এক্সক্লুসিভ

ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা পাচ্ছেন কূটনীতিক মোয়াজ্জেম আলী, প্রত্নতত্ত্ববিদ এনামুল হক পদ্মশ্রী'তে ভূষিত

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৬ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার, ১২:২৭ অপরাহ্ন

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকারী সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পেয়েছেন। আর প্রত্নতত্ত্ববিদ, লেখক ও বাংলাদেশে জাদুঘর আন্দোলনের পথিকৃৎ ড. এনামুল হক ভূষিত হয়েছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী’তে। ভারতের ৭১তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শনিবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক তথ্য বিবরণীতে পদকের জন্য মনোনিতদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মশ্রী’র পাশাপাশি বেসামরিক  সর্বোচ্চ পদক ‘পদ্মবিভূষণ’ জয়ীদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। এবার ‘পদ্মবিভূষণ’ পেয়েছেন ৭ জন, ‘পদ্মভূষণ’ ১৬ জন এবং ‘পদ্মশ্রী’ পেয়েছেন ১১৮ জন। এর মধ্যে ৩৩ জন নারী। সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৮ জন বিদেশি, অনাবাসী ভারতীয়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক অথবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমন বিদেশি নাগরিক যারা আবার ভারতেই বাস করছেন- তারা রয়েছেন। সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীসহ ১২ জন মরণোত্তর পুরস্কৃত হয়েছেন। সাধারণত প্রতিবছরের মার্চ-এপ্রিলে ভারতের রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে এসব সম্মাননা তুলে দেন। এবারও রাষ্ট্রপতি ভবনে সুবিধাজনক সময়ে সম্মাননায় ভূষিত ব্যক্তি বা তাদের পক্ষে প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ভারতে পাঁচ বছর হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফেরার ১০ দিনের মাথায় সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী গত ৩০ ডিসেম্বর চিকিতসাধীন অবস্থায় (ঢাকায়) ইন্তেকাল করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় এমএসসি ডিগ্রিধারী সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ১৯৬৮ সালে সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস এক্সামিনেশনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। এরপর তিনি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করেন। মিস্টার আলী পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে ভুটান, ইরান ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ওয়াশিংটন, ওয়ারসো, নয়াদিল্লি ও জেদ্দায় বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য কূটনৈতিক জীবনে তিনি সচিব হিসেবে ২০০১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকবিষয়ক সংস্থা-ইউনেস্কো যে স্বীকৃতি দেয়, তা আদায়ের প্রক্রিয়ায় ওই সময় ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে মোয়াজ্জেম আলীর অবদানকে স্মরণীয়।

এনামুল হক: এদিকে পদ্মশ্রী সম্মাননা পাওয়া এনামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্বে স্নাতকোত্তর এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভের পর যুক্ত হন প্রত্নতত্ত্ব গবেষণার কাজে।


কর্মজীবনে এনামুল হক ১৯৬২ সালে ঢাকা জাদুঘরে যোগদান করে ১৯৬৫ সালে অধ্যক্ষ, ১৯৬৯ সালে পরিচালক এবং ১৯৮৩-৯১ মেয়াদে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩-৮৯ মেয়াদে আন্তর্জাতিক জাদুঘর পরিষদের এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সংস্থার সভাপতি ছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নিযুক্ত হন। বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি এবং বার্ষিক জার্নাল অব বেঙ্গল আর্টের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এনামুল হক জাতীয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠা এবং আহসান মঞ্জিলকে জাদুঘরে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণায় অবদানের জন্য ২০১৪ সালে ‘একুশে পদক’, ২০১৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। এছাড়া ২০১২ সালে ভারতের চেন্নাইয়ের ‘রীচ ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড’সহ দেশে-বিদেশে অনেক সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status