বিশ্বজমিন

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

ইরানের তীব্র নিন্দা, স্বাগত জানিয়েছে সৌদি, কাতার ও আরব আমিরাত

মানবজমিন ডেস্ক

২৯ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী ঘোষণা করে মধ্যপ্রাচ্যের বহু আকাক্সিক্ষত শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী দেশগুলো ও প্রভাবশালী নেতারা ইতিমধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ এটিকে বলছেন আগ্রাসী পরিকল্পনা আবার কেউ এটিকে দেখছেন পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে। অনেক রাষ্ট্রই আবার এই পরিকল্পনাকে শান্তির পথে এক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এই পরিকল্পনার সবথেকে কঠিন নিন্দা জানিয়েছে ইরান। অপরদিকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব, কাতার, আরব আমিরাত, ফ্রান্স ও বৃটেন।

মঙ্গলবার শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণার পর হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে ট্রাম্প বলেন, আমার এ পরিকল্পনা উভয় পক্ষের জন্যেই জয়। তবে ফিলিস্তিনি নেতারা ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা তাৎক্ষনিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, এই পরিকল্পনা ইতিহাসের ডাস্টবিনে পড়ে থাকবে। এর আগে ২০১৭ সালে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরণের স¤পর্ক ছিন্ন করেছিলো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা ঘোষণার পর অধিকৃত পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতেও এ বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত ইরান ও তুরস্ক এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

আরব রাষ্ট্র কাতার ডনাল্ড ট্রাম্পের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম এ নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ওই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য নেয়া সকল পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় কাতার। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও দেশটির বর্তমান প্রশাসন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত সমাধানে যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে তার তারিফ করছে কাতার। আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের রেজুলেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সমাধান বাস্তবায়ন করা উচিৎ।

এদিকে ট্রাম্পের নতুন ফিলিস্তিন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব। একে স্বাগত জানিয়ে দেশটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার আহবান জানিয়েছে। এ নিয়ে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। বুধবার সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এ খবর প্রকাশ করে। ফোনে বাদশাহ সালমান ফিলিস্তিনিদের প্রেসিডেন্টকে আশ্বস্থ করেন।

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে ইউরোপজুড়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিক জোসেপ বোরেল জানিয়েছেন, সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ভালোভাবে পড়ে দেখবে। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে শুধুমাত্র উভয় পক্ষের কাছে গ্রহনযোগ্য দুই রাষ্ট্র সমাধানই কাজ করবে। অপরদিকে বৃটেনের পক্ষে এ পরিকল্পনাকে সমর্থন দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডমিনিক রাব।

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল-ওতাইবা বলেছেন, এই পরিকল্পনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী কাজ শুরু করার গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট। সমাধান দীর্ঘমেয়াদে কার্যকরি হওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে একটি বোঝাপড়া। তিনি আরো বলেন, আরব আমিরাত বিশ্বাস করে যে এই পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা শান্তিপূর্নভাবে একইসঙ্গে বেঁচে থাকতে পারবে।
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানালেও এর কঠিন সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছে ইরান। দেশটি এই পরিকল্পনাকে ফিলিস্তিনিদের অবরুদ্ধ করার চেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির উপদেষ্টা হেসামেদিন আশেনা টুইটারে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি। ফিলিস্তিনের মানুষ তাদের কাছে কোনো এজেন্ডা না। এটা কোনো শান্তিচুক্তি হতে পারে না। এরপর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ও এক বিবৃতিতে এই পরিকল্পনার কঠিন সমালোচনা করে। এতে ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে শতাব্দির সেরা বিশ্বাসঘাতকা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি কোনোভাবেই বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব না বলেও জানায় ইরান।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক রাষ্ট্র জর্ডানও এই প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়েছে। হুঁশিয়ারি দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের চেষ্টা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। তবে ফিলিস্তিনের মানুষ মেনে নেবে এমন কোনো ‘সত্যিকারের’ প্রচেষ্টাকে জর্ডান সমর্থন দেবে বলেও জানান তিনি। আম্মানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বাইরে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী বিক্ষোভও করে বুধবার। এসময় তারা স্লোগান দিয়ে বলে, আমরা কখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবো না।

এর নিন্দা জানিয়েছে তুরস্কও। তুরস্কের একে পার্টির সহকারি প্রধান নুমান কার্তুলমাস এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, না জনাব ট্রাম্প! জেরুজালেম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী ও ইসলামিক বিশ্বের হৃদপিণ্ড। এছাড়া, লেবাননের ইসলামপন্থী সশস্ত্র বাহিনী হেজবুল্লাহ এই প্রস্তাবের সমালোচনা করে একে ডিল অব শেইম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইরানপন্থি গোষ্ঠিটি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, এটি এমন একটি ভয়াবহ পদক্ষেপ যার পরিণতি এই অঞ্চলকে ভোগ করতে হবে। নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠি হুতিও। ইরানপন্থি বিদ্রোহী দলটির প্রধান আলি আল-হুতি বলেন, এ প্রস্তাব ফিলিস্তিনি জাতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্লজ্জ্ব আগ্রাসন। তার দাবি, এই চুক্তি সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের অর্থায়নে ইসরায়েলের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status