এক্সক্লুসিভ

ঢাকা দক্ষিণ: ২১ নং ওয়ার্ড

নতুন-পুরনোর লড়াই

আলতাফ হোসাইন

১৬ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৮:১০ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে রয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় জাদুঘরের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। শাহবাগ থেকে শুরু করে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকা নিয়ে গঠিত এই ওয়ার্ড। ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের পাশাপাশি এই এলাকায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল। শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও রয়েছে আবাসন ব্যবস্থা। ঢাকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগার রয়েছে এই ওয়ার্ডে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, বৃটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি অন্যতম। আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডে লড়াই হবে নতুন আর পুরনোর মধ্যে। আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ। লাটিম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। প্রচারণার অংশ হিসেবে তার ওয়ার্ডকে ঘিরে নিয়েছেন বেশকিছু পরিকল্পনা। এখানকার অধিবাসীদের চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে অনেকটা ভিন্ন আঙ্গিকে ওয়ার্ডটিকে সাজাতে চান আসাদ। এ লক্ষ্যে তিনি প্রণয়ন করেছেন তার নির্বাচনী ইশতেহার ‘স্বপ্নযাত্রা’। নির্বাচিত হলে ‘ক্লিন ২১’ নামে একটি অ্যাপস তৈরি করতে চান। যেখানে এলাকার মানুষ কোথাও অপরিচ্ছন্নতা দেখলেই ছবি তুলে অ্যাপসে আপলোড করতে পারবেন। এরপর সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী গিয়ে পরিষ্কার করবেন। আসাদ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের পদও পেয়েছেন। সর্বশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী সাবেক কমিশনার হাবিবুল্লাহ হাবিব।
মানবজমিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আসাদুজ্জামান জানালেন, তার বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা। বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। এ এলাকার প্রতিটি অলি-গলি আমার ভালো করে চেনা এবং জানা। পাশাপাশি এ এলাকার প্রতিটি সমস্যাও আমার চোখে দৃশ্যমান। এ ওয়ার্ডটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখানকার অধিবাসীরা অনেক ক্ষেত্রে তাদের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের জনদুর্ভোগ-দুর্দশা আমাকে ভাবিয়ে তুলে। এজন্য আমি এ ওয়ার্ডকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মাদকমুক্ত পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড হিসেবে গড়তে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমার নির্বাচনী ইশতেহারের নাম ‘স্বপ্নযাত্রা’। নির্বাচিত হলে এ ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে চাই। তিনি বলেন, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, নারীদের জন্য নিরাপত্তা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ওয়ার্ড গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমি ‘স্বপ্নযাত্রা’ ইশতেহার দিয়েছি। এছাড়া গত বছর আমি ডেঙ্গু সমস্যায় কাজ করেছি। টানা ১৫ দিন মশকনিধনের ওষুধ স্প্রে করেছি। ৪০ জনের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দলও গঠন করেছিলাম। আমি নির্বাচিত হলে এব্যাপারে আমার আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচিত হলে এ ঢাবি ক্যাম্পাসের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। ছিনতাই রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেব। এই এলাকাটি মূলত শিক্ষিত মানুষের বসবাস বেশি। এছাড়া প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরাও ঢাবিতে আসেন। তাই পুরো এলাকা শৈল্পিক ও নান্দনিকভাবে সাজানোর ইচ্ছা রয়েছে। রাতের ক্যাম্পাসকে আরও দৃষ্টিনন্দন করতে লাইটিংয়ের মাধ্যমে বড় বড় গাছগুলোকে আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করবো। এছাড়া ক্যাম্পাসের দেয়ালের আশপাশে যাতায়াতকারীরা যাতে মলমূত্র ত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য সেখানে বাহারি ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করে শাহবাগ ও নীলক্ষেত এলাকার যানজট নিরসনে কাজ করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক নির্মূলেও রয়েছে তার বিশেষ পরিকল্পনা। তিনি বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নতুন এসে একধরনের লাগাম ছাড়া হয়ে যায়। এতে তারা বিভিন্ন কারণে মাদকাশক্ত হয়ে পড়ে। এটা নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় কাজ করবো। যাতে বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়াতে মাদক নামের কোন কিছু না থাকে। এজন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা মাঝে মধ্যে মাদক বিরোধী বিভিন্ন কাউন্সিল, সভা, সেমিনার করবো। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মানিত লোকজনকে নিয়ে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করবো।
আসাদুজ্জামানের বিপরীতে এবার ভোটের মাঠে লড়ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হাবিবুল্লাহ হাবিব। তার প্রতীক ঘুড়ি। তিনি ১৯৯৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একটানা এই ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন। তার চোখে এই ওয়ার্ডে আপাতত কোন সমস্যা নেই। দরকার শুধু একটি কমিউনিটি সেন্টার। তিনি বলেন, এলাকার অনেক কাজ আমার হাত দিয়ে হয়েছে। এলাকার সবধরনের উন্নয়নমূলক কাজে জনগণ আমাকে পেয়েছে। এ এলাকায় আপাতত কোন সমস্যা নেই। তবে একটি কমিউনিটি সেন্টারের খুব দরকার। নির্বাচিত হলে একটি কমিউনিটি সেন্টার করার চেষ্টা করবো। মশার উপদ্রব নিয়ে হাবিব বলেন, এটা আসলে পুরো ঢাকার সমস্যা, এর দায়িত্ব সরাসরি মেয়রের। তবে আমি নির্বাচিত হলে মেয়র যদি আমাকে সহযোগিতা করেন তাহলে মশা নিধনের ব্যবস্থাও আমি করবো। সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভোটারদের কাছে গিয়ে মনে হলো তারা খুব সংশয়ে আছেন। ভোট দিতে পারবেন কি না? নির্বাচন কেমন হবে? সুষ্ঠু হবে কি না? ভোট দিলে সেটি সঠিকভাবে কাউন্ট হবে কি না? এমনটা ভেবে ভোটাররা ভয় পাচ্ছেন। আমি তাদেরকে বুঝাই যেন তারা ভোট কেন্দ্রে যায়, তবুও তারা ভয় পাচ্ছেন। এরপরও আমরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও আমার লোকজনের ওপর হুমকি ধামকি আসছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status