অনলাইন

‘বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন থামেনি বলেই এই বিল’

অনলাইন ডেস্ক

১০ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৩:৪২ পূর্বাহ্ন

প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন না-থামাটাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনার অন্যতম প্রধান কারণ বলে ভারতের সরকার পার্লামেন্টে দাবি করেছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি বাংলা। এ নিয়ে বিবিসি বাংলার রিপোর্টে বলা হয়েছে,  বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিমদের নাগরিকত্ব  দেওয়ার লক্ষ্যেই আনা হয়েছে এই বিতর্কিত বিলটি।
আর সেটি সোমবার লোকসভায় পেশ করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশ-সহ তিনটি প্রতিবেশী দেশের সংবিধানকে উদ্ধৃত করে আরও বলেছেন, এই দেশগুলোর রাষ্ট্রর্ম ইসলাম বলেই সেখানে অন্য ধর্মের মানুষরা নিপীড়িত হচ্ছেন। কংগ্রেস-সহ প্রায় সব বিরোধী দলই অবশ্য এই বিলটির তীব্র বিরোধিতা করছে। অনেক বিরোধী এমপি-ই প্রশ্ন তুলছেন শ্রীলঙ্কা থেকে আসা তামিল শরণার্থী বা মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারাই বা কেন ভারতের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবেন?

কূটনৈতিকভাবে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন ‘শ্রেষ্ঠ সময়’ বা ‘সোনালি অধ্যায়ের’ মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দুই দেশের নেতারা প্রায়ই দাবি করে থাকেন। অথচ ভারতের লোকসভায় আজ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, এই বিলটি আনতে সরকার বাধ্য হয়েছে তার অন্যতম কারণ সেই বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশেই হিন্দু-বৌদ্ধরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা লোকরাও এই বিলের সুবিধা পাবেন। ‘‘মাননীয় স্পিকার, সে দেশে কিন্তু নরসংহার থামেনি- একাত্তরের পরও বেছে বেছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।

এমন কী, ইসলামি প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মতোই বাংলাদেশেও যে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। অমিত শাহ পার্লামেন্টে বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২(ক)-তেও বলা আছে, ওই প্রজাতন্ত্রের ধর্ম হবে ইসলাম। এই তিনটি দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম বলেই সেখানে মুসলিমদের নির্যাতিত হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না - কিন্তু অন্য ধর্মের মানুষরা অত্যাচারের শিকার হতে পারেন। তিনি আরও দাবি করেন, সাতচল্লিশে কংগ্রেস যদি ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হতে না-দিত, তাহলে আজ এই বিল আনার কোনও প্রয়োজনই হতো না।

বিরোধীরা অবশ্য সরকারের এসব যুক্তি একেবারেই মানতে রাজি নন, তারা মনে করছেন এই বিলটির প্রস্তাবনাই আসলে সংবিধানবিরোধী- এবং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী। হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি যেমন বিবিসিকে বলেন, এর মাধ্যমে সরকার তো দ্বিজাতি তত্ত্বকেই নতুন করে সামনে নিয়ে আসছে। জিন্নাহ্-র যে মতবাদ আমরা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দিতে চেয়ে তারা সেটাকেই তো আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছে। মুসলিমদের কি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর চেষ্টা হচ্ছে? আর ধর্মীয় নির্যাতনের কথাই যদি বলা হয়, তাহলে মিয়ানমার বা সিরিয়া থেকে নির্যাতিত হয়ে এলেই বা কেন নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে না?, বলছেন মি ওয়াইসি।

পাকিস্তানের আহমদিয়া বা শিয়া হাজারাদের মতো সংখ্যালঘু কিংবা শ্রীলঙ্কায় জাতিগত সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা তামিল শরণার্থীরাই বা কেন ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন না, সেই প্রশ্ন তুলছেন বামপন্থীরাও - যারা সরকারের আনা বিলে এদিন দুটি সংশোধনী জমা দিয়েছে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, কেন শুধুমাত্র তিনটি দেশ - আমাদের মতে সব প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রেই এই আইন প্রযোজ্য হওয়া উচিত। শ্রীলঙ্কা থেকে আসা লক্ষধিক তামিল গত তিরিশ বছর ধরে তামিলনাডু বা ওড়িশার শরণার্থী শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন – মাদ্রাজ হাইকোর্টও তাদের নাগরিকত্ব দিতে বলেছে। ‘‘ফলে কেন তারা এই সুবিধা পাবেন না?’’, প্রশ্ন ইয়েচুরির। ‘‘আর দ্বিতীয় যে সংশোধনীটি আমরা দিয়েছি তাতে এই বিলে ধর্মের উল্লেখটাই আমরা মুছে দিতে চেয়েছি।’’

শিবসেনার মতো হিন্দুত্ববাদী দলও এদিন মন্তব্য করেছে, এই বিল ভারতের হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে 'অদৃশ্য দেয়াল' তুলে দেবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য দাবি করেছেন, এই বিল ভারতে মুসলিমদের কোনও অধিকারই কেড়ে নেবে না - কারণ গোটা বিলে তাদের কথা একবারও উল্লেখই করা হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status