শেষের পাতা

১৩ দফা ইশতেহারে ১৪৪ প্রতিশ্রুতি ইশরাকের

স্টাফ রিপোর্টার

২৯ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

আধুনিক ও বিশ্বমানের বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে ১৩ দফা ইশতেহারে ১৪৪টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র মেয়রপ্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। নাগরিক সেবা ও ঢাকার ঐতিহ্য রক্ষা করে নগরীর সৌন্দর্য বাড়ানো এবং যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নের মতো প্রতিশ্রুতি আছে তার ইশতেহারে। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন ইশরাক। ইশতেহারের ১৩ দফার মধ্যে আছে নাগরিক সেবা  নাগরিক বিনোদন, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন, নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবেশ-উন্নয়ন বনায়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, সমাজসেবা কার্যক্রম, জননিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, গ্রন্থাগার ও জাদুঘর, নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসন।
ইশরাক বলেন, পার্ক ও ব্যায়ামাগারে অত্যাধুনিক প্রাইমারি হেলথ চেকআপ সেন্টার স্থাপন করা হবে। প্রাতঃ ও সান্ধ্যকালীন ওয়ার্কারদের সুবিধার্থে পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলোতে অধিকতর পরিকল্পিত আধুনিক ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। ফরমালিনমুক্ত খাদ্যসামগ্রির নিশ্চিত করতে প্রতিটি বাজারে ভেজাল পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। জনসমাগমস্থলে ফুডকোড তৈরি করা হবে।
নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক পরিকল্পনা তুলে ধরে ইশরাক আরও বলেন, নগরের সমস্যার গুরুত্ব অনুসারে স্বল্প মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ স্বদেশে-বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। নগরের সমস্যা চিহ্নিত করতে ও কার্যকর সমাধানে পরিকল্পনাবিদদের কাজের পরিধি বাড়ানো এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে ওয়ার্ড ভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে যাতে এ বিকেন্দ্রীকরণের সুফল দ্রুত তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো যায়। নগর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করে সেবার মানোন্নয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। নির্বাচনে আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।
ইশরাক বলেন, আমি ঢাকার সন্তান। আপনাদেরই আপনজন। আপনাদের সুখ-দুখের সঙ্গে আমার জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এ ঐতিহাসিক নগরের সন্তান হিসেবে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হচ্ছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে বিশ্বমানের আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে আমার নিজস্ব চিন্তা, চেতনা, ভাবনা ও প্রত্যাশার কাঠামো আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আপনাদের সহযোগিতা পেলে তা আরও বাস্তব প্রায়োগিক ও নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আমি একান্তভাবে আশাকরি আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে আপনাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।
তিনি বলেন, নগরবাসীকে সস্তা দামে বিষমুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে বিশেষ স্থানে কৃষক মার্কেট ও নাইট মার্কেট চালু করা হবে। রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। নদী দূষণ রোধ করে নদী পর্যটন চালু করা হবে।
দুর্নীতিমুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশরাক বলেন, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার রক্ষা, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সম্মিলনে মাদকমুক্ত, যানজট-দূষণমুক্ত, মশা ও জলাবদ্ধতামুক্ত ভারসাম্যমূলক ও পরিবেশসম্মত বিশ্বমানের বাসযোগ্য এক অত্যাধুনিক ঢাকা গড়ে তুলবো।
দক্ষিণ সিটির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, রাজধানীর উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। সিনিয়র সিটিজেন সার্ভিস চালু করা হবে। গ্রন্থাগার ও জাদুঘর আরও আধুনিকায়ন করা হবে। আসন্ন সিটি নির্বাচনে ভোটারদের মূল্যবান ভোট দিয়ে মেয়র পদে তাকে জয়ী করার আহ্বান জানান ইশরাক।
ইশতেহারের প্রথম দফায় বলা হয়, গণশুনানির মাধ্যমে নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা। হোল্ডিং ট্যাক্স সেক্টরকে সব প্রকার দুর্নীতিমুক্ত করা। নাগরিকদের কাছ থেকে আদায় করা করের টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হবে, তা বছরে কমপক্ষে দুবার করদাতাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। নগরের আয়-ব্যয়ের হিসাব রক্ষণে স্বচ্ছতা প্রণয়ন করা হবে।
নাগরিক বিনোদনের বিষয়ে ইশরাক হোসেন প্রতিশ্রুতি দেন, সিটি করপোরেশনের যেসব উন্মুক্ত উদ্যান, নদী ও খাল বেদখলে আছে, সেগুলো দখলমুক্ত এবং ওয়ার্ডভিত্তিক ক্ষুদ্র পরিসরে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকার যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের এই মেয়র প্রার্থী। এতে বলা হয়েছে-প্রতিটি ফুটওভার ব্রিজে পর্যায়ক্রমে এলিভেটর/এস্কেলেটর স্থাপন ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা সংবলিত স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধাসহ অত্যাধুনিক ও পরিচ্ছন্ন যাত্রী বিশ্রামাগার এবং টাউটমুক্ত যাত্রীবান্ধব পরিচ্ছন্ন বাস টার্মিনাল করা হবে। দ্রুতগামী ইলেকট্রিক্যাল বাস সার্ভিস ও স্মার্ট বাস স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
ইশতেহারে নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ব্যায়ামাগারে অত্যাধুনিক ‘প্রাইমারি হেলথ চেকআপ সেন্টার’ স্থাপন এবং  জনসমাগম স্থলে ‘ফুড কোর্ট’ তৈরি করা হবে। একইসঙ্গে করপোরেশনের কমিউনিটি হাসপাতালগুলোতে নারীদের মাতৃকালীন এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত সব শিশুর বিনা খরচে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।
ইশতেহারে শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে বলা হয়েছে, স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে নৈশকালীন শিক্ষা কার্যক্রম চালু এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে বিভিন্ন আইটি কোর্স চালু করা হবে। জননিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে সব সড়ক, লেন ও বাইলেন সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসারও প্রতিশ্রুতি দেন ইশরাক। বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের মতামত নিয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ইশতেহারে।
মেয়র নির্বাচিত হলে স্বল্পমেয়াদে প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
ইশ?তেহার ঘোষণার সময় উপ?স্থিত ছি?লেন, বিএন?পি মহাস?চিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, স্থায়ী ক?মি?টির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গ?য়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর জেনারেল অব. রুহুল আলম চৌধুরী, মো. শাহজাহান, জেএস?ডির সভাপ?তি আ স ম আব্দুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির ( কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার।
আরও উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, বিকল্পধারার সভাপতি নুরুল আমিন বেপারী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপি নেতা হাসান জাফির তুহিন, আফরোজা আব্বাস, আব্দুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ , বিএনপির মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status