শেষের পাতা

একান্ত মুহূর্তের ছবি দিয়ে বন্ধুর প্রেমিকাকে ব্ল্যাকমেইল

রুদ্র মিজান

১৮ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

রাত সোয়া ৯টা। ফেসবুক ব্যবহার করছিলেন। হঠাৎ একটি ছবি পাঠানো হয় অপরিচিত আইডি থেকে। ছবিতে চোখ রাখতেই পুরো শরীর কেঁপে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীর। ছবিটি তারই। প্রেমিকের সঙ্গে একান্ত মুহূর্তের ছবি। অপরিচিত আইডি থেকে হুমকি দেয়া হয়েছে, ‘এ রকম অনেক ছবি রয়েছে। ছবিগুলো ভাইরাল করে দেয়া হবে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে।’ দু’চোখে অন্ধকার দেখতে পান ওই তরুণী। ছবিগুলো তার প্রেমিকের কাছে ছিলো। প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক নেই প্রায় দু’বছর। তারপরও প্রেমিক এমন করার কথা না। তাহলে কী ছবিগুলো বেহাত হলো? এরকম নানা প্রশ্ন তরুণীর মনে। ছবিগুলো ভাইরাল হলে আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতদের সামনে মুখ দেখাবেন কী করে। খবর ছড়িয়ে যাবে সর্বত্র। গ্রামে, শহরে, দেশে-বিদেশে। ঘামে ভিজে যাচ্ছে পুরো শরীর। অস্থির তরুণী। এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যান ওই তরুণী। শেষ পর্যন্ত সেই অপরিচিত আইডি ব্যবহারকারী যুবককে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে ব্ল্যাকমেইলের পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছে সে। গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম কামরুল হাসান শোভন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী বাদি হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। সূত্রে জানা গেছে, মিরপুরের বিসিআইসি কলেজে ছাত্রী থাকাবস্থায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে এক বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে তরুণীর। দু’জনে বেড়াতে যেতেন বিভিন্নস্থানে। কারণে-অকারণে ছবি ধারণ করতেন। এরমধ্যে ছিলো একান্ত মুহূর্তের কিছু ছবি। ২০১৭ সালের শেষের দিকে তাদের প্রেমের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। এই তরুণী এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। গত বছরের ১৭ই নভেম্বর রাতে হৃদয় খান নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে তাকে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। সঙ্গে একান্ত মুহূর্তের ছবি। দাবি করা হয় চাঁদা।

বাধ্য হয়েই মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তিনি। কিন্তু তাতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ওই আইডি ব্যবহারকারী। ক্ষিপ্ত হয়ে তরুণীর কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। সেইসঙ্গে আবারও টাকা দাবি করে। হৃদয় খান আইডি’র ওই ব্যবহারকারী জানায় তার কাছে আরও অনেক ছবি রয়েছে। যা ছড়িয়ে দিলে সমাজে মুখ দেখানো যাবে না। এরকম নানা হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে একে একে সব ছবিই ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। তরুণী কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ঘনিষ্ঠদের পরামর্শে ছুটে যান সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগে। গত বছরের ৩০শে ডিসেম্বর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

এরমধ্যেই বারবার হৃদয় খান নামক আইডি থেকে ম্যাসেজ পাঠানো হচ্ছিলো। অভিন্ন হুমকি, ‘টাকা দিবি, নইলে ছবি ভাইরাল করা হবে’। বিকাশ নম্বর চান তরুণী। বাধ্য হয়েই গত ১লা জানুয়ারি ওই নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠান তরুণী। কিন্তু এতে তৃপ্ত হয়নি ওই আইডি ব্যবহাকারী। আবার টাকা দাবি করে। গত ৯ই জানুয়ারি পাঠানো হয় আরও কিছু টাকা। এবার সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলামের সহায়তায় অনুসন্ধান করে ‘হৃদয় খান’ আইডির ব্যবহারকারীকে সনাক্ত করা হয়। ওই দিনই সহকারী পুলিশ কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করেন সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা। তরুণীর পাঠানো টাকা উত্তোলন করতে ঢাকার নবাবগঞ্জের গালিমপুর বাজারের একটি বিকাশের দোকানে যায় এক যুবক। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা। এসময় তার মোবাইলফোনে লগইন অবস্থায় ফেসবুকে ‘হৃদয় খান’ আইডি পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে জানায়, তার নাম কামরুল হাসান শোভন (২৪)।

এ বিষয়ে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শোভন স্বীকার করেছে ওই ছবিগুলো তার বন্ধুর ফোন থেকে গোপনে সংগ্রহ করেছে। শোভনের বন্ধুর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই তরুণীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। তবে ওই বন্ধু এ বিষয়ে অবগত না। গ্রেপ্তারের পর একদিনের রিমান্ডে নিয়ে শোভনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান তিনি। গ্রেপ্তার কামরুল হাসান শোভন ঢাকার নবাবগঞ্জের সূর্যখালী গ্রামের মোস্তফা কামালের পুত্র।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status