এক্সক্লুসিভ

দুই কণ্ঠে ২২ প্রার্থীর প্রচারণা

মরিয়ম চম্পা

২৮ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:১৯ পূর্বাহ্ন

ঢাকা সিটি নির্বাচনের অন্তত ২২ জন প্রার্থীর প্রচারণা চলছে তাদের দ্বৈত কণ্ঠে। এর মধ্যে ২২ প্রার্থীর প্রচারে ভোকাল এবং ১২টির মতো নির্বাচনী গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তারা। অনলাইন বিজ্ঞাপনী সংস্থার এই দুইজন হলেন বায়েজিদ ও বন্যা। বায়েজিদ জানান, নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল, হাতপাখা, ওয়াজ-মাহফিল, লটারি, দোকানের বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন কোম্পানির সিমের মেলা, মোবাইলের মেলা, ওয়েলকাম টিউন, স্কুল-কলেজের প্রচারণা থেকে শুরু করে সহস্রাধিক বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দিয়েছি। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলোতে অনেক বেশি ব্যস্ত সময় কাটে আমাদের। সিটি নির্বাচনে একটু চাপ কম থাকে। তারপরেও এখন কাজের অনেক চাপ। সবার সঙ্গে যখন কথা বলি তখন স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা বলি। কিন্তু প্রচারণায় পাবলিক সাধারণ ভয়েস এলাউ (গ্রহণ) করবে না। তখন মনের মাধুরী মিশিয়ে তাদের  মত করে ভোকাল (কণ্ঠ) দিতে হয়। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত ভয়েস, মাইকিং, প্রচার প্রচারণা কাজের প্রচণ্ড চাপ থাকে। এ পর্যন্ত কত কাজ করেছি তা হিসাব করে বলা মুসকিল। এমনও হয় নির্বাচন ছাড়াই এক মাসে এক হাজারের মত ভোকাল (কণ্ঠ) রেকর্ডিং করতে হয়। শুধুমাত্র বর্ষার মৌসুমে তিন মাস বাদে সারা বছরই আমাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। কারণ বর্ষার সময় কোনো মাইকিং প্রচারণার কাজে বাইরে বের হতে পারে না। এখন সিটি নির্বাচন ছাড়াও ওয়াজ মাহফিলের মৌসুম। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের কিছু কাজ করেছি। সামনে চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচন আসছে। তখন তাদের কাজ করতে হবে। অর্থাৎ যে সিজন যেটা ডিমান্ড করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হয়। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রচণ্ড কাজের চাপ থাকে। এসময় স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদিতে ভর্তির কাজ থাকে। এবছর সিটি নির্বাচনে খুব কম কাজ হয়েছে। কারণ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ব্যপক আকারে সারা দেশব্যাপি কাজ হয়। নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীর হয়ে আমরা কাজ করি না। আমাদের কাছে সবাই সমান। যে কোনো দলের প্রার্থী এসে যখন বলে আমাদের একটি ভয়েস বা গান তৈরি করে দেন তখন তার নামে এবং প্রতিকের গুণগান করে তৈরি করে দেই। সবাইকে আমরা সমান প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমাদের স্টুডিও, রেকর্ড, এ্যডিটিং খরচ মিলিয়ে একটি ভোকালের জন্য (কণ্ঠে) একেক ধরনের পারিশ্রমিক নিয়ে থাকি। নির্বাচনের প্রচারণার জন্য প্রতি ভয়েসে পারিশ্রমিক হিসেবে দুই থেকে তিন হাজার টাকা নেয়া হয়। অন্যান্য ভয়েসে আরও কম খরচ হয়। এগুলোতে এক থেকে দেড় হাজার টাকার মত খরচ হয়। এছাড়া একেকটি গানের জন্য তিন হাজার টাকা নিয়ে থাকি।
বায়েজিদ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে যখন কোনো চাকরি পাচ্ছিলাম না তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে এই পেশা বেছে নেই। গত ১১ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত আছি। এ বিষয়ে আমার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। পুরো কাজটিই আমার নিজের প্রচেষ্টায় শুরু করেছি। বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন বিশেষ করে ভোকালিস্ট গাজী মাজহারুল ইসলামের ভয়েস শুনে আকৃষ্ট হই। পরবর্তীতে এক সময় নিজেও ভয়েস দেয়ার চেষ্টা করি। সেদিক থেকে তাকে (মাজহারুল ইসলাম) গুরু বলে মানি। বর্তমানে এটাকেই স্থায়ী পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। ফলে অন্য কোনো পেশায় নিজেকে যুক্ত করিনি। এটা এমন একটি ব্যবসা বা শিল্প যেখানে প্রতিবন্ধকতা নেই বললেই চলে। সখের পাশাপাশি নিজের ব্যবসাটিও চালিয়ে নেওয়া যায়। বর্তমান যুগ প্রচার ও বিজ্ঞাপনের যুগ। প্রচার ছাড়া কোনো কিছুই হয় না। রাজনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য সব কিছুর মূলেই প্রচারণা। সেটা মাইকিং কিংবা অনলাইনে যেভাবেই হোক না কেনো। ফলে এখন পর্যন্ত আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই কাজের মাধ্যমে হাজারো মানুষের কাছে আমার কণ্ঠ পৌঁছাচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে সবাই আমাকে উৎসাহ দেয়। ৩২ বছর বয়সী বায়েজিদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়ায়। তিনি বলেন, ঢাকা এবং সাতক্ষীরায় তাদের নিজস্ব অফিস রয়েছে। মিউজিকের কাজ করা হয় দুবাইতে। অনলাইনে আমরা পুরো কাজটি সম্পন্ন করি। সারা দেশ থেকে অনলাইনের মাধ্যমেই প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রার্থীরা ফোন করে চাহিদা অনুযায়ী প্রচারণার বিজ্ঞাপন তৈরি করতে বলে। আমরা সেভাবেই কাজ করি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status