বিশ্বজমিন

মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ট্রাম্পের

জেরুজালেম ইসরাইলের অবিভক্ত রাজধানী, ফিলিস্তিন বলছে ষড়যন্ত্র

মানবজমিন ডেস্ক

২৯ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

জেরুজালেমকে ইসরাইলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব করেছেন। একই সঙ্গে পশ্চিমতীরের বসতিকে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের অধীনে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলেছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউজে নিজের পাশে নিয়ে এই পরিকল্পনা ঘোষণা করে তিনি বলেন, এটা হতে পারে ফিলিস্তিনিদের জন্য শেষ সুযোগ। তবে এমন পরিকল্পনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যায়িত করে একে প্রত্যাখ্যান করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেছেন, আমি ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুকে বলি, জেরুজালেম বিক্রির জন্য নয়। আমাদের অধিকার বিক্রির জন্য নয়। এ নিয়ে দর কষাকষির জন্য নয়। আপনাদের পরিকল্পনা যড়যন্ত্র সফল হবে না। পশ্চিম তীরের রামাল্লায় থেকে টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে এসব কথা বলেন মাহমুদ আব্বাস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

বিশ্বে যতগুলো দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত বা দ্বন্দ্ব আছে তার মধ্যে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত অন্যতম। এই সংঘাতময় অবস্থার সমাধানের লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাই জারেড কুশনারের তত্ত্বাবধানে এই পরিকল্পনার খসড়া তৈরি হয়েছে। কিন্তু দখলীকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইল সেনাবাহিনী নতুন করে মোতায়েন করার ফলে মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ করেছে।

এই পরিকল্পনা এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হলো যখন ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু উভয়েই স্ব স্ব দেশে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের বিচার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এর আগে তিনি দুর্নীতির ওই অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি চেয়ে পার্লামেন্টে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে তার দল এখন সংখ্যালঘু। ফলে তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কার মুখে মঙ্গলবার তিনি ওই আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অভিযোগের সবটাই প্রত্যাখ্যান করেছেন দুই দেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধান।

এ সময়কে এই পরিকল্পনা ঘোষণার জন্য বেছে নেয়া নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও ইসরাইলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রায়েডম্যান বলেছেন, রাজনৈতিক কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এই সময় নির্ধারণ করা হয় নি। কিছুদিন ধরেই এ পরিকল্পনা করা হয়েছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরের শতকরা ৩০ ভাগে দখল সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে নেতানিয়াহুর। এ বিষয়টি আগামী রোববার মন্ত্রীপরিষদের ভোটে উঠতে পারে। পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতিতে এখন বসবাস করেন কমপক্ষে ৪ লাখ ইসরাইলি। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এসব বসতি অবৈধ, বেআইনি। তবে এটাকে বেআইনি হিসেবে মানতে রাজি নয় ইসরাইল।

ট্রাম্পের মূল প্রস্তাবগুলো কি
হোয়াইট হাউজে কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, শান্তির দিকে বড় একটি পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরাইল। আমার দৃষ্টিভঙ্গি, যা উপস্থাপন করা হচ্ছে তা উভয় পক্ষের জন্যই উইন-উইন সুযোগ রয়েছে। এতে আছে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক বাস্তবসম্মত সমাধান। এ সমস্যা সমাধানে ট্রাম্প যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো হলো:
১.    ইসরাইলি ভূখন্ডের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিকল্পনার মধ্যে একটি ধারণাগত মানচিত্র রয়েছে, ট্রাম্প বলেছেন এটি আঞ্চলিক অখন্ডতা তুলে ধরে।
২.    এই মানচিত্রটি হবে ফিলিস্তিন ভূখন্ডের দ্বিগুনেরও বেশি। এতে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে ধরা হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস খুলবে। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) বলেছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিন যাকে ‘ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন’ বলে থাকে তার শতকরা ১৫ ভাগের কিছু বেশি অংশের নিয়ন্ত্রণ থাকবে ফিলিস্তিনিদের কাছে।
৩.    জেরুজালেম হবে ইসরাইলের অবিভক্ত রাজধানী। এই পবিত্র শহরের পুরোটার নিয়ন্ত্রণ দাবি করে আসছে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুুদ্ধের সময় পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরাইল। ফিলিস্তিনিদের দাবি, এই পূর্ব জেরুজালেম হবে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত রাজধানী।
৪.    এ প্রস্তাবে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের নিজেদের মতো করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়ার সুযোগ। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেন নি ট্রাম্প।
৫.    কোন ফিলিস্তিনি অথবা ইসরাইলিকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। এর অর্থ হলো পশ্চিম তীরে ইসরাইল দখলীকৃত ইহুতি বসতি অব্যাহত থাকবে।
৬.    জেরুজালেমে যে সব পবিত্র স্থাপনা আছে তা সংরক্ষণে জর্ডানের বাদশার সঙ্গে কাজ করবে ইসরাইল।   এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ইহুদিদের টেম্পল মাউন্ট এবং মুসলিমদের জন্য আল হারাম আল শরীফ। শেষ স্থাপনাটি পরিচালনার জন্য জর্ডান পরিচালনা করে ধর্মীয় একটি ট্রাস্ট।
৭.    মানচিত্রে ফিলিস্তিনিদের জন্য যে ভূখন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে তা চার বছর পর্যন্ত উন্মুক্ত ও অনুন্নœত থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা চুক্তি নিয়ে পর্যালোচনা করতে পারবে। ইসরাইলের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারবে। একটি রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারবে।
ট্রাম্প বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা দারিদ্র্যে এবং সহিংসতার মধ্যে রয়েছে। তাদেরকে ব্যবহার করছে সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থিরা। কিন্তু তারা উন্নত জীবনের দাবিদার। তিনি আরো ইঙ্গিত করেন এই পরিকল্পনার অধীনে পশ্চিম তীরকে কেটে অর্ধেক করা যাবে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status