বিশ্বজমিন

নিউইয়র্ক টাইমসের ‘ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান’: পর্দার পেছনের গল্প

অ্যান্টন জোলকভস্কি

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

যে আন্তঃজালীয় ‘গ্লোবাল ভিলেজে’ আমরা বসবাস করি, তা যেন আরও একটু স্বচ্ছ হলো নিউইয়র্ক টাইমসের ‘ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধানে’র কল্যাণে। পত্রিকাটির যে মাল্টিমিডিয়া অনুসন্ধান ব্যবস্থা রয়েছে, তার বদৌলতে শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই যেকেউ দেখতে পারেন বিশ্বজুড়ে অন্যায়-অবিচারের ভিজ্যুয়াল প্রমাণ। যেমন, ‘খাশোগজি হত্যা: সৌদি আরবের নৃশংস গুপ্তহত্যা যেভাবে ঘটেছে’ শীর্ষক সাড়ে ৮ মিনিটের প্রতিবেদনে ছবি, নজরদারির ক্যামেরাসহ অসংখ্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত ভিডিওক্লিপ, অ্যানিমেশন ও স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত মানচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে বিশ্বজুড়ে আলোচিত খাশোগজি হত্যার আদ্যোপান্ত। হত্যার পরিকল্পনা, সূচনা থেকে শুরু করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা – সবই ফুটে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।

নিউইয়র্ক টাইমসের জ্যেষ্ঠ স্টোরি প্রডিউসার ম্যাল্যাঞ্চি ব্রাউনি ‘ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান’কে ‘জবাবদিহিতা ও ব্যাখ্যামূলক সাংবাদিকতার নতুন ধরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে গতানুগতিক সাংবাদিকতার সঙ্গে এক ধরণের সম্মিলন ঘটেছে প্রচুর ভিডিও, ছবি ও অডিও থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা, স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবির বিশ্লেষণ করা এবং অপরাধস্থলের থ্রি-ডি পুনঃনির্মাণ, ইত্যাদি অত্যাধুনিক ফরেনসিক পদ্ধতির।

নিউইয়র্ক টাইমসের ‘ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান’ সিরিজ মর্যাদাপূর্ণ পুলিৎজার পদকে ফাইনালিস্ট হয়েছে। এছাড়া সংবাদ ও তথ্যচিত্র বিভাগে দু’টি এমি পদক, ওভারসিজ প্রেসক্লাব অব আমেরিকা’র একটি পুরষ্কার ও রবার্ট কেনেডি হিউম্যান রাইটস পুরষ্কার জিতে নিয়েছে। ২০১৯ বিশ্ব ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে ‘অনলাইন ভিডিওর সর্বোত্তম ব্যবহার’ বিভাগে পুরষ্কার জিতেছে। একজন বিচারক তখন লিখেছিলেন, এই সিরিজ হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের ডিজিটাল ভিডিও সাংবাদিকতার নজরকাড়া উদাহরণ। আমরা গত শরতে ফোনে ম্যালাঞ্চি ব্রাউনির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। এখানে তিনি ‘ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান’ সিরিজের পর্দার পেছনের গল্পের ওপর আলোকপাত করেছেন।

‘সামাজিক সাংবাদিকতা - তবে আরও গভীরতর
২০১৭ সালের এপ্রিলে শুরু হয় ‘ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান’ সিরিজ। অনেকদিন ধরেই একটি বিশেষ ধরণের সাংবাদিকতার কথা শোনা যাচ্ছিল। একে বলা হচ্ছিল সামাজিক সাংবাদিকতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমনির্ভর এই সাংবাদিকতার বিবর্তনই হলো ‘ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান’। তবে এখানে ব্রেকিংনিউজ ও ট্রেন্ডিং স্টোরিজ যোগ করা হয়েছে। এর আগে ব্রাউনি কাজ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমনির্ভর বার্তা সংস্থা স্টোরিফুল ও রিপোর্টেড.এলওয়াই-এ। স্টোরিফুল পরবর্তীতে প্রকাশকদের জন্য সেবাদাতা সংস্থায় পরিণত হয়। ২০১৩ সালে এটি কিনে নেয় নিউজ কর্প। অপরদিকে ফার্স্ট লুক মিডিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয় রিপোর্টেড.এলওয়াই ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়।

তবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আরও কিছু সংস্থা আগে থেকেই কাজ করেছে। মানবাধিকারের ক্ষেত্রে উইটনেস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্যাটেলাইট চিত্র ও অন্যান্য ভিজ্যুয়াল প্রমাণাদি ব্যবহার করেছে। সিটুও ফরেনসিক আর্কিটেকচার-এর আবার থ্রি-ডি ও টাইমলাইন নিয়ে বিশেষত্ব আছে। স্টোরিফুল ও বেলিংক্যাট রীতিমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কনটেন্টের সত্যতা প্রমাণের মানদ- ঠিক করে গেছে। ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স বা উন্মুক্তসূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ভিত্তিক অনুসন্ধানে ও তারা পথিকৃথ। এছাড়া বহু সংবাদ মাধ্যমের গ্রাফিকস বিভাগও এসব উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। ব্রাউনি বলেন, ‘স্টোরিফুলে থাকার সময় আমরা সামাজিক জাল ব্যবহার করে সংবাদ উপযোগী ঘটনার আঁচ পেতাম বা অনুসন্ধান করতাম। শেষ অবদি হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতিবেদনও করতাম। আমরা একটি ছবি ও ভিডিও যাচাইকরণ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করি। এর ফলে আরব বসন্ত থেকে শুরু করে উটোয়া (নরওয়ের দ্বীপ, যেখানে এক ডানপন্থী উগ্রপন্থী ৬৯ জনকে হত্যা করেছিল) বা ভয়াবহ কোনো আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের ছবি বা ভিডিও যাচাই করেছি। কিন্তু এই কাজ যখন ব্রেকিংনিউজের প্রেক্ষাপটে করবো, তখন অবশ্যই আরও গভীরতর অনুসন্ধানের প্রয়োজন দেখা দেয়।’

কম্যুনিটির কথা শোনা, প্যাটার্নের ভিন্নতা খুঁজে বের করা
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সময় প্যাটার্ন দেখতে পাই। যখন আপনি এমন সব কম্যুনিটি বা নাগরিকদের কথা শুনবেন যারা কিনা তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবেই বিভিন্ন সংঘাতকে পর্যবেক্ষণ ও লিপিবদ্ধ করে, তখন আপনি এমনিতেই দেখতে পারবেন যে কিছু প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে। আপনি যখন সময়ে সময়ে এসব কম্যুনিটির কথা শুনবেন বা মনোযোগ দেবেন, তখন এসব প্যাটার্ন দেখতে পাবেন। এসবই ছিল আমাদের এখনকার যে অনুসন্ধানী কাজ সেগুলোর প্রাথমিক ধারণা।’

ব্রাউনি এরপর রিপোর্টেড.এলআই-এ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। এবার তিনি আরও কয়েক ধাপ গভীরে প্রবেশ করেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ধরা পড়ে যে কীভাবে ইতালি থেকে সৌদি আরবে যাচ্ছে অস্ত্র। সেই অস্ত্রই পরে ইয়েমেনের বেসামরিক মানুষকে মারার কাজে ব্যবহৃত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি আরও গভীরতর অনুসন্ধানে নামেন। এবার তার সহযোগী ছিল নিউইয়র্ক টাইমসের বারবারা মারকোলিনি। ইতালিতে জনক্ষোভ সৃষ্টি হয়। সরকার বাধ্য হয়ে অস্ত্রের চালান বন্ধ করে। ওই প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে সাধারণ প্রতিবেদন কৌশলের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট সংগ্রহ, যাচাইকরণ প্রক্রিয়ায় সম্মিলন ঘটেছে। এছাড়া যুক্ত ছিল সমরাস্ত্র ও সমরাস্ত্রের অবশিষ্টাংশ চিহ্নিতকরণ এবং জাহাজ ট্রাকার ব্যবহার করা।’
নিউইয়র্ক টাইমসে এসে ব্রাউনি পত্রিকাটির দুই নির্বাহী সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করেন। মার্ক শেফলার ও ন্যান্সিগসের সঙ্গে মিলে তিনি একেবারে শূন্য থেকে গড়ে তোলেন ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান দল। সিরিজের প্রথম প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় সিরিয়ার খানশায়খুন শহরে রাসায়নিক হামলার ঘটনা। ওই হামলার চালানোর কথা সিরিয়ান সরকার অস্বীকার করেছিল। প্রথম প্রতিবেদনের পর ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান সিরিজে ৫০টিরও বেশি প্রতিবেদন হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পুরোনো ঘটনার ফলো-আপ ছিল, যেখানে উঠে এসেছে নতুন নতুন সব তথ্যপ্রমাণ।

