প্রথম পাতা
টাকার সিন্দুকের সেই দুই ভাই গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার
১৪ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন
শুদ্ধি অভিযান চলার সময় কয়েক কোটি টাকা ও বিপুল স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছিল তাদের সিন্দুক থেকেই। ক্যাসিনোর কারবার করে এত অর্থকাড়ির মালিক হওয়া দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়া গা ঢাকা দিয়েছিলেন গ্রেপ্তার এড়াতে। চেষ্টা করেছিলেন বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হয়নি। সেই অভিযানের সাড়ে তিন মাস পর তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। সিআইডির ডিআইজি (অর্গাইজড ক্রাইম) ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের গ্রেপ্তারের তথ্য জানান। তিনি বলেন, সোমবার ভোররাতে অভিযান চালিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে এনু ও রুপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা নগদ প্রায় ৪০ লাখ টাকা, ১২টি মোবাইল ফোন, বাড়ির দলিলপত্র এবং ব্যাংকের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২২টি বাড়ি ও জমির দলিল, পাঁচটি গাড়ির কাগজ এবং ৯১টি ব্যাংক হিসেবে ১৯ কোটি টাকার কাগজপত্র পেয়েছে। এবং তাদের ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করা হয়েছে। ব্রিফিংয়ে ডিআইজি ইমতিয়াজ বলেন, ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শুরুর দিকে গত বছরের ২৫শে সেপ্টেম্বর এনু-রুপন ও তাদের দুই সহযোগীর বাসা থেকে ৫ কোটির বেশি টাকা, ৮ কেজি স্বর্ণ (৭০০ ভরি) ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও ওয়ারী থানায় ৭টি মামলা হয়। ওই সময় এনু-রুপন এবং তাদের দুই সহযোগী হারুন অর রশিদ ও আবুল কালাম গা ঢাকা দেন। মামলাগুলোর মধ্যে মানি লন্ডারিং আইনে করা চারটি মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। অভিযান ?শুরুর পর তারা কক্সবাজারে পালিয়ে যান। সেখান থেকে মিয়ানমার অথবা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন। না পেরে তারা কেরাণীগঞ্জে চলে আসেন। তাদের কর্মচারীর বাসায় তারা এতদিন অবস্থান করছিলেন। এসময় তাদের কাছে নগদ প্রায় ৪৬ লাখ টাকা ছিল। তারা ইতোমধ্যে ভুয়া পাসপোর্ট করে ভারত হয়ে অন্য দেশে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেনি। আদালতে পাঠিয়ে তাদের রিমান্ডে আনা হবে বলে জানায় সিআইডি। তদন্তে নতুন ডাইমেনশন আসবে। এদের পেছনে কারা মূল হোতা হিসেবে কাজ করেছে তা বেরিয়ে আসবে। মূলতঃ নেপালিদের মাধ্যমে তারা ক্যাসিনোর আধুনিক সরঞ্জাম ঢাকায় নিয়ে আসে। তাদের যত সম্পত্তি, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি সবই ব্ল্যাক মানির মাধ্যমে অর্জন করা। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, এনামুলের আয়কর নথি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তার বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই। তিনি ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ উপায়ে আয় করা অর্থ দিয়ে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি অবৈধ আয়ের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য আছে। অন্যদিকে, এনামুলের ভাই রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুদকের আরেক সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। মামলার এজাহারে বলা হয়, রূপন ভূঁইয়া অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নামে-বেনামে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এনু এবং রুপন ভুঁইয়ার ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত দলিলপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, পুরান ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় এনু ও রুপনের নামে একের পর এক হিসাব খোলা হয়। সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও স্ট্যান্ডান্ড চার্টার্ড ব্যাংকে। এদিকে, এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা করেছে। গত ২৩শে অক্টোবর সংস্থাটির ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। দুই ভাইয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করার ১ মাস পর ওই মামলা করে দুদক। এর আগে র্যাব তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও অস্ত্র আইনে তিন থানায় ৭টি মামলা করে।