প্রথম পাতা

টান পড়েছে রিজার্ভে রেমিটেন্সে ভরসা

এম এম মাসুদ

২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

টানা ৫ মাস ধরে রপ্তানি আয় কমছে। বিপরীতে আমদানি ব্যয় কমছে না, বরং বাড়ছে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৬২  কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এতে অব্যাহতভাবে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তবে রেমিটেন্স প্রবাহের ধারা ইতিবাচক থাকায় রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কার পরও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। সর্বশেষ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের পর রিজার্ভের পরিমাণ আরো কমেছে। এ সময় রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৬৫ কোটি ডলারে। এর আগে ২০১৭ সালে রিজার্ভ ৩ হাজার ৩৩৬ কোটি ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে বাংলাদেশ। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে রিজার্ভ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকার কারণে রিজার্ভ কমছে। আবার প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা ইতিবাচক থাকায় রিজার্ভ হ্রাসের ঘাটতির জায়গাটা পূরণ হচ্ছে। অর্থাৎ রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহ না হলে রিজার্ভের পরিমাণ আরো নিম্নমুখী হতো। এই চিত্র দুর্বল অর্থনীতির লক্ষণ। এছাড়া অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নমুখী। এর মধ্যে একমাত্র রেমিটেন্সই আশার আলো ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাস শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। গত ১৪ই নভেম্বর এটি কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৬৫ কোটি ডলারে। আর নভেম্বর মাসে মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৭২ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশ আকুর বিল পরিশোধ করে ৯৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এতেই কমে যায় রিজার্ভের পরিমাণ। পরে প্রবাসী আয় যোগ হওয়ায় কিছুটা বৃদ্ধি পায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি ব্যয় পরিশোধে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। কিন্তু প্রবাসীয় আয় যোগ হওয়ায় আবার বৃদ্ধিও পেয়েছে। তবে রপ্তানি আয়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি আরো কয়েক মাস অব্যাহত থাকলে রিজার্ভের পরিমাণ আরো কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে আকুর সদস্য ৯টি রাষ্ট্র হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। আকুর অন্যান্য সদস্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের বিল প্রতি ২ মাস পরপর পরিশোধ করে বাংলাদেশ। আকুর মাধ্যমেই পরিশোধ করা হয়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১ই ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২১৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, ৬ মাস আগে গত জুনে যা ছিল ৩ হাজার ২৭১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। ৬ মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ৫১ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।

এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের (তিন হাজার ৩০০ কোটি) নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে বাংলাদেশ। এর পর থেকে ধারা বাহিকভাবে কমছে রিজার্ভ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মানসুর বলেন, আমদানি ব্যয়ও কিছুটা কমেছে, কিন্তু কমার হার রপ্তানি আয় কমে যাওযার হারের তুলনায় কম। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পণ্য আমদানি কমে যাওয়া ভালো নয়। অর্থনীতি যে দুর্বল হচ্ছে, তার লক্ষণ এটি। তিনি বলেন, একমাত্র রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির অন্য সব সূচকের অবস্থা এখন খারাপ। রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। রাজস্ব আদায় কমছে। মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী। চাপে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। আমদানিও কমছে। বিনিয়োগে খরা কাটছে না। ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পাহাড়। শেয়ারবাজারে তো মন্দা লেগেই আছে। সে কারণেই বলা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই এখন সচল রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫ মাস অর্থাৎ নভেম্বর শেষে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ১২.৫৯ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮০৫ কোটি ডলার, অথচ আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে নভেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। অথচ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ নভেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ১০.৭০ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছর রপ্তানি কমেছে ৭.৫৯ শতাংশ।
এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মাস পর্যন্ত আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৩.১৭ শতাংশ।
আর গত নভেম্বর শেষে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ৭৭১ কোটি ৪১ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির হার ২২.৬৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের এ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ শতাংশ। এছাড়া নভেম্বর মাসে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ (১.৫৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩১.৭৫ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, চলতি ডিসেম্বর মাসের ১৯ দিনে ১২২ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ নিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের পাঁচ মাস ১৯ দিনে (১লা জুলাই থেকে ১৯শে ডিসেম্বর) রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯৩ কোটি ৭৬ লাখ (৮.৯৪ বিলিয়ন) ডলার। অক্টোবর মাসে ১৬৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। তার আগে সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছিলেন ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। অগাস্টে আসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৯.৬০ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তার আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি ছিল আরো বেশি; ১৭.৩২ শতাংশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status