প্রথম পাতা

অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা ঢাকায় আসছে

স্টাফ রিপোর্টার

৩০ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

‘বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করছে বিএনপি’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যকে হাস্যকর মন্তব্য করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বাইরে থেকে অস্ত্রশস্ত্রসহ ঢাকায় আসছে।

গতকাল রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা অত্যন্ত হাস্যকর। কে না জানে যে বিএনপির প্রার্থীরা, কর্মীরা, তারা বাড়িতে থাকতে পারছে না, পুলিশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে। আমাদের বিএনপির পক্ষে বাইরে থেকে লোক আনা, বা কোনো অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করা এটা অসম্ভব বিষয়। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভবও নয়, আমরা এটা করিও না। আপনারা যারা প্রচার সঙ্গী আছেন, এ পর্যন্ত অপরিচিত ফেস আপনারা দেখেননি। বিএনপির দিকে ওবায়দুল কাদের যে অভিযোগ করেছে, সেটি আওয়ামী লীগই করছে বলে অভিযোগ করে ড.  মোশাররফ বলেন, আমরা জানি, এইটাই করছে। বাইরে থেকে নেতার্মীদের এনে ঢাকা শহরে সয়লাব করে ফেলছে। তারা প্রায় ৩০ লক্ষ নেতা কর্মী ঢাকা শহরে এনেছে এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ এনেছে । এই অস্ত্র নিয়ে আসতে তাদের কর্মীরা সাহস পায় কারণ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা নেবে না। অতএব এই কাজটি তারা করেছে। এই কাজটি তারা করবে বলেই আগে থেকেই বিএনপির উপরে দোষ চাপানোর জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেব এই উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে দেয়া তাদের যে সব সময়ের অভ্যাস সেটা করার জন্য এই কথা বলেছেন।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তার তীব্র নিন্দা করি। এই শহরের বাইরে থেকে এ পর্যন্ত এখনো বিএনপির একজন কর্মীও কাজ করতে আসেনি। আসবেও না। আমাদের প্রয়োজনও নেই। কেননা আপনারা জানেন, আমাদের এই নির্বাচন প্রচারণায় আপনার দেখেছেন, জন জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যদি জনগণ ভোট দিতে পারে, নিজের হাতে ভোট দিতে পারে, তাহলে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পেয়ে আমাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হবে। আমরা কেন বাইরে থেকে লোকজন আনবো? আমাদের তো অস্ত্রের প্রয়োজন হয় না। জনগণইতো আমাদের বড় শক্তি।

মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন মানেই বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে তামাশা, প্রশাসনিকভাবে কেন্দ্র দখল করে সিল মারার উৎসব। কখনো কখনো দিনের ভোট আগের রাতেই সম্পন্ন করে ফেলা। হরেক রকম কারসাজি ও তামাশা পরিপূর্ণ এখন বাংলাদেশের নির্বাচন। তাই নির্বাচন নিয়ে কোন মানুষের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ নেই।

তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন জমাদান এবং প্রচার প্রচারণা শুরু থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অব্যাহতভাবে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে আমাদের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে হামলা, দলীয়   নেতাকর্মীদের মামলা, গ্রেপ্তারসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা বারবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করার পরও কমিশন থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বরং তারা বরাবরের মতোই নির্বিকার। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো ঠিক হয়নি। অথচ এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশন বলছে তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করছেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা তার কিছুই দেখছি না। এ কারণে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সকল নির্বাচনের মতোই যেন তামাশা, প্রহসনে পরিণত না হয়।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মামলা-হামলা, হয়রানি প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এসব ঘটনার পরও নির্বাচন কমিশন থেকে ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। গত ২৬ তারিখে গোপীবাগে আমাদের প্রচারণায় হামলা হয়েছে। এই ঘটনায় উল্টো আমাদের ২০০ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে, তাদেরকে বাড়ি ঘর ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটাই হলো নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর বাস্তবতা। একচোখা নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের ন্যক্কারজনক আচরণে এই নির্বাচনকে যদি গতানুগতিক প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করা হয়, এমন পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে।

ইভিএম প্রসঙ্গে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই বলেছি যে, আমরা ইভিএমের পক্ষে নই। কারণ পৃথিবীর কোনো দেশেই ইভিএম কে গ্রহণ করে নাই। কারণ এর মাধ্যমেই ভোট কারচুপি করা সম্ভব। ভোটের ফলাফল বানচাল করা যায়। আমরা এখনো দাবি করছি ইভিএম নয় ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা হোক।

আগামীকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশ করার কথা জানিয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু। নির্বাচনের একদিন আগে এমন সমাবেশ ও গণমিছিল নির্বাচনে আচরণবিধির পরিষ্কার লঙ্ঘন উল্লেখ করে এবং এ সমাবেশ না করার আহ্বান জানিয়ে মোশারফ  হোসেন বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব যিনি আছেন তিনি গতকাল বলেছেন, আগামীকাল তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ করবেন এবং সেখান থেকে গণমিছিল নিয়ে শাপলা চত্বরে যাবেন। এখানে বলতে চাই এটা নির্বাচনের আচরণবিধি পরিষ্কার লঙ্ঘন। আপনারা এ সমাবেশ করা থেকে বিরত থাকুন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status