প্রথম পাতা

করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে

সংসদ রিপোর্টার

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চীনে করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সমস্যার কারণে যে সমস্যা হচ্ছে তা সমাধানে বিকল্প পথ খোঁজা হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। গতকাল সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষকে সামনে রেখে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, কারোর প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে চলি না বা প্রতিশোধ নিতেও যাইনি। যেখানে অন্যায় হয়েছে, সেখানে ন্যায় করার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গী-সন্ত্রাস ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে দেশবাসীকে এদের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদী-মাদক ও ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি, কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, নানা ষড়যন্ত্রসহ বৈরী অবস্থা মোকাবেলা করেই আমরা দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশের এই অগ্রযাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতাও কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শেষে প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনা প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আলোচনার শেষ দিনে আরও বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু ও চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের মধ্যে দিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেছেন। উন্নয়নের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। প্রত্যেক এমপিরা এই ভাষণ ভালভাবে পড়লে দেশের জন্য আমরা যে উন্নয়ন করেছি তা জানতে পারবেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটা সর্বজন স্বীকৃত। আগে মানুষের জীবনে কোন নিরাপদ ছিল না, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-শিক্ষাঙ্গণে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। আগে বাংলাদেশকে অনেকে করুণার চোখে দেখতো, কিন্তু এক দশকে বাংলাদেশের সেই অবস্থান পরিবর্তন করতে পেরেছি। কারণ আমরা বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এতো উন্নয়ন যদি কেউ না দেখে, সেটা তাদের দেখার ভুল। আমরা তৃণমুল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন করেছি। যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। বিরোধী দল উপস্থিত থেকে সংসদকে প্রাণবন্ত করে রাখায় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে কিছু সমস্যা দেখা যায়, আমরা দ্রুত সমাধান করছি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি। এয়ারপোর্টসহ সব জায়গায় বিদেশ থেকে আগতদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। যেন কেউ করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশে আসতে না পারে। ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে দেশবাসীকে নিজেদের বাড়ি-ঘর পরিস্কার করার অনুরোধ করবো।

নিজেরা ঘর-বাড়ি পরিস্কার করতে পারলে মশা উৎপাদন হবে না। ধর্ষকরা পশুরও অধম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শিশু-কিশোরীদের ধর্ষণ করে তারা মানুষ নামে পশু, এরা পশুরও অধম। তাদেরও তো মা-বোন-মেয়ে আছে। এমন জঘন্য চরিত্রের মানুষ কীভাবে হতে পারে? জঙ্গীবাদ-মাদক-ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশবাসীও যেন এদের ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। রমজান আসলেই অনেকে অনেক খেলার চেষ্টা করে। কেউ যেন গুজবে আতঙ্কে না পড়েন। আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি। চীনে সৃষ্ট সমস্যার কারণে বিকল্প পথ খুঁজছি, তাই আতঙ্কের কিছু নেই। সংসদ নেতা বলেন, দেশে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়নের ওপরে রয়েছে, দেশের অর্থনীতিও অনেক শক্তিশালী। ব্যাংকে টাকার কোন সমস্যা নেই। প্রণোদনা দিচ্ছি বলেই ১৮ বিলিয়ন রেমিটেন্স এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। টাকা যদি নাই থাকতো তবে এতো উন্নয়ন হচ্ছে কীভাবে? ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাও দেশের জন্য একটা বড় অর্জন। বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু ক্ষেত্রে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ভাষণ যদি উনি ভাল করে পড়েন, তবে হতাশ না হয়ে উজ্জীবিত হবেন। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, তথ্যপ্রযুক্তি বিদেশে রফতানিও শুরু করেছি। কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছি। কর্মসংস্থানের জন্য স্বপ্রণোদিত কর্মদ্যোক্তায় পরিণত করতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। বিদেশে অনেকে বিপুল টাকা খরচ করে বিদেশে যায়, কিন্তু চাকুরির গ্যারান্টি নেই। যারা ভুল পথে যায়, দালালের খপ্পরে পড়ে তারাই বিপদে পড়ে। এতো টাকা খরচ করে বিদেশে না গিয়ে দেশেই বিনিয়োগ করে একেকজন কর্মদ্যোক্তায় পরিণত হতে পারে।

বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা আওয়ামী লীগকে নির্যাতন করেছে। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে ’৮৮ সালে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। অগ্নিসন্ত্রাস করে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। এসব বৈরী অবস্থা মোকাবিলা করে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এটা শুধু আমরা বলছি না, বিশ্বের বড় বড় গবেষকরাও তা স্বীকার করছে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য জায়গা। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ থেকে অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়ে রয়েছি। জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করবো। জাতির পিতার নাম এক সময় ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল, ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। বিশ্ব দরবারে মানুষ মাথা উচুঁ করে চলবে। দেশের মানুষকে একটু সুন্দর জীবন দিতে সারাটা জীবন কষ্ট করে গেছেন জাতির পিতা। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার না করে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

খালেদা জিয়া ভোটচুরি করে বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক-রশীদকে সংসদে বসিয়েছেন, বিরোধী দলের নেতা পর্যন্ত বানিয়েছেন। জেনারেল এরশাদও ফ্রিডম পার্টি গঠন করে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনিকে রাষ্ট্রপতির প্রার্থী করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কী কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে তা আমি জানি। সব ব্যাথা বুখে চেপে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। একটাই কারণ, আমার বাবা জাতির পিতা দেশের মানুষের জন্য সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সমস্ত জীবনটা বিলিয়ে দিয়েছেন। তাই আমি নিজের সুখের কথা চিন্তা না করে দেশের মানুষ যেন ভাল থাকে, তারা যেন সুখের মুখ দেখে। দেশটা যেন এগিয়ে যায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমি কারোর প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে চলতে চাই না। কারোর প্রতি প্রতিহিংসাও চরিতার্থ করতে চাই না। শুধু চাই দেশের মানুষ যেন সুন্দর জীবন পায়, বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাব।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status