বিশ্বজমিন
এশিয়ার দুই কমিউনিস্ট রাষ্ট্রকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করবে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা
অনিম আরাফাত
১৮ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৮:৪২ পূর্বাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় কাঁপছে মধ্যপ্রাচ্য। ফলে যেকোনো সময় অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে অঞ্চলটি- এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইস্যুটি নিশ্চিতভাবেই প্রভাবিত করবে এশিয়ার দুই মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী ও কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চীন ও উত্তর কোরিয়াকে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রভাব দু’দেশের জন্য একই রকম হবে না। চীনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন অর্থনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে উত্তর কোরিয়ার জন্য এটি সৃষ্টি করেছে কৌশলগত সুবিধা।
ইরানের আল-কুদস ফোর্সের প্রধান ও দেশটির দ্বিতীয় শক্তিধর ব্যক্তি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে করে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে এবং চীনের জন্য সৃষ্টি করেছে নতুন উদ্বেগের। দেশটি তার প্রয়োজনীয় তেলের জন্য পুরোপুরি মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল। অপরদিকে, অঞ্চলটির তেলের সব থেকে বড় ক্রেতাও চীনই।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীন যত তেল আমদানি করে থাকে তার মধ্যে সব থেকে বেশি আসে সৌদি আরব ও ইরাক থেকে। এই দুই দেশ থেকে প্রতিদিন এক লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি হয় চীনে। গত বছরের অক্টোবর মাসে হওয়া একটি চুক্তির পর থেকে নিয়মিত এই রপ্তানি চলছে। এদিকে ইরানের অপরিশোধিত তেলের সব থেকে বড় ক্রেতাও চীনই। যদিও গত বছর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরান থেকে আমদানি অনেক কমে এসেছে। নভেম্বর মাসে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি ইরান থেকে মোট সাড়ে পাঁচ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। যেখানে চীনের কাস্টম ডেটা অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে এই পরিমাণটা ছিল প্রায় ৩০ লাখ টন।
অপরদিকে, আরেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার জন্য ইস্যুটি অর্থনৈতিক নয় বরং রাজনৈতিক। কাসেম সোলাইমানি হত্যাকে পিয়ংইয়ং বিশ্বজুড়ে শত্রুভাবাপন্ন শাসকদের উৎখাতে মার্কিন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখবে। ফলে দেশটির কাছে তার পরমাণু কার্যক্রম আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। স্ট্র্যাটেজিস্টরা বলছেন, এই ঘটনার পর উত্তর কোরিয়া আবার পুরোদমে তার পরমাণু কার্যক্রম চালু করতে উৎসাহী হয়ে উঠবে।
গত সপ্তাহে চীনের একটি রাষ্ট্র পরিচালিত ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সামপ্রতিক পদক্ষেপের কঠিন সমালোচনা করা হয়। একইসঙ্গে অভিযোগ করা হয়, চীনের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই মধ্যপ্রাচ্যে একটি যুদ্ধের আয়োজন করছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্যাবলয়েডটি বলে, যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো উপায়ে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে থামিয়ে দিতে চায়। এমনকি বেইজিংকে একটি যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন। এ জন্য ইরানের সঙ্গে একটি সংঘাতে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর ওপর তেলের জন্য নির্ভর করে চীন।
সমপ্রতি উপসাগরীয় অঞ্চলে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়া করেছে চীন। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর প্রশাসন সোলাইমানি হত্যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন সমালোচনা করেছে। ভারিস্ক ম্যাপলেক্রফটের এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক কাহো ইউ বলেন, চীন চাইবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের উত্তেজনা পরিহার করে চলতে। কারণ দেশটির কাছে এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ শিথিল করা।
২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। এতে চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত বছরের শেষ তিন মাসে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। ১৯৯২ সালের পর দেশটিকে এত কম প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে একতরফা সাফল্য পাওয়া বেইজিং এর জন্য অসম্ভব।
এরমধ্যে ইরান ইস্যু ওয়াশিংটনের সঙ্গে দর কষাকষিতে বেইজিং এর অবস্থানকে আরো দুর্বল করে তুলতে পারে।
এদিকে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা স্বাভাবিকভাবেই উত্তর কোরিয়াকে উদ্বিগ্ন করে তুলবে। ২০১৮ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলো সবাই আশঙ্কা করেছিল যে এটি উত্তর কোরিয়াকে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে অনুৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে কোনো আলোচনাই সফল হয়নি। কিম জং উন তখন নতুন করে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরও উত্তর কোরিয়া কয়েক দফা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার আঞ্চলিক মিত্রদের হুঁশিয়ারি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে। সোলাইমানি হত্যা নিশ্চিতভাবেই দেশটিকে আবারো নিজের শক্তি বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করে তুলবে।
