এক্সক্লুসিভ

আন্দোলন অব্যাহত থাকায় পশ্চিমবঙ্গে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ

কলকাতা প্রতিনিধি

১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

 আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিস্থিতি শান্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গে রোববারও নানা জায়গায় সড়ক ও রেল অবরোধ হয়েছে। অনেক জায়গাতেই রেললাইন উপড়ে ফেলা এবং ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলার উপদ্রুত অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
পশ্চিমবঙ্গে এদিনই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হলেও আসাম ও মেঘালয়ে সোমবার পর্যন্ত ইন্টারনেট ও এসএমএস পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। অবশ্য দুই রাজ্যেই কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। আসামে এদিন কিছু ট্রেন ও বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কোনো বড়ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গে গত দুদিন ধরে চলা হিংসাত্মক বিক্ষোভ রোববারও অব্যাহত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও কোনো কাজ হয়নি। ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের ডিজি সব জেলার পুলিশ সুপারদের এক নির্দেশে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হলে কোনো অসুবিধা নেই। তা না হলে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও বিক্ষোভকারীদের গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলনের কথা বলেছেন। কলকাতার নাখোদা মজজিদের পক্ষ থেকেও শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে, পরিস্থিতি রোববারও নিয়ন্ত্রণে না আসায় রোববার আপতকালীন ব্যবস্থা হিসেবে হাওড়া, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর মুর্শিদাবাদের বেশকিছু এলাকায় এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা র ক্যানিং ও বরুইপুরের কিছু অংশ এবং বসিরহাট ও বারাসত মহকুমার কিছু জায়গায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের পরিধি আরো বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে। রোববার সকাল থেকে রাজ্যের নতুন নতুন জায়গায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এদিন মালদহ জেলার বিভিন্ন অংশে রেলপথ এবং জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। মালদহের ভালুকা এবং কুমেদপুর স্টেশনে জনতা ট্রেন লাইন অবরোধ করে রেখেছে। স্টেশনেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বীরভূম জেলার মুরারইয়ে নতুন আইনের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন জনতা। রেল ও সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুর, বারুইপুর, মহেশতলা, হটুগঞ্জে। এদিন সকাল থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায় আমাডাঙার সোনাডাঙা, ধানকল, কামদেবপুরে। এদিন দুপুরে শিয়ালদহ-বজবজ বিভাগের আঁকড়া স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। উত্তর ২৪ পরগনার ভ্যাবলা স্টেশনে সকালেই ট্রেন অবরোধ করেছে জনতা।
শুক্র ও শনিবার যেভাবে স্টেশনে স্টেশনে তাণ্ডব চলেছে, তার জেরে রোববার ট্রেন চালাতে সমস্যায় পড়েছে রেল। গত দু’দিনের তাণ্ডবের পর নলহাটি-আজিমগঞ্জ, আজিমগঞ্জ-নিউ ফারাক্কা এবং কৃষ্ণনগর-লালগোলা বিভাগে এখনও ট্রেন চলাচল শুরু করা যায়নি। রেল সূত্রে খবর, এ দিনও লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেন চালানো যায়নি। বহু দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল হওয়ায় যাত্রীরা প্রবল দুর্ভোগে পড়েছেন।
পূর্ব রেলের জন সংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী এক আবেদনে জানিয়েছেন, কোনোভাবেই রেলের সম্পত্তি ধ্বংস করবেন না। বিক্ষোভের কারণে বিভিন্ন বিভাগে রেল চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষই অসুবিধা ভোগ করছেন। এমনকি নিরাপত্তা সংক্রান্ত রেলের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার কারণে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষ অসুবিধা ভোগ করছেন। ফলে সাধারণ মনুষের কাছে আবেদন রেল চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করুন। এদিকে বিক্ষোভ-সহিংসতার মাঝেই রোববার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে রাজ্যের অনেক জায়গাই নতুন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। এসব মিছিলে রাজ্যের মন্ত্রীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। আসানসোলে মন্ত্রী মলয় ঘটক, মন্ত্রী অরুপ রায়ের নেতৃতে মিছিল হয়েছে।
আসামে শনিবারের মতো রোববারও সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। যদিও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকছে সোমবার পর্যন্ত। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, গত বৃহস্পতিবার পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে আহত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে রোববার। এর ফলে আসামে এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আন্দোলনরত ছাত্র সংগঠন আসুর পক্ষ থেকে বিক্ষোভ আন্দোলনে নিহত দুই নাবালককে শহীদ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের কট্টর বিরোধী ‘অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ (আসু) সমমনস্ক শিল্পীদের মঞ্চ ‘শিল্পী সমাজ’কে সঙ্গে নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চলেছে। তারা আসামে বিজেপি ও অসম গণপরিষদের (অগপ) জোট সরকারের বিরোধিতাতো করবেই, বিরোধিতা করবে কংগ্রেসেরও। আসামে গত কয়েকদিনে বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মোট ৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অন্যদেরও শনাক্ত করার কাজ চলছে বলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status