এক্সক্লুসিভ

কেবল খোদাই জানেন কাশ্মীরে কী হচ্ছে: র’এর সাবেক প্রধান

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৭:৫২ পূর্বাহ্ন

ভারতের বহিঃগোয়েন্দা সংস্থা র’এর সাবেক প্রধান অমরজিৎ সিং দুলাতের মতো ভারতে খুব অল্প সংখ্যক লোকই আছেন যারা কাশ্মীরকে এতটা বোঝেন ও জানেন। অথচ, সেই দুলাতও এখন হাল ছেড়ে দিয়ে বলছেন, ‘কাশ্মীরে যে কী হচ্ছে, তা কেউই জানে না। কেউই জানে না যে, নয়াদিল্লি কী ভাবছে।’ ভারতের ন্যাশনাল হেরাল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন দেশটির সাবেক এই গোয়েন্দা প্রধান। তিনি বলেন, কাশ্মীরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যাচ্ছে না। সরকার দাবি করছে, সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যরা বলছেন, কাশ্মীরিরা ভাগ্যের কাছে সব সঁপে দিয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, রাস্তায় না নেমে কাশ্মীরিরা ভালোই করেছেন। কারণ এই অঞ্চলে প্রতি ৩০ জন বেসামরিক ব্যক্তির বিপরীতে একজন সেনাসদস্য নিয়োজিত আছে। কিন্তু দুলাত মনে করেন, কাশ্মীরিরা অনুভব করছে, ভারতের মানুষ তাদের হতাশ করেছে। তার ভাষ্য, ‘দিল্লির সঙ্গে সবসময়ই সমস্যা ছিল কাশ্মীরের। কিন্তু ভারতের মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আমাদের এটি অবশ্যই ভাবতে হবে। বিষয়টা কেন এখন কাশ্মীরের জনগণ বনাম ভারতের জনগণ হয়ে উঠলো, যেখানে কাশ্মীরের জনগণও ভারতের জনগণ।’ তিনি আরো যোগ করেন যে, ‘কাশ্মীরিরা মনে করছে যে, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা হচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না, তাদের দোষ কী।’
কাশ্মীরের স্বতন্ত্র সাংবিধানিক সুরক্ষা বাতিলের প্রাক্কালে সরকার সেখানে যে অবরোধ আরোপ করেছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষকে যখন বন্দির মতো করে রাখা হলো, আমরা জানতাম যে, এটি দীর্ঘায়িত হবে। এটি হয়তো আরো ৩ বছরও থাকতে পারে, বা কয়েক মাসও হতে পারে, যদি না আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়।’

সাবেক এই গোয়েন্দা প্রধান সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন যে, পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট ব্যবহার করে সরকার সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে, সেটি ব্যবহার করে ক’দিন এই স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে পারবে। তার ভাষ্য, ‘এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ লোকজনকে আটক রাখার কোনো উপায় আর সরকারের ছিল না। যখন আপনার আইনি কোনো উপায় আর না থাকে, তখনই এই আইনের আশ্রয় নিতে হয় সরকারের। কিন্তু পার্থক্য হলো যে, আগে এই আইন ব্যবহৃত হতো জঙ্গিদের বন্দি করার ক্ষেত্রে। এখন এটি ব্যবহৃত হচ্ছে রাজনীতিকদের বন্দি করার ক্ষেত্রে।’

দুলাত মনে করেন, ‘কাশ্মীর ইস্যু কেবল নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকেই মোকাবিলা করা হচ্ছে। কিন্তু এটি কেবল নিরাপত্তা ইস্যুই নয়। এটি একটি রাজনৈতিক, আবেগিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। আগে হোক, বা পরে হোক, সরকারকে এটি বুঝতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আসল প্রশ্ন হলো যে, সরকার কি শান্তি বা আলোচনাকে উপায় মনে করে কিনা। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে অন্য উপায় কী? আর মাত্র দু’টি উপায় আছে। প্রথমটি হলোÑ যুদ্ধ, যেটি সবাই বলবে পাগলামি। অন্য বিকল্প হলো স্থায়ীভাবে এভাবে রয়ে যাওয়া, যেটি এখন হচ্ছে, এবং যেটি যুদ্ধের চেয়েও অনেক খারাপ।’

তিনি আরো বলেন, ঘরোয়াভাবে বিজেপি ঘটনাপ্রবাহের ন্যারেটিভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও, বিশ্বজুড়ে এই বিষয়টির ওপর সরকারের চাওয়ার চেয়েও বেশি মনোযোগ পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে আমাদের বক্তব্য হলো যে, এটি অন্য কারও বিষয় নয়। ভালো হোক, খারাপ হোক, এটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়। কিন্তু এখন এটি সবার বিষয় হয়ে গেছে। পশ্চিমে বিষয়টি সেদিকেই চলে গেছে, আমরা পছন্দ করি, আর না-ই করি। প্রশ্ন উঠছেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এই মাসের শেষের দিকে ভারত সফর করবেন। তিনি ইতিমধ্যে দুইবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার কথা বলেছেন। এটি আমাদের জন্য সুখকর কিছু নয়। কারণ, মধ্যস্থতা আমাদের প্রয়োজন নেই।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status