এক্সক্লুসিভ

স র জ মি ন ঢাকা দক্ষিণ ৯ নং ওয়ার্ড

যে কারণে এখানে অন্যরকম লড়াই

আলতাফ হোসাইন

১৮ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৭:৪০ পূর্বাহ্ন

ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত রাজধানীর মতিঝিল ক্লাব পাড়া। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল ও আশেপাশের এলাকা নিয়ে ওয়ার্ডটি গঠিত। গত বছর ফকিরাপুল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ এই এলাকায় অবস্থিত ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো হয়। সে সময় ক্যাসিনো পরিচালনায় যুবলীগ নেতা ও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।। প্রমাণ মেলে তিনি ঢাকায় ক্যাসিনো হোতা দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে সাঈদ আত্মগোপনে যান। অবশ্য আগেই তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছিলেন। এরপর থেকে দীর্ঘদিন সিটি কর্পোরেশনের বৈঠকে অংশ নেননি। এ কারণে তাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণ করে। এবারের নির্বাচনেও তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তবে এবার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাঈদ। সেই সঙ্গে সাঈদের স্ত্রী ফারহানা আহম্মেদ বৈশাখীও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দুইজনই প্রতীক নিয়েছেন। সাঈদ পেয়েছেন লাটিম প্রতীক, বৈশাখী পেয়েছেন ঠেলাগাড়ী। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, সাঈদের কর্মকান্ডে এমনিতেই দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় আবার তিনি ও তার স্ত্রী একই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল ও এলাকাবাসীর সঙ্গে তামাশা করছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাঈদের দেশে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেলেও তিনি দেশের বাইরে থেকেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। একই সঙ্গে এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। এসব নিয়ন্ত্রণে এখনো সক্রিয় তার বাহিনী।

নির্বাচনে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। ঘুড়ি প্রতীকে ইতিমধ্যেই তিনি প্রচারণায় নেমেছেন। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেন আনু ভোটযুদ্ধে নেমেছেন রেডিও প্রতিক নিয়ে। এছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে আসলাম আহমেদ ব্যাডমিন্টন ও শওকত আলী ভূঁইয়া টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সবমিলে এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৬ জন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, আমরা চাই ওয়ার্ডে নতুন কোন ভালো কমিশনার নির্বাচিত হয়ে আসুক। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী দু’জনকেই আমরা ক্লিন ইমেজের জানি। তাদের একজন নির্বাচিত হলেই আমরা সন্তুষ্ট।

আওয়ামী লীগ মো. মোজাম্মেল হক বলেন, এলাকার মানুষ আমার পক্ষে রয়েছে। ভোটে এর প্রমাণ দেব। ষড়যন্ত্রকারীরা যতো ষড়যন্ত্রই করুক না কেন জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে বিজয় এনে দেবে। কারণ মানুষ আর কোন সন্ত্রাসীকে এলাকায় দেখতে চায় না। মানুষ পরিবর্তন চায়। অবশ্যই তারা বিতর্কিত কাউকে নির্বাচিত করবে না। আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এলাকায় আমার ক্লিন ইমেজ রয়েছে। আমি একজন পরিছন্ন মানুষ, পরিচ্ছন্নভাবেই রাজনীতি করে আসছি। সারাজীবন রাজনীতি করে আসছি নিজের জন্য কিছু করিনি। মানুষের জন্য কাজ করেছি। মানুষের জন্যই কাজ করে যাবো।

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে নানা শঙ্কা কাজ করছে। তারা কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে ভয় কাজ করছে। ইভিএম নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, ইভিএম দিয়েও নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হলে একটি সুন্দর পরিবেশ দরকার, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। সে পরিবেশ বর্তমানে অনুপস্থিত। নির্বাচন কমিশন সেটা নিশ্চিত করলেই কেবল সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে আমাদের জয় নিশ্চিত।স্বামী-স্ত্রীর একই পদে প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সাঈদপত্নী ফারহানা বলেন, এলাকাবাসীর চাপে আমি নির্বাচন করছি। আমার স্বামীও মনোনয়নপত্র নিয়েছে। একই ওয়ার্ডে স্বামী-স্ত্রীর ভোট যুদ্ধ বলতে পারেন। কিন্তু তার বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। উনি ভোট করবে না, উনার প্রতীক কে নিয়েছে আমি সে খবরও রাখিনি। স্বামী সাঈদ কোথায় আছেন, তাও জানেন না বলে দাবি করেন ফারহানা আহম্মেদ বৈশাখী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status