দেশ বিদেশ

ডিকাব টকে চীনা দূত লি

রোহিঙ্গা সঙ্কটে দূতিয়ালি অব্যাহত রাখার প্রত্যয়

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন

করোনায় বিপর্যস্ত চীন রোহিঙ্গা সঙ্কটে দূতিয়ালি অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন। দু’বছর ধরে বেইজিং রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্বিপক্ষীয় সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে, কিন্তু এখনও দৃশ্যমান কোন সফলতা আসেনি। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গতকাল কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিকাবের ফ্লাগশিপ প্রোগ্রাম ডিকাব টক-এ অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তাদের এই মুহুর্তের সবচেয়ে বড় সঙ্কট করোনা ভাইরাস নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু বিস্তৃত ওই আলোচনায় করোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসা রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন আসে ঘুরে ফিরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, বাংলাদেশে বিভিন্ন মেঘা প্রকল্প পেতে চীন এবং অন্যান্য দেশের আকাঙ্খা বা প্রতিযোগিতা, উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশির অবস্থা সর্বপরি উহান-ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ এবং আতঙ্ক নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন রাষ্ট্রদূত। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বর্মী গণহত্যা বিষয়ে গাম্বিয়ার মামলায় আন্তর্জাতিক আদারতের আদেশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট এখন আদালতের বিষয় হয়ে গেছে। এটা ভাল যে আমরা এখানে এ নিয়ে কথা না বলে বিচারকদের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষা করি। অন্তবর্তী রায় নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার সূযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি ফলে এ নিয়ে সেখানে চীন আর কোনো ভেটোও দেবে না। রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ চায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরে যাওয়া নিশ্চিত হোক এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনায় পুরো বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান আসুক। এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় যেভাবে সহযোগিতা করছে, চীনও বিষয়টির সঙ্গে সেখাবেই যুক্ত রয়েছে। ডিকাব সভাপতি আঙ্‌গুর নাহার মন্টির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। রাষ্ট্রদূত অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জাপান মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে। সুতরাং বাংলাদেশে আরেকটি বন্দর তৈরির প্রয়োজন নেই। চীন সোনাদীয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির কাজটি পেতে বহু বছর চেষ্টা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আমরা সমুদ্রবন্দর নয়, বরং চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল নির্মাণে যুক্ত হওয়ায় বেশি আগ্রহী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রশ্নে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এটা চীনের বেল্ড অ্যান্ড রোর্ড ইনিশিয়েটিভের মত কোনো ইকোনোমিক উদ্যোগ নয়। বরং এটি অনেকটা মিলিটারি জোট হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা করে চীন যে ধারণা পেয়েছে তা হলো- যদি এটি ইকোনোমিক হয়, তবেই কেবল বাংলাদেশ যোগদান করবে, মিলিটারি জোট হলে যোগ দেবে না। করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, এ নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়া বিশেষ করে আমেরিকা নানারকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বাস্তবতা হলো চীন শুরু থেকেই এটি নিয়ন্ত্রণে তৎপর রয়েছে। এ বিষয়ে চীনের পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে। রাষ্ট্রদূত লি বলেন, ভাইরাসটা উহান থেকে ছড়িয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এটার উৎপত্তি আসলে কোথায় সে ব্যাপারে এখনও সাইন্টিফিক কোন ব্যাখ্যা নেই কারও কাছেই। এটি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে, গবেষণা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। চীনের এই কঠিন সময়ে প্রকৃত বন্ধু হিসাবে বাংলাদেশ যে পাশে রয়েছে তার জন্য সরকার এবং জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্ট্রদূত লি। উহান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। চীনের অনুমতির কোন বিষয় নেই। বাংলাদেশের বিমান সেখানে যেতে চায় না, কারণ  উহানে গেছে বিমান অন্যদেশে যেতে পারবে না। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ছে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে হুবেই বিশেষত উহানের কলকারখানা বন্ধ রয়েছে। অন্য প্রদেশে কারখানার কার্যক্রম স্বাভাবিক।
চীন থেকে বাংলাদেশের শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, কঠিন সময়ে প্রকৃত বন্ধুরা পাশে থাকে। দয়া করে আপনারা অন্য কোথাও বাজার খুঁজতে যাবেন না।

করোনার কারণে চীনের বিকল্প না খোঁজার অনুরোধ রাষ্ট্রদূতের: বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আরও বলেন, পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের (চীনের বিকল্প) পদক্ষেপ ব্যয়বহুল, অসম্ভব ও অপ্রয়োজনীয়। সারা বিশ্ব এখন এক অভিন্ন শত্রুকে (ভাইরাস) মোকাবিলা করছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি একটি বৈশ্বিক আতঙ্ক বা সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর জন্য কি চীনকে দায়ী করা যায়? মোটেই না। রাষ্ট্রদূত লি  বলেন, রোগটির বিস্তার চীনের উহানে, এটা সত্যি। কিন্তু এই রোগের উৎস যে চীনে সেটা তো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। তারপরও পশ্চিমা গণমাধ্যম এই রোগকে মেড ইন চায়না বলা ছাড়াও নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তে বাংলাদেশকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ৫০০টি স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপকরণ (কিট) দিচ্ছে চীন। আগামীকাল মঙ্গলবার কিটগুলো বাংলাদেশে পৌঁছাবে। চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭০ জন মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত রোগীর মোট সংখ্যা ৭০ হাজার ৫৪৮। চীনের বাইরে অন্তত ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। এসব দেশে ছয় শতাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে। ফিলিপাইন, হংকং, তাইওয়ান, জাপান ও ফ্রান্সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজন মারা গেছেন।
করোনায় বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প ব্যাহত হতে পারে: ওদিকে চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে যেসব মেগা প্রকল্প হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের কারণে সেগুলোর কয়েকটির কাজ খানিকটা ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি জানান, এখানকার বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় আট হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন। এর মধ্যে হাজার খানেক ছুটিতে গিয়ে চীনে আটকা পড়েছেন।  এখানে সংখ্যা ফ্যাক্টর নয়, তারা যারা আটকা পড়েছেন তারা প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত ছিলেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত। চীনে বর্তমানে কী পরিমাণ বাংলাদেশি রয়েছে, জানতে চাইলে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমার জানা মতে, শুধুমাত্র কুনমিংয়ে ২০ হাজারের মতো বাংলাদেশি আছেন। এছাড়া বেইজিংসহ অন্যান্য জায়গায়ও আরও বাংলাদেশি রয়েছেন। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান তার কাছে নেই বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status