দেশ বিদেশ

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনে ঢাকা-দিল্লির ‘স্বর্ণালী’ সম্পর্ক কেঁপে উঠেছে

নির্মলা গঙ্গোপাধ্যায়

১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘ট্রাবল-ফ্রি’ বা ঝামেলামুক্ত হিসেবে দেখে ভারত, যেখানে বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। এমনকি বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে ‘সোনালী অধ্যায়’ বিরাজমান, এই সম্পর্ক উপভোগ করছে দুই দেশ।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারত সফর বাতিল করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জান খান। তাদের আলাদাভাবে সফরে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের এই সফর বাতিল করার মধ্য দিয়ে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দৃশ্যত কিছুটা অশান্ত হয়ে উঠেছে। ভারত তার বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিলকে পাস করানোর মাত্র একদিন পরেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এই বিলে (বর্তমানে আইন) বাংলাদেশ ও অন্য দেশের নির্যাতিত অভিবাসীদের নাগরিকত্ব  দেয়া হবে।

বিলটি বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্টের অনুমোদন পাওয়ার মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিষ্টানদের- যারা অমুসলিম, সেই সব অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে।

পার্লামেন্টে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন, কীভাবে সরকার বাংলাদেশ সহ এই তিনটি দেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে এই আইন করতে বাধ্য হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে দু’টি কনফারেন্সে তিনদিনের সফরে বৃহস্পতিবার ভারত যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের। কিন্তু তিনি ওই বিলের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, তার সেই ঐতিহাসিক চরিত্র দুর্বল করবে এই বিল। এ ছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার এই বর্ণনাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বাংলাদেশে শতকরা ৮৯ ভাগ মানুষ মুসলিম। ফলে এটি একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর বাইরে আছেন অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসের মানুষ। এর মধ্যে রয়েছেন বিপুল সংখ্যক হিন্দু। তাদের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ।

বাংলাদেশ সরকারের মতে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক সরকারি ইভেন্টে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একে আবদুল মোমেন। এই দু’টি অনুষ্ঠান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট।
অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘালয় রাজ্য সফর বাতিল করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ভারতের ওই উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে আসাম অবৈধ অভিবাসী, তা তারা যে ধর্মেরই হোন না কেন, তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে।

দ্রুততার সঙ্গে নয়া দিল্লি ক্ষত-নিয়ন্ত্রণের অবস্থানে চলে গেছে। তারা বলছে, বাংলাদেশের এই মন্ত্রীদের ভারত সফর বাতিলকে অভিবাসন বিষয়ক এই আইনের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত হবে না।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার বলেছেন, পার্লামেন্ট নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুমোদন দিয়েছে। এর সঙ্গে ওই ঘটনাকে যুক্ত করা অনাকাঙ্ক্ষিত।

তিনি আরো জোরালোভাবে তুলে ধরেন যে, এরই মধ্যে পার্লামেন্টে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়ে যত্নবান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় আসার আগে যেসব অভিবাসী নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরকে স্বাভাবিকীকরণ (বা নাগরিকত্ব দেয়ার) করার আয়োজন করছে ভারত।
নয়া দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার নেতৃত্বের অধীনে এই সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়।

শেখ হাসিনার অনেক বন্ধুবান্ধব আছেন ভারতে। তিনি তার দেশের ভিতরে তীব্র ভারত বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালাতো যেসব বিদ্রোহী, তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদেরকে জব্দ করতে তিনি ভারতকে সহযোগিতা করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলেন, ভারতের উচিত এটা পরিষ্কার করা যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের পতন রোধ করা দরকার।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ললিত মানসিংহ বলেন, বিলটি যতটা ক্ষতি করবে বাংলাদেশের তার চেয়ে এটি পাস করানোর সময় যেসব কথা বলা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের বেশি ক্ষতি হতে পারে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে এখন। আমাদের বেশির ভাগ প্রতিবেশীর সঙ্গে যখন সমস্যাবহুল সম্পর্কের তুলনা করি, তখন এটা হলো সুপ্রতিবেশীসুলভ একটি সম্পর্কের উজ্বল উদাহরণ। বাংলাদেশকে বোঝানোর জন্য সরকারের অতিরিক্ত চেষ্টা করা উচিত ছিল। সব সময়ই বাংলাদেশে একটি উত্তাল অবস্থা বিরাজ করে। যদি শেখ হাসিনা তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে ভারতবিরোধী অবস্থান নেন, তাহলে তা ভারতের জন্য সহায়ক হবে না।
(লেখক দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের ভারত ব্যুরো চিফ। ওই পত্রিকার অনলাইনে তার লেখার অনুবাদ)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status