিকা দেয়ার কথা বলেছি কিন্তু সে দেয়নি, এছাড়া সে নিয়মিত অফিসও করেন না। যে কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝামেলা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status