সিউলের ইউহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সমপর্ক বিভাগের প্রফেসর লিফ-এরিক এসলে বিষয়টিক ব্যাখ্যা করে বলেন, ইরানের একজন প্রধান নেতাকে হত্যা পিয়ং ইয়ংকে তার পরবর্তী হুঁশিয়ারির মাত্রা নির্ধারণে সাহায্য করবে। দেশটি এখন চাইলেই সোলাইমানি হত্যাকে নিজের পরমাণু কার্যক্রমকে বৈধ করতে ব্যবহার করতে পারবে। একইসঙ্গে নিজেও টিকে থাকার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু অস্ত্র ধরে রাখতে চাইবে।
ইরানের আল-কুদস ফোর্সের প্রধান ও দেশটির দ্বিতীয় শক্তিধর ব্যক্তি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে করে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে এবং চীনের জন্য সৃষ্টি করেছে নতুন উদ্বেগের। দেশটি তার প্রয়োজনীয় তেলের জন্য পুরোপুরি মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল। অপরদিকে, অঞ্চলটির তেলের সব থেকে বড় ক্রেতাও চীনই।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীন যত তেল আমদানি করে থাকে তার মধ্যে সব থেকে বেশি আসে সৌদি আরব ও ইরাক থেকে। এই দুই দেশ থেকে প্রতিদিন এক লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি হয় চীনে। গত বছরের অক্টোবর মাসে হওয়া একটি চুক্তির পর থেকে নিয়মিত এই রপ্তানি চলছে। এদিকে ইরানের অপরিশোধিত তেলের সব থেকে বড় ক্রেতাও চীনই। যদিও গত বছর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরান থেকে আমদানি অনেক কমে এসেছে। নভেম্বর মাসে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি ইরান থেকে মোট সাড়ে পাঁচ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। যেখানে চীনের কাস্টম ডেটা অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে এই পরিমাণটা ছিল প্রায় ৩০ লাখ টন।
অপরদিকে, আরেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার জন্য ইস্যুটি অর্থনৈতিক নয় বরং রাজনৈতিক। কাসেম সোলাইমানি হত্যাকে পিয়ংইয়ং বিশ্বজুড়ে শত্রুভাবাপন্ন শাসকদের উৎখাতে মার্কিন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখবে। ফলে দেশটির কাছে তার পরমাণু কার্যক্রম আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। স্ট্র্যাটেজিস্টরা বলছেন, এই ঘটনার পর উত্তর কোরিয়া আবার পুরোদমে তার পরমাণু কার্যক্রম চালু করতে উৎসাহী হয়ে উঠবে।
গত সপ্তাহে চীনের একটি রাষ্ট্র পরিচালিত ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সামপ্রতিক পদক্ষেপের কঠিন সমালোচনা করা হয়। একইসঙ্গে অভিযোগ করা হয়, চীনের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই মধ্যপ্রাচ্যে একটি যুদ্ধের আয়োজন করছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্যাবলয়েডটি বলে, যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো উপায়ে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে থামিয়ে দিতে চায়। এমনকি বেইজিংকে একটি যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন। এ জন্য ইরানের সঙ্গে একটি সংঘাতে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর ওপর তেলের জন্য নির্ভর করে চীন।
সমপ্রতি উপসাগরীয় অঞ্চলে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়া করেছে চীন। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর প্রশাসন সোলাইমানি হত্যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন সমালোচনা করেছে। ভারিস্ক ম্যাপলেক্রফটের এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক কাহো ইউ বলেন, চীন চাইবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের উত্তেজনা পরিহার করে চলতে। কারণ দেশটির কাছে এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ শিথিল করা।
২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। এতে চীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত বছরের শেষ তিন মাসে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। ১৯৯২ সালের পর দেশটিকে এত কম প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে একতরফা সাফল্য পাওয়া বেইজিং এর জন্য অসম্ভব।
এরমধ্যে ইরান ইস্যু ওয়াশিংটনের সঙ্গে দর কষাকষিতে বেইজিং এর অবস্থানকে আরো দুর্বল করে তুলতে পারে।
এদিকে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা স্বাভাবিকভাবেই উত্তর কোরিয়াকে উদ্বিগ্ন করে তুলবে। ২০১৮ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলো সবাই আশঙ্কা করেছিল যে এটি উত্তর কোরিয়াকে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে অনুৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে কোনো আলোচনাই সফল হয়নি। কিম জং উন তখন নতুন করে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরও উত্তর কোরিয়া কয়েক দফা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার আঞ্চলিক মিত্রদের হুঁশিয়ারি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে। সোলাইমানি হত্যা নিশ্চিতভাবেই দেশটিকে আবারো নিজের শক্তি বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করে তুলবে।
সিউলের ইউহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সমপর্ক বিভাগের প্রফেসর লিফ-এরিক এসলে বিষয়টিক ব্যাখ্যা করে বলেন, ইরানের একজন প্রধান নেতাকে হত্যা পিয়ং ইয়ংকে তার পরবর্তী হুঁশিয়ারির মাত্রা নির্ধারণে সাহায্য করবে। দেশটি এখন চাইলেই সোলাইমানি হত্যাকে নিজের পরমাণু কার্যক্রমকে বৈধ করতে ব্যবহার করতে পারবে। একইসঙ্গে নিজেও টিকে থাকার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু অস্ত্র ধরে রাখতে চাইবে।