অভিন্নতা: ভিজ্যুয়াল প্রমাণ
ব্রাউনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই সবকিছুকে এক সূত্রে গেঁথেছে যে বিষয়টি তাহলো ভিজ্যুয়াল প্রমাণ। আমরা এগুলোকে এমনভাবে বিশ্লেষণ করি যে নতুন নতুন সব তথ্য উঠে আসে। এই তথ্য হয়তো প্রথমেই অত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। যেমন ধরুন, কোথাও কোনো বিমান হামলা হলো। আমরা জানতে পারলাম যে হামলা কোথায় হয়েছে। এরপর আমরা হামলার আগের ও পরের স্যাটেলাইট চিত্র পাবো। তখন আমরা দেখতে পারবো যে, হামলার পর কোনো ভবনে কি গর্ত সৃষ্টি হয়েছে কিনা, নাকি আগে থেকেই গর্ত ছিল। এভাবে কোনো ঘটনার সময়ক্রম আমরা বের করতে পারি।’

এছাড়া জিওলোকেশনের মাধ্যমেও কোন স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই বিষয়টি বের করা যায়। তিনি বলেন, ‘ধরুন, ওই হামলার কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আপনি বিশ্লেষণ করতে পারছেন। এভাবে করে আপনি পেয়ে যাবেন এটি কীভাবে ঘটলো। আমরা প্রচুর ভিজ্যুয়াল প্রমাণ সংগ্রহ করি। এরপর একে বিশ্লেষণ করি, ও আরও রিপোর্টিং করি।’

কিছু প্রতিবেদন হয়তো এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে গবেষণা করে প্রকাশের উপযোগী হয়। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিবেদনই প্রচার করতে করতে এক-দুই মাস লেগে যায়। কিছু ক্ষেত্রে সময় লাগে আরও বেশি। তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছরের গাজা বিক্ষোভের সময় এক মেডিকেলকর্মীকে হত্যার ঘটনা নিয়ে একবার এক গভীর অনুসন্ধান করেছিলাম। আমরা তখন থ্রি-ডি পুনঃনির্মাণ (রিকনস্ট্রাকশন) কৌশল ব্যবহার করে ওই মেডিকেল কর্মীর শরীরে যে বুলেটটি বিঁধেছিল, সেটির গতিপথ বের করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ওই প্রতিবেদন করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৬ মাস।’

সময় ও কঠোর পরিশ্রম ছাড়াও এ ধরণের প্রতিবেদন প্রযোজনার জন্য এমন বহু ভিডিও দেখতে হয় যেগুলো হয়তো অত্যন্ত নৃশংস। ব্রাউনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই নিশ্চিত করি যে, পীড়াদায়ক ঘটনার মধ্যে যেন আমরা বেশি ডুবে না থাকি।’

অগোচরে থাকা বিষয়ের ওপর আলোকপাত
এই ‘গ্লোবালভিলেজ’-এ মানুষের জীবনকে আরেকটু ভালোর দিকে নিয়ে যেতে ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান কীভাবে ভূমিকা রেখেছে? এই প্রশ্নের জবাবে ব্রাউনি বলেন, ‘প্রথমত, একেবারে কম করে হলেও, বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে আপনি সচেতনতা তৈরি করতে পারছেন। এমন সব নির্যাতন বা ক্ষমতার অপব্যবহারের ওপর আলোকপাত করতে পারছেন যা হয়তো অগোচরেই থেকে যেতো। দ্বিতীয়ত, আমরা যেসব কম্যুনিটির ওপর প্রতিবেদন করি, বা সেসব ঘটনার কারণে যারা আক্রান্ত হয়, তাদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া পাই। ফলে এসব প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে আপনি এমন সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন যাদের কোনো কণ্ঠস্বর নেই; বিশেষত তারা যখন এমন সব দেশে বসবাস করে যেখানে ক্ষমতায় আছে স্বৈরাচার কিংবা যেখানে চলছে পুলিশি শাসন।’

ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান সিরিজের প্রতিবেদনের কারণে প্রায়ই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয় পাবলিক পলিসি। ব্রাউনি বলেন, ‘একবার নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনীর হাতে বিক্ষোভকারীদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রতিবেদন নাইজেরিয়ার সাংবাদিকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া সৃষ্টি করে। এর ফলশ্রুতিতে সরকার ওই ঘটনার ওপর তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয়।’ গাজা বিক্ষোভের সময় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ইচ্ছাকৃত একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করে হত্যা করার বিষয়টি একটি প্রতিবেদনে উঠে আসার পর ইসরাইলি ফৌজদারি তদন্ত শুরু হয়। পাশাপাশি, ওই ঘটনায় তদন্ত শুরু করে জাতিসংঘ। এছাড়া খোদ নিউইয়র্কে কয়েকটি গ্যাং-এর অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে এমন সব প্রমাণ উঠে আসে, যা পরে পুলিশ খুনীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে ব্যবহার করে। ব্রাউনি বলেন, ‘যদিও এটি নতুন ধরণের সাংবাদিকতা, তবুও এটি সাংবাদিকতার ঐতিহ্যের মধ্যেই প্রোথিত। ফলে দেখতে মনে হতে পারে এটি সৃজনশীল বা অভিনব মনে হতে পারে, কিন্তু এই সাংবাদিকতার ফলে সমাজে প্রভাব পড়তে পারে বেশ।’

ইউটিউব প্লেলিস্ট
নিউইয়র্ক টাইমসের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর এক ধরণের সাড়া তো পড়েই। কিন্তু ভিজ্যুয়াল ইনভেস্টিগেশনের ইউটিউব চ্যানেলের কারণেও এসব প্রতিবেদনের প্রভাব বেড়েছে। যেমন, সিরিজের সবচেয়ে বেশি দেখা প্রতিবেদনটি ছিল একজন বন্দুকধারীকে নিয়ে যিনি ২০১৭ সালে লাস ভেগাসে ৫৯ জনকে হত্যা করেন। ইউটিউবে এই প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে ১ কোটি ৬৮ লক্ষ বার। ব্রাউনি বলেন, ‘ইউটিউবে সত্যিকার কম্যুনিটির বৈশিষ্ট্য আছে। ফলে আমরা দেখছি যে মানুষ এ ধরণের প্রতিবেদনকে একেবারে স্বতন্ত্র ঘরানার প্রতিবেদন হিসেবে দেখছে। আমরা চেষ্টা করছি যে ইউটিউবের এই কম্যুনিটির বিষয়টিও মাথায় রাখার। আমরা তাদের প্রশ্নের উত্তর দিই। কোনো প্রতিবেদনের বিষয়ে নতুন তথ্য থাকলে কম্যুনিটি পোস্ট ব্যবহার করে তাদেরকে অবহিত করি।’ তিনি বলেন, নিউইয়র্ক টাইমসের ওয়েবসাইটের তুলনায় ইউটিউবের দর্শকরা বেশি আন্তর্জাতিক ও অল্প বয়স্ক।

তার ভাষ্য, ‘আমরা সচেতন যে আমাদেরকে অনেক ভিন্ন ভিন্ন ধরণের দর্শকের কাছে পৌঁছাতে হবে। এ কারণে আমরা সৃজনশীলও হচ্ছি।’ আবার অত্যাধুনিক ভিডিও কৌশলের ওপর জোর দিলেও মুদ্রণ সংস্করণকেও অবহেলা করা হচ্ছে না। ব্রাউনি জানালেন যে, সিরিজের প্রতিবেদনগুলো নিউইয়র্ক টাইমসের মুদ্রণ সংস্করণেও প্রকাশ করা হয়। তার ভাষ্য, ‘আমরা শিখেছি যে একটি ভিডিও প্রতিবেদনকে কীভাবে ছাপা অক্ষরের প্রতিবেদনে রূপান্তর করা যায়। আমাদের গ্রাফিকস দল ও প্রিন্ট ডিজাইনারদের সঙ্গে একজোট হয়ে আমরা এমনভাবে প্রমাণগুলো ছাপার উপযোগী করে উপস্থাপন করি।’ এরপর সেভাবে করে প্রতিবেদন লেখা হয়। পুরো একপাতা বা দুইপাতা জুড়েও নিবন্ধ ছাপা হয়। ব্রাউনি বলেন, আমাদেরকে অনেকেই বলেন যে ঠিক এ ধরণের প্রতিবেদনের কারণেই অনেকে প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণের গ্রাহক হচ্ছেন। এর চেয়ে বড় প্রশংসা হয় না।

ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান দলে যারা আছেন

ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান দলে যারা আছেন তাদেরকে ব্রাউনি আখ্যা দিয়েছেন ‘ওপেন সোর্স’ প্রতিবেদক। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ে বিশেষভাবে দক্ষ। তবে তাদের অন্যান্য দক্ষতাও আছে। যেমন, ওয়েব পেইজ পাঠোদ্ধার করা, ভিডিওরজি ও লোকেশন বের করা, প্রচুর ডেটা স্প্রেডশিট নিয়ে কাজ করা, ফ্লাইট ট্রাকার বা শিপিং সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা, ইত্যাদি।

ব্রাউনি মূলত আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা। ২০০৬ সালে সাংবাদিকতায় আসার আগে তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ছাড়াও দলে আছেন ক্রিস্টোফ কোয়েটল। অস্ট্রিয়ার এই নাগরিক স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞ। নিউইয়র্ক টাইমসে যোগদানের পূর্বে তিনি ১০ বছর কাজ করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে। আছেন বারবারা মারকোলিনি। তিনি ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক। বেশ কয়েকটি ভাষায় পারদর্শি বারবারা এর আগে অল্প সময় কাজ করেছেন স্টোরিফুলে। এছাড়া ভিডিও জার্নালিজমের ওপর মাস্টার্স আছে তার। নতুন করে দলে যোগ দিয়েছেন নেদারল্যান্ডের নাগরিক ক্রিস্টিয়ান ট্রিয়েবার্ট। এর আগে তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওয়েবসাইট বেলিংক্যাটে কাজ করেছেন। টেক্সাসের বাসিন্দা হ্যালে উইলিস এর আগে ওপেন সোর্স গবেষক হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বার্কলে) হিউম্যান রাইটস সেন্টারে কাজ করেছেন। আছেন ইভান হিল। এই আমেরিকান নাগরিক আরবি ভাষায় দক্ষ। এর আগে তিনি লেবাননের বৈরুতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন।
নিজের দল সম্পর্কে ব্রাউনি বলেন, ‘মানবাধিকার কর্মী ও অনলাইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের মিশ্রণ আমাদের দল।’ ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান দল মূলত টাইমস-এর ভিডিও বিভাগের শাখা। দলের সদস্যরা ভিডিও সম্পাদকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। এছাড়া মাঝে মাঝে মোশন গ্রাফিকস সম্পাদকের সঙ্গেও প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করেন। তবে প্রতিবেদন যদি চিরাচরিত ফরম্যাটে ছাপার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তারা গ্রাফিকস প্রতিবেদক বা প্রযোজকের সঙ্গেও কাজ করেন। ব্রাউনি বলেন, ‘এক প্রজেক্ট থেকে আরেক প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে আমরা এই বিশাল সংগঠনের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসাধারণ সব সাংবাদিকের সঙ্গে কাজ করার সুবিধা পাই। সুবিধা পাই অজস্র সূত্রের নেটওয়ার্ক, অন্যান্য প্রতিবেদক, ফ্রিল্যান্স প্রতিবেদকদের সাহায্যও। আমরা তাদের সঙ্গেও একত্রিত হই প্রয়োজনে।’

(অ্যান্টন জোলকভস্কিসংবাদ প্রকাশকদের বৈশ্বিক সংগঠন‘ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজ পাবলিশার্স’ বা ডব্লিউএএন-আইএফআরএ’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। ইংরেজি ভাষার মূল নিবন্ধটি ডব্লিউএএন-আইএফআরএ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status