প্রথম পাতা

আলোচনায় অবৈধ অস্ত্র উঠতি সন্ত্রাসী

আল আমিন ও শুভ্র দেব

২১ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও উঠতি সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। নির্বাচনের মাঠে যাতে কেউ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনে উঠতি সন্ত্রাসীরা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে সংশ্লিষ্টদের কাছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে 
। পলাতক ও কারাগারে বন্দি বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারেন এমন তথ্য রয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। সূত্রমতে, পেশি শক্তি প্রদর্শনের জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের অনুসারীদের কাছে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নির্বাচনের সময় এসব অস্ত্রের ব্যবহার করা হতে পারে। তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বসে নেই। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। নির্বাচনের আগে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা ধরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাদের গতিবিধিও সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, প্রতিটি নির্বাচনকে ঘিরে সন্ত্রাসীরা নড়ে চড়ে বসে। তারা এই সময়টা তাদের ক্ষমতার জানান দেয়ার চেষ্টা করে। কিছু কিছু প্রার্থীরাও পেশি শক্তি প্রদর্শনের জন্য সন্ত্রাসীদের টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করে থাকেন। ঢাকার বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই দলীয় সমর্থনের বাইরে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে কেউ কেউ প্রার্থীতা করছেন। এসব কিছু প্রার্থীদেরকে কালো টাকা দিয়ে সহযোগীতা করছেন শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) উপ পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, অস্ত্র নিয়ে কেন্দ্র দখল বা প্রার্থী সংশ্লিষ্ট কেউ অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াবে এমনটা এখন আর দেখা যায় না। প্রার্থীদের মধ্যে দলীয় কোন্দল থাকাটা স্বাভাবিক। কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক আছি। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা নিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো প্রার্থী অভিযোগ করেননি। যদি এমন অভিযোগ আমরা পাই তবে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন এমন কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছেন। এসব সন্ত্রাসীদের অনেকেই বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে অনেক আগে থেকেই বিদেশে পলাতক আছেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল সারোয়ার বিন কাশেম মানবজমিনকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রচুর র‌্যাব সদস্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে কাজ করছে। শুধু নির্বাচনের সময় নয় সারা বছর ধরেই আমরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কাজ করি। নির্বাচনে যাতে অবৈধ অস্ত্রের কোনো ব্যবহার না থাকে সেজন্য আমাদের নজরদারি রয়েছে।
উঠতি সন্ত্রাসীদের নিয়ে শঙ্কা: পুলিশ ও র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৮ টি অঞ্চলে আট জন উঠতি কিশোর সস্ত্রাসী নজরদারিতে রয়েছে। তারা হলো, কলাবাগানের গলাকাটা সুমন, রামপুরার লাংড়া সবুজ, মিরপুরের ভাংরি আসাদ, যাত্রাবাড়ির চোপড়া আজিজ, তেজঁগাও এর ছোটকা বকুল, রমনার ক্যাইলা বাবুর সহযোগী ছোট্র বাবু, মতিঝিলের ডাকাত জয় ও উত্তরায় কানা আজিজ। তাদের ধরতে মাঠে কাজ করছে গোয়েন্দারা। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার মানবজমিনকে জানান, র‌্যাব আন্ডার ওয়ার্ল্ডকে অনেক আগেই চুর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। এলাকা উঠতি কিশোর সস্ত্রাসীদের প্রতি আমরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল আছে। শেষ পর্যন্ত আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো বলে তিনি আশা ব্যক্তি করেন। র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ ও বিভিন্ন উৎসব পার্বন ও যে কোন নির্বাচনে সক্রিয় হয়ে উঠে আন্ডারওয়াল্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী উঠতি কিশোর সস্ত্রাসীরা। তারা এলাকা কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি শুরু করে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে যে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে গত ১৪ই জানুয়ারি একটি মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। সেখানে সে নিজেকে শীর্ষ সস্ত্রাসী প্রকাশের সহযোগী হিসাবে দাবি করে। ওই ক্ষুদে বার্তাটি হলো ‘ নির্বাচন করছিস, চাঁদা দে, নইলে জীবন দে? ওই বার্তা পেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী ভীত হয়ে যান। তড়িগড়ি করে তিনি নিকটস্থ থানায় পুলিশকে মৌখিকভাবে জানান। কোন জিডি করেননি জানাজানি হওয়ার ভয়ে। পুলিশ ও র‌্যাব সেই ওই ক্ষুদে বার্তা প্রদানকারীকে খুঁজছে। তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর তাদের বেশি টার্গেট। এছাড়াও যাদের বিভিন্ন কারখানা আছে তাদেরও চিরকুঠ পাঠিয়ে তারা চাঁদা দাবি করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status