ঢাকা সিটি নির্বাচন- ২০২০

স র জ মি ন ঢাকা দক্ষিণ ২৪ নং ওয়ার্ড

ভোটারদের আগ্রহ কম প্রার্থীরা প্রচারণায়

আলতাফ হোসাইন

১১ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৭:৩১ পূর্বাহ্ন

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের হাওয়া বইছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডও-এর বাইরে নয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আপাতত ঘরোয়া বৈঠকের মধ্যেই রয়েছে প্রার্থীদের কার্যক্রম। প্রতীক পেলেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামবেন তারা। এই ওয়ার্ডটি ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) এর লালবাগ থানার অন্তর্ভুক্ত। লোকসংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে এটি লালবাগ থানার সবচেয়ে বড় ওয়ার্ড। আয়তন প্রায় ১১৮ একর। এই ওয়ার্ডে বসবাস করছে প্রায় ২ লাখেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে ভোটার সংখ্যা ৫২ হাজার। ওয়ার্ডটি ঘনবসতিপূর্ণ ও ছোটখাটো সরু গলিতে ঠাসা। মোগল স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন লালবাগ কেল্লার পাশ ঘেঁষে শহীদ নগর, আমলীগোলা, জগন্নাথ সাহা রোড, বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা নিয়ে ১০ টি পাড়া-মহল্লা রয়েছে এ ওয়ার্ডে। এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা নিরাপদ পানি। আসন্ন নির্বাচনে এ ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে একজন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকন। যিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ সভাপতি। এই ওয়ার্ড থেকেই তিনি দুই বার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রধান প্রতিন্দ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ। যিনি বর্তমান কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা মীর মোশাররফ হোসেন বিক্রম ছিলেন, এই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর। তিনি ১৪ মাস আগে মৃত্যুবরণ করার পর ওয়ার্ডে উপনির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে তিনি জয়ী হন। এছাড়া এবারের নির্বাচনে লড়ছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মিয়া।
সরজমিন দেখা যায়, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কম। নির্বাচন নিয়ে অনেকে কথা বলতে চান না। যারা কথা বলেছেন, তারা চান ভোট কেন্দ্রের সুষ্ঠু পরিবেশ। যাতে তারা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন। তাদের অভিযোগ, ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে মারামারি হয়। সন্ত্রাসী আর পুলিশ সেখানে একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা বলেন, ভোট কেন্দ্রে থাকবে সুন্দর পরিবেশ। যাতে সবাই নির্ভয়ে ভোট দিতে যেতে পারে। অথচ এমন পরিবেশ হয় যে, সেখানে ভোটাররা যেতেই ভয় পান। তাই সুষ্ঠু পরিবেশে যেন এবার ভোট দেয়া যায় সেটাই চান তারা।
অন্যদিকে, প্রার্থীরা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রচারণা শুরুর আগে তারা ঘরোয়াভাবে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তবে মাঝে মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে তারা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, দোয়া চাচ্ছেন এলাকাবাসীর কাছে। আচরণবিধি মেনেই তারা এসব করছেন বলে জানান প্রার্থীরা। তবে প্রচারণা শুরুর আগেই হুমকি ধামকির অভিযোগ করছেন বিএনপি সমর্থিত পার্থী। পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তার। প্রচারণার কাজ ঠিকভাবে করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। ইভিএম নিয়ে রয়েছে তার বেশি আপত্তি। তিনি এটাকে কারচুপির নতুন কৌশল হিসেবে দেখছেন। সবমিলিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে তাদের মনে আস্থার সংকট রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এসব আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে জানান। দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও তা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান কোয়েল ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের দেলোয়ার মিয়া এখন পর্যন্ত মাঠে আছেন। শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবেন বলে আশা মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদের। তবে দেলোয়ারকে নিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোশাররফ হোসেন বললেন ভিন্ন কথা। তার অভিযোগ, আচরণ বিধি অমান্য করে মিছিল মিটিংসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দেলোয়ার মিয়া।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকন বলেন, প্রচারণা শুরুর আগেই আমাদের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। সেজন্য আমরা শঙ্কায় আছি। ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে সবারই শঙ্কা আছে। সুষ্ঠুভাবে আমরা প্রচারণা চালাতে পারবো কি না তা নিয়েই আপাতত আমাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। নেতাকর্মীরা ভয়ে আছেন। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারে সে শঙ্কা আমাদের রয়েছে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি এই এলাকার সাবেক কমিশনার। এলাকায় আগে নৌকা চলতো। পরে আমি রাস্তা করে দিয়েছি। এলাকার যতো উন্নয়ন সব আমার হাত দিয়ে হয়েছে। ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল, কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছি। এছাড়া দু’টি পানির পাম্প ও দু’টি মিনি স্টেডিয়াম করেছি। আমার হাতে করা এমন অনেক উন্নয়ন দৃশ্যমান রয়েছে।
তিনি বলেন, ১০ তারিখের পর মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের প্রচারণা শুরু করবো।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রাার্থী মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে বলেন, আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু দেখে বাছবিচার করে, পছন্দ করে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। বর্তমানে আমি কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছি। সুতরাং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে আসছে এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে। তাদেরকে আমি ভয় পাচ্ছি না। কারণ আমাকে জনগণ পছন্দ করে। তারা আমাকেই বেছে নিবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status