প্রথম পাতা

নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন বুদ্ধিজীবীরা

মোহাম্মদ ওমর ফারুক

৪ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ৯:০৪ পূর্বাহ্ন

নানা শঙ্কা ভোটের মাঠে। ভোটারদের শঙ্কা কেন্দ্রে যেতে পারবেন তো? বিরোধী প্রার্থীদের শঙ্কা-বাঁধাহীনভাবে প্রচারণা চালাতে পারবেন তো? নাকি গত জাতীয় নির্বাচনের মতো তারা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হবেন। ভোটার, প্রার্থীর পাশাপাশি দেশের বিশিষ্টজনরা ভাবছেন বিষয়টি নিয়ে। তাদের কেউ বলেছেন, ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি, অনিচ্ছা তৈরি হয়েছে। কেউ আশা করছেন কেন্দ্রে ভোটাররা যাবেন। আবার কেউ বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

এবার ভোটাররা কেন্দ্রে যাবে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ.আ.ম.স. আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, এবার আশা করি ভোটার’রা ভোট কেন্দ্র যাবে। এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা  তাদের অধিকার নিয়ে আগ্রহী। তবে আমি বিএনপির প্রতি আশা রাখবো, তারা যেনো শেষ পর্যন্ত ভোটে লড়াই করে। বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখেছি  বিএনপি মাঝপথে এসে  নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়ে যায়। ফলে ভোটার’রা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। প্রত্যাশা রাখি বিএনপি এই জায়গা থেকে সরে আসবে। এবারের সিটি নির্বাচনে আমার কাছে যা মনে হয়েছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে আগাচ্ছে। ভোটারদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যাচ্ছে।

ভোটারদের মধ্যে অনিচ্ছা তৈরি হয়েছে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গত জাতীয় নির্বাচনের পরে ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি, হতাশা, অনিচ্ছা তৈরি হয়েছ। এর পরে আমরা দেখেছি কিছু স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে সেখানে ভোটারদের একটা মারাত্বক অনুপস্থিতি দেখতে পেয়েছি। ভোটার’রা তখনই আশ্বাস পায়, যখন দেখে দুই পক্ষের সমান প্রচারনা, মিছিল , সমাবেশের সুযোগ পায়। তখন আমার মনে হয় আস্থা পুরুদ্ধার হতে পারে বা ফিরে আসতে পারে। এবার সিটি নির্বাচনের নতুন সংযোজন ইভিএম। গত নির্বাচনে আমি এমনো ভোটার পেয়েছি যাদের ভোট কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে বলা হয়েছে বিশেষ মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য।

যতটুকু জানি, ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ না মিললে ইভিএমের ক্ষেত্রে  ২৫ পার্সেন্ট ভোট দিতে পারে প্রিজাইডিং অফিসার’রা। ইভিএম-এ কারচুপি মুক্ত হবে কিনা এই নিয়ে ভোটরাদের মধ্যে একটা বিরাট অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসমস্ত অনিশ্চয়তা দূর করতে পারলে ভোটার’রা ভোট কেন্দ্রে যাবে। আমার একটা আশংকা আছে। বিগত পাঁচ বছরের নির্বাচনগুলোতে সরকার কারচুপি করে একটা মডেল তৈরি করেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তারা নৈশ নির্বাচন করেছে। আমার আরো একটা আশংকা কাজ করছে, আগামী সাধারন নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে কারচুপি করার একটা টেষ্ট কেস হিসেবে নেয় কিনা। এটা শুধু আমার আশংকা নয় ,এটা প্রায় অনেক মানুষেরই আশংকা। সরকারি দল থেকে সবসময়ই বলা হয় বিএনপির কোনো জনপ্রিয়তা নেই, জনগনের আস্থা নেই। তাহলে একটা স্বচ্ছ নির্বাচন দিয়ে দেখাক। তাহলে তো বোঝা যাবে।

জনগণের আস্থা ফিরানোর জন্য এটাই তাদের শেষ সুযোগ: লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে বেশ কয়েকটা নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনে জনগণ বা বিরোধী প্রার্থীদের তারা আস্থা অর্জন করতে পারেনি। বিশেষ করে প্রশাসনও তারা তাদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। যার কারনে জনগণ ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলছে। সেই জায়গা থেকে সরে  আসতে চাইলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরপেক্ষ কাজ করতে হবে।আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন যদি তারা তাদের সংবিধানিক দায়িত্ব পালন করে তাহলে এধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। জনগণের আস্থা ফিরানোর জন্য এটাই তাদের শেষ সুযোগ।

প্রশ্ন কেনো উঠছে সেটিই আমার প্রশ্ন: অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ৮১ সালে স্বদেশে ফিরলেন তখন তিনি বলেছিলেন, মানুষকে তিনি ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিবেন। এছাড়াও তিনি অনেক অঙ্গিকার করেছেন। সব অঙ্গিকারই তিনি রেখেছেন। কিন্তু ভোটের অধিকারটা তিনি ফিরিয়ে দিতে পারেননি। এটা খুব দুঃখজনক। গত জাতীয় নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। প্রশ্ন কেনো উঠলো সেটিই আমার প্রশ্ন। কারণ প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই বলেছেন তিনি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চান না। কিন্তু গত কয়েকটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। যার ফলে ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগ করার আগ্রহ হারিয়েছে। এখন নির্বাচন হলেও ভোট দিতে যেতে চায় না সাধারন ভোটার’রা। তাহলে কি দাঁড়ালো সঠিক গণতন্ত্র চর্চাটা কিন্তু হচ্ছে না। এর দায় কোনো ভাবে নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারে না। একটি নির্বাচন কমিশন যদি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে তাহলে এমন কোনো প্রশ্ন ওঠতো না। কারন নির্বাচন কমিশন শতভাগ স্বাধীন। এখন নির্বাচন কমিশনই পারে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status