এক্সক্লুসিভ

মৃত ব্যক্তির নামে ঋণ উঠিয়ে ভোগ করছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

আনোয়ার হোসেন ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১২ বছর আগে। অথচ সেই মৃত ব্যক্তির নামে ৪ বছর পূর্বে ঋণ উত্তোলন দেখিয়েছেন সমাজসেবা অফিসার আব্দুল হামিদ। অভিযোগ করেছেন তার পুত্র আজগার আলী। একই ভাবে নিতাই কুমার মারা গেছেন প্রায় ২২ বছর আগে। তার নামেও চার বছর পূর্বে ঋণ উত্তোলন দেখানো হয়েছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সমাজসেবা অফিসের আব্দুল হামিদ নামের এই কর্মকর্তা এভাবে ৬ জন মৃত ব্যক্তিসহ ২০ জনের নামে ৬ লাখ টাকা ভুয়া ঋণ দেখিয়ে উত্তোলন করেছেন। যা নিয়ে বিচার চেয়েছেন ঋণ না নিয়েও ঋণগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যরা। ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিষয়টির তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে।   
এদিকে আবদুল হামিদ নামের ওই কর্মকর্তা দাবি করেছেন, টাকাগুলো মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা নিয়েছিল। যা ইতিমধ্যে তারা পরিশোধ করে দিয়েছেন। সেখানে এখন আবার নতুন ঋণ দেয়ার কার্যক্রম চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকে এই ঋণ দেয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
সরজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালের ১২ই ডিসেম্বর উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের দরিদ্র ২০ ব্যক্তির নামে ঋণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই ঋণের টাকাও উত্তোলন করা হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরেই। এদের মধ্যে ৬ জন আছেন যারা এই ঋণ বরাদ্দ ও উত্তোলনের অনেক পূর্বেই মারা গেছেন। তারা হলেন- দলিল উদ্দিনের পুত্র আব্দুস সাত্তার, মকলেছুর রহমানের পুত্র আবুল হোসেন, আফজেল হোসেনের পুত্র আনোয়ার হোসেন, তৈয়ব আলীর পুত্র রবিউল ইসলাম, হিরু লালের পুত্র নিতাই কুমার ও মানিক চন্দ্রের পুত্র শক্তিপদ। এ ছাড়া আব্দুল মান্নানের পুত্র আব্দুল বারিক ৫ বছর আগে বিদেশে গেলেও তার নামেও ৪ বছর আগে ঋণ উত্তোলন দেখানো হয়েছে।
ওই গ্রামের ব্যাংকার রেজাউল করিম বলেন, আমার নামেও ঋণ দেখানো হয়েছে। অথচ আমি এই ঋণ সম্পর্কে কিছুই জানি না। এই অফিসের ঋণের বিষয়ে যা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। সাধারণ হতদরিদ্র যুবকদের ঋণ নিয়ে যে সব কর্মকর্তা এই সব দর্নীতি করছে অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরো জানান, তিনিসহ যাদের নামে এই ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে তারা জানতে পেরে সকলেই হতবাক। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই গ্রামের আজগার আলী জানান, তার বাবা আনুমানিক ১২ বছর আগে এক ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যান। মৃত বাবার নামে ঋণ উত্তোলনের খবরে তিনি হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঋণ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তারা এই  অফিস থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেননি। তিনি দাবি করেন, যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হওয়া জরুরি। মো. শাহাদত হোসেন নামে আরেকজন জানান, তার বাবা আব্দুস সাত্তার  ঋণের টাকা উত্তোলনের আগেই মারা গেছেন। মৃত বাবার নামে এই ঋণ দেখানো হয়েছে। তিনি জানান, বাবা কেন আমরা নিজেরাও কখনো ঋণ নেইনি। সম্পূর্ণ ভুয়াভাবে এই ঋণ উত্তোলন দেখানো হয়েছে।
ব্যাংকার রেজাউল করিম আরো জানান, তারা এই ঋণের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর থেকে ওই কর্মকর্তারা খুব ঘন ঘন আমাদের বাড়িতে আসছেন। আনুমানিক এক মাস পূর্বে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে আব্দুল হামিদ নামের ওই কর্মকর্তা এসে তাদের খুব অনুরোধ করেছেন যেন আমরা বিষয়টি মিটিয়ে ফেলি। তিনি নিজেই ইতিমধ্যে ঋণের টাকাও পরিশোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ সাইদুর রহমান রেজা জানান, তিনি বিষয়টির তদন্ত করেছেন। যারা অভিযোগ করেছেন তদন্ত কাজে তাদের সহযোগিতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এমনকি তাদের মধ্যে কয়েক জন লিখিতভাবে অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদনও করেছেন। তারপরও একজন অভিযোগকারী তদন্ত বোর্ডের সামনে হাজির ছিলেন, তার বক্তব্য নিয়েছি। ইতিমধ্যে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status