বাংলারজমিন
পরীক্ষা দেয়া হলো না লামিয়ার
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
২৭ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার, ৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
দক্ষিণ কাঠালিয়া তাজেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল লামিয়া (১৪)। আগামী ৩রা ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু। লামিয়া দক্ষিণ রাওগা গ্রামের জসিম মোল্লার মেয়ে। তিন ভাই বোনের মধ্যে লামিয়া সবার বড়। অত্যন্ত মেধাবী এই শিক্ষার্থী চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও শিক্ষক এবং স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতায় লেখাপড়া চালিয়ে আসছিল। গত শুক্রবার সকালে লামিয়া তার খালা নূপুর বেগমের সঙ্গে গাজীপুর বন্দরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। শনিবার সকালে গাজীপুর থেকে একটি অটোযোগে আমতলী আসে। সকাল ১১টার সময় আমতলী এসে অটোর ভাড়া দিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য ফুটপাথে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। এর মধ্যেই ঘাতক বাসটি ফুটপাথে উঠে লামিয়াসহ ৩ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যুর কারণে লামিয়ার আর পরীক্ষা দেয়া হলো না। একই সঙ্গে ভেঙে গেল দরিদ্র লামিয়ার পরিবারের স্বপ্ন। লামিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে তার পরিবারে, স্কুলে এবং এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রোববার সকালে লামিয়ার মরদেহ উপজেলা ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাঠালিয়া তাজেম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্কুলে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদের এবং স্বজনদের আহাজারিতে উপস্থিত অনেকের চোখ দিয়ে পানি ঝরতে দেখা যায়। এ সময় নূপুরের মা আম্বিয়া বেগম বিলাপ করছিল আর বলছিল ‘মোর মায় নূপুর গ্যাছে কই, হ্যারে আইন্যা দেও’। ‘মোর নাতি নিশাত আর লামিয়া কই হেগো আইন্যা দেও’। এ কথাগুলো বলছে আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। স্বজনহারা শোক ও স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আমতলীর বাতাস। শত শত ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী লামিয়া (১৪)কে চোখের পানিতে শেষ বিদায় জানায়। এভাবে আর কত লামিয়ারা হারিয়ে যাবে? ভেঙে যাবে তিলে তিলে গড়া পরিবারের স্বপ্ন? -এ প্রশ্ন আমতলীবাসীর।