দেশ বিদেশ

ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়মিতভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু

স্টাফ রিপোর্টার

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট (প্রতিস্থাপন) শুরু হয়েছে। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল কুমিল্লার ৫২ বছর বয়সী জাহানারা খাতুনের দেহে সফলভাবে এই লিভার প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করেন। জাহানারা খাতুনকে লিভারের একটি অংশ দান করেন তার ছেলে এডভোকেট শরিফুল ইসলাম। বর্তমানে লিভারদাতা ও গ্রহীতা দুজনই সুস্থ আছেন। গতকাল ডায়াবেটিক সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, কুমিল্লার জাহানারা খাতুনের দেহে সফলভাবে লিভার প্রতিস্থাপন অপারেশনে ১১ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। দুটি অটিতে দু’জনের অপারেশনের কাজ করতে হয়েছে তাদের। এটি একটি বিরল ঘটনা যে সন্তান মাকে লিভার দিয়েছেন। সচরাচর দেখা যায় মা সন্তানকে অর্গান দিয়ে থাকেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লিভারদাতার লিভার পূর্ণ হতে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে। বিশ্বে লিভার প্রতিস্থাপনের পর রোগী বেঁচে থাকার হার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক বছর বাঁচেন তার হার ৯৫ শতাংশ, ৫ বছর বাঁচেন ৮০ শতাংশ এবং ১৫ বছর বাঁচেন ৭০ শতাংশের মতো। লিভার প্রতিস্থাপন ব্যয়বহুল তুলে ধরে তিনি বলেন, এই প্রতিস্থাপনটি করতে তাদরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এটি করতে কোনো পারিশ্রমিক নেয়া হয়নি। লিভার ট্রান্সপ্লান্ট নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। লিভারদাতা পাওয়া কঠিন। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পারলে এই কঠিন আর কঠিন থাকবে না। অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জানান, অনেক রোগী আছেন যারা টাকার অভাবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারেন না। তাদের জন্য ইব্রাহিম লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। যারা পারবেন না তাদের জন্য এই ফান্ড থেকে ভর্তুকি দিয়ে  চিকিৎসা চালানো হবে। তিনি বলেন, ২০১০ সালের ৩রা জুন প্রথম এবং ২০১১ সালের ৬ই আগস্ট দ্বিতীয় সফল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হলেও তা বিভিন্ন কারণে নিয়মিত করা যায়নি। এখন থেকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়মিত লিভার প্রতিস্থাপনের সকল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে দুটি করে লিভার প্রতিস্থাপনের চিন্তা রয়েছে তাদের। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, দেশে ৪ থেকে ৫ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস-বি এবং ১ শতাংশ লোক হেপাটাইটিস-সিতে ভুগছেন। এক কোটি লোকের লিভারের রোগ রয়েছে। দুই থেকে আড়াই কোটি লোক লিভার প্রতিস্থাপনের দিকে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ্যাটর্নি জেনারেল এডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, দেশের অনেক সফলতার মধ্যে চিকিৎসকদের অর্জন সবচেয়ে বেশি। আইনজীবী যে বন্ধু তার লিভার দিয়েছেন তাকে সংবর্ধনা দেয়ার ঘোষণা দেন এ্যাটর্নি জেনারেল। দেশে এখন সফলভাবে কিডনি, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হচ্ছে। তিনি দেশপ্রেমিক বিত্তশালীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, দেশের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের প্রতি আস্থা রাখুন। চিকিৎসায় দেশমুখী হন। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, তাদের এখন ডেডিকেটেড একটি অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হবে। তবে এখন মাসে দু’টি করে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার চিন্তা রয়েছে তাদের। ভয়-ভীতি দূর করে ডোনাররা এগিয়ে আসলেই এটা করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। সংগঠনের মহাসচিব মো. সাইফ উদ্দিন বলেন, এই সেবা চলতে থাকবে। ব্যয় বহুল হলেও টাকার অভাবে ভালো কাজ আটকে থাকে না। ফান্ডে সমাজের দানশীলারা টাকা প্রদান করতে পারেন। তিনি জানান, ভারতে এই লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে রোগীর এক কোটি টাকা খরচ হবে। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিইও অধ্যাপক এম এ রশীদ জানান, এই লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ২০১০ সালে প্রথম ট্রান্সপ্লান্টে ৪৫ লাখ টাকা, দ্বিতীয় ট্রান্সপ্লান্টে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। তিনি আরো জানান, ইব্রাহিম লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ফান্ডে সরকার দিয়েছে ১০ কোটি টাকা, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড দিয়েছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ১৫ কোটি টাকা এবং অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক জাফর আহমেদ লতিফ,  অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের চিকিৎসক দলের সদস্যরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাডাসের প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ফরিদ কবির।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status