বিশ্বজমিন

আনোয়ার ইব্রাহিম কি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন!

মানবজমিন ডেস্ক

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ১:০৭ পূর্বাহ্ন

মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী পদে ড. মাহাথির মোহাম্মদই থাকবেন! নাকি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি ক্ষমতা তুলে দেবেন পিকেআর দলের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার ইব্রাহিমের হাতে। কিন্তু পাকাতান হারাপানের প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল নেতৃত্ব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আনোয়ার ইব্রাহিমকে চায় না। তারা চায় পার্তি প্রিভুমি বারসাতু মালয়েশিয়ার চেয়ারম্যান ড. মাহাথির মোহাম্মদই ক্ষমতায় থাকুন এবং মেয়াদ পূর্ণ করুন। যদি তা-ই হয় তাহলে, আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেতে পারে। শনিবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ড. মাহাথির মোহাম্মদ। ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে কখন সরে যাবেন এবং আনোয়ার ইব্রাহিমকে সুযোগ করে দেবেন- এ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, বিষয়টা এখন আমার ওপর নির্ভর করে। ফলে সংবাদ সম্মেলন থেকে যখন সবাই চলে যান তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী ও আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী ড. উয়ান আজিজাহ উয়ান ইসমাইল। এ সময় তিনি তার স্বামী আনোয়ার ইব্রাহিমের হাত স্পর্শ করে যেন শান্তনা দিচ্ছিলেন। যেন ভেঙে পড়ার মুহূর্তে তার স্ত্রী তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এ নিয়ে মালয়েশিয়ার অনলাইন দ্য স্টার একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

তাতে বলা হয়েছে, নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে পাকাতান হারাপান প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রশমিত ও আশ্বস্ত করে সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার বিষয়ে বল এখন পিকেআর প্রেসিডেন্ট আনোয়ার ইব্রাহিমের কোটে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউনিভার্সিটি সেইনস মালয়েশিয়ার প্রফেসর ড. সিভামুরুগান পান্ডিয়ান বলেছেন, শুক্রবার রাতে যে বৈঠক হয়েছে তাতে নির্ধারণ করার কথা ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী মাহাথির কবে কোন তারিখে ক্ষমতা হস্তান্তর করছেন আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে। কিন্তু তা ঘটেনি। ঘটেছে অন্য ঘটনা। তিনি আরো বলেন, ওই বৈঠকে উপস্থিতরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের প্রতিই সমর্থন দিয়েছেন। তারা চাইছেন তিনিই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থেকে মেয়াদ পূর্ণ করুন। কিন্তু যারা আশা করছিলেন এ বছর যত তাড়াতাড়ি হোক, মে মাস নাগাদ দেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হোন আনোয়ার ইব্রাহিম, তাদের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া কঠিন। তারা হয়তো আবেগ দিয়ে এর প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করবেন। যদি আনোয়ার ইব্রাহিম শুক্রবারের সিদ্ধান্ত মানতে তাদেরকে আয়ত্তে আনতে না পারেন তাহলে রাজনৈতিক দৃশ্যপটের অবনতি ঘটবে। তার মতে, নয় মাসের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যদি জোট সরকারের মধ্যে আভ্যন্তরীণ লড়াই ছাড়াও হুমকি, আস্থায় সঙ্কট অব্যাহত থাকে তাহলে তা ক্ষমতা হস্তান্তরের চেয়ে বড় কিছু হয়ে উঠবে।  

প্রফেসর ড. সিভামুরুগান পান্ডিয়ানের মতে, যদি পাকাতান জোটের মধ্যে আভ্যন্তরীন লড়াই অব্যাহত থাকে এবং জোটের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি বিস্তৃত হয় তাহলে ক্ষমতাসীন সরকার ভেঙে পড়তে পারে। উদাহরণ হিসেবে যদি পার্তি প্রিভূমি বারসাতু মালয়েশিয়া জোট ছেড়ে যায়, একই কাজ করে পিকেআরের ভিতরকার অংশ, তাহলে পাকাতানের সমাপ্তি ঘটবে। এ জন্যই সম্ভবত শুক্রবার রাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুনির্দিষ্ট তারিখের জন্য আনোয়ার ইব্রাহিম চাপ দেননি। প্রফেসর ড. সিভামুরুগান পান্ডিয়ান বলেন, এ অবস্থায় আনোয়ার ইব্রাহিমের উচিত হবে শুক্রবারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে তার সমর্থকদের রাজি করানো। কারণ, তিনি বর্তমানে ক্ষমতাসীন একজন প্রধানমন্ত্রীকে মোকাবিলা করছেন। আর এই প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা উপভোগ করছেন।

আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. নিক আহমেদ কামাল নিক মাহমুদ বলেছেন, শুক্রবারের সিদ্ধান্ত দেশে ক্ষমতা হস্তন্তরের বিষয়ে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করতে পারে। জনগণ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা (অ্যাপেক) পরবর্তী দৃশ্যপটের দিকে তাকিয়ে থাকবে। ড. মাহাথির যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে উত্তর পাওয়ার চেয়ে প্রশ্ন বেশি সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, তার বিবৃতিতে কবে তিনি পদত্যাগ করছেন সে বিষয়ে কোন নির্দিষ্টতা নেই। এই অনির্দিষ্টতা সরকারের জন্য ভাল নয়, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন জোটের জন্য। ক্ষমতা হাতবদলের তারিখকে কেন্দ্র করে দেখা দিতে পারে অসন্তোষ। এতে জোটের ভিতর আরো ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। এতে আনোয়ার ইব্রাহিমের অনেক সমর্থন সন্তুষ্ট হতে পারেন। আবার অনেকে সতর্ক থাকতে পারেন পরিস্থিতিতে। কিন্তু সরকারের স্থিতিশীলতাকে সবার আগে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত আনোয়ারের। পিকেআর এবং পাকাতান জোট বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে- এটা নিশ্চিত করতে তাকে কঠোর কাজ করতে হবে।

তবে এর বাইরে গিয়ে যদি তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসেন মাহাথির মোহাম্মদকে, তাহলে সেক্ষেত্রে পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষে তার সমর্থন একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষকে বলা হয় দেওয়ান রাকায়েত। এতে আছেন ২২২ জন এমপি। সেখানে নিজের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে কমপক্ষে ১১২ জন এমপির সমর্থন পেতে হবে। কিন্তু সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে মাহাথির মোহাম্মদের। ফলে আনোয়ার ইব্রাহিম এভাবেও অগ্রসর হতে পারবেন না। ফলে শুক্রবার রাতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাই মেনে নেয়া উচিত তার- এমনটা মন্তব্য করেছেন কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তার মধ্যে রয়েছেন ইউনিভার্সিটি উতারা মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লেকচারার ড. কামরুল জামান ইউসুফ। শুক্রবারের ওই সিদ্ধান্তকেই প্রত্যাশা করেছিলেন। তিনি বলেন, পাকাতান প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা প্রধানমন্ত্রী হতে চাওয়া আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য একটি সুস্পষ্ট পরাজয়। আনোয়ার ইব্রাহিম অতিমাত্রায় আস্থাশীল ছিলেন যে, আধা ঘন্টার মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শুক্রবারের বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে বলে জানিয়েছেন এতে উপস্থিত বারসাতুর এক নেতা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status