ভারত

পশ্চিমবঙ্গে মাতৃভাষা দিবস সাড়ম্বরে পালিত

কলকাতা প্রতিনিধি

২০২০-০২-২২

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের সাথেই অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া ত্রিপুরা, আসাম, ছত্তিশগড় ও ঝাড়খন্ডের বাঙালিরাও দিনটিকে গুরুত্ব সহকারে স্মরণ করেছেন। বহু জায়গাতেই ঢাকার শহীদ মিনারের অনুকরণে অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারির আগের রাত থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়েছে। সারারাত চলেছে সেই সব অনুষ্ঠান। শুক্রবার প্রভাত ফেরি সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভাষা নিয়ে আলোচনা সভা হয়েছে। এবারের একুশে উদযাপনের মঞ্চ থেকে ঐক্যের বার্তা ধ্বনিত হয়েছে। ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি টুইটে লিখেছেন, আজ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি। বাংলাজুড়ে পালিত হচ্ছে ভাষা শহিদ দিবস। এই ঐতিহাসিক দিনে বাংলা ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। সকলকে জানাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা। আমাদের মাতৃভাষা সহ আমরা সব ভাষাকেই ভালোবাসি। পরে তিনি একুশের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেছেন, ভাষা শহীদ দিবসে আমাদের শপথ হোক, ঐক্যবদ্ধ ভারত চাই, ঐক্যবদ্ধ চাই বাংলা, ঐক্যবদ্ধ হয়েই লড়াই করবো।

এদিন শহীদ বরকতের জন্মভূমি মুর্শিদাবাদের সালার থানার বাবলা গ্রামে শুরু হয়েছে বরকত মেলা। এদিন বরকতের আবক্ষমূর্তিতে মাল্যদান করেছেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বাবলা গ্রামের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কলকাতায় ভাষা ও চেতনা সমিতির উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবছরও বৃহষ্পতিবার মধ্যরাতে মশাল মিছিলের মাধ্যমে সূচনা হয়েছে মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশ ও আসামের শিল্পীরা সারারাত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। বাংলা ও বাঙালি নিয়ে আলোচনা সভায় বক্তারা বক্তব্য রেখেছেন । সকালে একটি প্রভাত ফেরিও বের হয়। ধর্মতলার কার্জন পার্কের শহীদ বেদীতেও রাজ্যের বিশিষ্ট মানুষের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন। নবগঠিত একুশে ফেব্রুযারি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠান। বিভাজনের বিরুদ্ধে ভাষা মৈত্রীর এই অনুষ্ঠানে ঐক্যের বার্তা দেওয়া হয়েছে। এদিন সকালে কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের উদ্যোগেও দিনটি মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়েছে। সকালের প্রভাতফেরির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সুচনা করেছেন উপ হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। হাইকমিশন প্রাঙ্গণের শহীদ বেদীতে উপদূতাবাসের কর্মকর্তাসহ উপস্থিত বিশিষ্ট মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। পরে বিকেলে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন দুই বাংলার শিল্পী ও বিশিষ্টরা। কলকাতায় বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের উল্টোদিকের শহীদ বেদিতে কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে দিনটি পালিত হয়েছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম সহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

তবে রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে মূল অনুষ্ঠানটি হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে। সেখানে এদিন সন্ধ্যায় ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বিশিষ্ট লেখক ও শিল্পীরাও উপস্থিত ছিলেন। এদিন সকালে  বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে দুই বাংলার শিল্পী ও বিশিষ্ট মানুষজনের উপস্থিতিতিতে দিনটি পালিত হয়েছে। তবে এ বছর সীমান্তের দু’পাড়ে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান হয়েছে নিরাপত্তার কারণে। দুটি অনুষ্ঠানেই দুই বাংলার বিশাল সংখ্যক প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের আবেগের কথা মাথায় রেখে দুই দেশের মন্ত্রীরা সীমানা প্রাচীর তুলে দিয়ে দুই বাংলার মিলনের কথা বলেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বেনাপোলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে পেট্রাপোলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, যশোরের সাংসদ শেখ আফিলউদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু সহ অনেকে। শান্তিনিকেতনের  বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও ভাষা দিবস পালিত হয়েছে। সেখানে পাঠরত বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা দিনটি উদযাপনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। বিকেলে বাংলাদেশ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কলকাতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও দিনটি পালিত হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status