এক্সক্লুসিভ

সিলেটের হকার সমস্যার সমাধান খুঁজছেন আরিফ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২২ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৭:২৫ পূর্বাহ্ন

তখন মেয়র ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সিলেটের অন্যতম একটি সমস্যা ছিল হকার সমস্যা। হকারমুক্ত হচ্ছে না সিলেট। আগে রাস্তা তেমন প্রশস্ত ছিল না। ফলে যানজটের অন্যতম কারণ ছিল ফুটপাথ দখল। এই ইস্যুটিকে কাজে লাগান তখনকার বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। হকার উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে তিনি নগরবাসীর নজর কাড়েন। ফলও পেয়ে যান। কিন্তু দুই দফা মেয়র নির্বাচিত হয়ে ৭ বছরের শাসনেও কামরানের মতো হকার নিয়ে একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেটের রাজপথ হকারমুক্ত তো হয়নি বরং হকারদের পরিধি আরো বেড়েছে। আগে রাস্তায় বসতো কাপড় বিক্রেতা হকাররা।

এখন সেটি দখল করেছে মাছ ও সবজি বিক্রেতারা। আগে হকারদের দাপট ছিল কোর্টপয়েন্ট ও সুরমা পয়েন্টকেন্দ্রিক। এখন সেটি বিস্তৃত হয়েছে আম্বরখানা পর্যন্ত ঠেকেছে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গত দুই দিন ধরে রাজপথ হকার উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। পরিকল্পনামতো কাজ না করায় সিলেটে হকার না কমে বরং বেড়েই চলেছে। চলতি মাসের ৮ তারিখ সিলেট সফর করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দর্শক সারিতে বসা ছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি সিলেটের রাস্তাঘাট নিয়ে মন্তব্য করেন। রাস্তায় ময়লা আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকতে দেখেছেন বলে জানান রাষ্ট্রপতি।

তার এই বক্তব্যের পরও দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়নি। বরং ময়লা আবর্জনা নিয়ে ক্ষোভ আছে নগরের মানুষের মধ্যেও। এমপি হওয়ার এক বছরের মাথায় সিলেট উন্নয়নের ফর্মুলা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে একই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা হলে তিনিও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনা করেন। জানান, ‘সিলেটে সব রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। সেটি একটি একটি করে করলে ভালো হতো। মানুষের ভোগান্তি কমতো।’ প্রায় এক বছর আগে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে হকার সমস্যা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আইনজীবীরা। ওই সময় আদালত সিলেটের মেয়র, কোতোয়ালির ওসিকে আদালতে তলব করেন। এরপর থেকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের আদালতপাড়ার সামনের ফুটপাথ থেকে হকারদের উচ্ছেদ করেছিলেন। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদের সামনে থেকেও হকারদের উচ্ছেদ করেন। ‘হকার বসা নিষেধ’- সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এরপরও কাজ হয়নি। দিনের কিছু সময় আদালতপাড়ার সামনে হকাররা না বসলেও দুপুর গড়ালেই ফের হকারদের দখলে চলে যায় পুরো এলাকা। সন্ধ্যা নামলেই কিন ব্রিজ থেকে সিটি পয়েন্ট, পোস্ট অফিসে সামন, জেলরোড, কোর্ট পয়েন্ট থেকে শুরু করে আম্বরখানা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ চলে যায় হকারদের নিয়ন্ত্রণে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের রাস্তার দু’পাশে ড্রেন নির্মাণ করে পরিধি বাড়িয়েছেন। কিন্তু হকাররা রাস্তা দখল করে নেয়ায় কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। নগরীর গার্লস স্কুলের সামনে থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকায় কয়েকশ’ হকার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যবসা করছে। হকাররা জানিয়েছেন, তারা রাস্তায় ব্যবসা করলেও নিয়মিত টাকা দিচ্ছেন। প্রতিদিন ১০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে তাদের টাকা দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্যও তাদের টাকা দিতে হচ্ছে। পুলিশ সহ হকারদের একটি অংশ এই টাকা তুলে। সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদের কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদস্যদের পকেটে যায় ওই টাকা। সিলেটের রাজপথ থেকে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে জানান তারা। এদিকে সিলেটে হকার উচ্ছেদে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঘাম ঝরাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে হকারদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহেই তারা হকার উচ্ছেদে অভিযান চালান। মালামাল আটক করে নিয়ে আসেন। এরপরও হকাররা পিছু হটে না। তারা জানান, রোরবার রাতে বন্দরবাজার এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় হকারদের কাছ থেকে বিক্রির মালামালসহ ২৭টি ভ্যানগাড়ি আটক করা হয়। মালামালের মধ্যে ছিল বিভিন্ন জাতের সবজি, মাছ, ফল, কাপড় ও নানান নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। জব্দ করা এসব ভ্যানগাড়ি সোমবার সকালে নগরভবনে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সকালে নগরভবনের সামনের জায়গায় বুলডোজার দিয়ে ভ্যানগাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এর আগে আটক মালামালগুলো নিলামে বিক্রি করেন সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান। নিলামের ক্রেতাও ছিলেন হকাররাই। নিলাম করে এসব মালামাল প্রায় ২৮ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এরমধ্যে ২৫ টুকরি মাছ ৪০০০ টাকা, ১ ভ্যান কাপড় ২৫৫০ টাকা, ৮ ভ্যান বিভিন্ন জাতের ফল ৫০০০ টাকা, ২৭ ভ্যান বিভিন্ন জাতের সবজি ১৫০০০ টাকা এবং মুলা ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সোমবার রাতে সিলেটের মেয়রের নেতৃত্বে নগরীর চৌহাট্রা এলাকা অভিযান চালিয়ে হকারদের মালামাল আটক করা হয়। সিটি করপোরেশরে গাড়ি দিয়ে হকারদের মালামাল গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সিলেটে হকার উচ্ছেদের জন্য পুনর্বাসনের দাবি দীর্ঘদিনের। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর লালদীঘির পাড় এলাকায় হকারদের জন্য অস্থায়ী ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আগ্রহী হননি হকাররা। তারা রাস্তা ছেড়ে যাননি। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘আমরা ফুটপাথ বড় করছি। রাস্তা বড় হচ্ছে। বিদ্যুতের লাইনসহ সব লাইন ভূগর্ভে যাচ্ছে। সুতরাং এখন হকারদের উচ্ছেদ করতেই হবে। এজন্য ফুটপাথে রেলিং করা হবে। চৌকিদার নিয়োগ করে দেয়া হবে। কেউ যাতে ফুটপাথে না বসতে পারে সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status