প্রথম পাতা

বিপণি বিতানে ছাড় দিয়ে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা

আলতাফ হোসাইন

১০ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

ক্রেতা কম রাজধানীর বিপণি বিতানগুলোতে। দীর্ঘ সময় ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান মূল্য ছাড় দিয়ে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বিপণি বিতান ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে ক্রেতা কমছে। সবচেয়ে বড় কারণ মানুষ আয়ের সঙ্গে ব্যয় সঙ্গতি রাখতে পারছেন না। এ ছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রি করায়ও ক্রেতা কমেছে। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি  শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা না থাকায় অনেকটা অবসর সময় পার করছেন দোকানিরা। দোকানের সামনে আকর্ষণীয় ছাড়ের বিশাল পোস্টার শোভা পাচ্ছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। তবে ছুটির দিনগুলোতে ভিড় কিছুটা থাকলেও তাদের বেশিরভাগই পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে কিংবা ঘুরতে মার্কেটগুলোতে ভিড় করেন বলে জানান দোকানীরা। পান্থপথ এলাকার একটি অভিজাত শপিং মলের কয়েকজন দোকানদার ও কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৩ থেকে ৫ বছর আগেও যেভাবে বিক্রি ছিল এখন তা অনেকটা কমে গেছে। বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর এবং ছুটির দিনগুলোতে কিছুটা ভিড় থাকলেও তাদের বেশিরভাগই আসেন ঘুরতে ও সময় কাটাতে। কয়েকজন দোকানদার জানান, দিনের বেশিরভাগ সময়ই মার্কেট থাকে ক্রেতা শূণ্য।
জামাল এ্যান্ড সন্স এর আউটলেটে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের সামনে সাঁটানো রয়েছে, ২ হাজার টাকার বোরকা পাচ্ছেন মাত্র ১ হাজার টাকায় এমন পোস্টার। এছাড়া প্রতিটি পণ্যে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়ার ঘোষণা আছে। দোকানের ম্যানেজার মাকসুদ বলেন, গত বছরের তুলনায় বলতে গেলে ৫০ শতাংশ ক্রেতা কমে গেছে। আমাদের কালেকশনের কোন অভাব নেই। নিজেদের পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা পণ্য নিয়ে আসছি। নতুন নতুন অনেক আধুনিকমানের লেডিস কালেশন আছে তবুও কাস্টমার পাই না। এর কারণ হলো অনলাইন। অনলাইনে এখন মানুষ ঘরে বসে মার্কেট করে। কষ্ট করে আর কেউ শপিংমলে আসতে চায় না।
রিচম্যান এর ম্যানেজার রুহুল আমিন বলেন, এখন অনেক ক্রেতা দেশের বাইরে থেকে কেনাকাটা করেন। এ ক্ষেত্রে ভারত অনেকের পছন্দের। তারা অনেকেই চিন্তা করে যে সেখান থেকে কিনলে কম দামে কিনতে পারবে। অথচ তা হয় না। দেখা যায় ভারত থেকে যে দামে কিনে তার কমেই আমরা সেল দিচ্ছি।
সেলিব্রেশনস এর সামনে পোস্টারে লেখা, একটি কিনলে একটি ফ্রি। এই পণ্যগুলোর রেগুলার মূল্য ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র এক হাজার টাকায়। তাদের কয়েকজন বিক্রেতা ও ম্যানেজার জানান, কিছু পণ্য আছে যেগুলোর চাহিদা কম, সেগুলোতে ডিসিকাউন্ট দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করি। তবে বিক্রি আগের থেকে অনেক কম। অনলাইনের দাপটে ক্রেতারা শপিংমলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের পণ্যেরও অনলাইনে মার্কেটিং হয়, তবে অনলাইনে বিক্রি করছি না।
ইফতি ফ্যাশন হাউজের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, আমরা ২ পিস বোরকা মাত্র ১২০০ টাকায় দিচ্ছি। তবুও তো কাস্টমার পাই না। অথচ বিক্রি কম হলে মালিককে জবাবদিহি করতে হয়। বিক্রি কম হওয়ায় গত মাসে কোম্পানি ৩জন বিক্রয়কর্মী ছাঁটাই করছে।
জেন্টাল পার্কের ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক বলেন, শীতের কথা মাথায় রেখে আমরা কালেকশনগুলো ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক করে থাকি। কিন্তু শীত না পড়ায় কাস্টমাররা আসছেন না। শীত বাড়লে কাস্টমারও বাড়বে। তবে এটা ঠিক যে, আগের তুলনায় কাস্টমার অনেক কমে গেছে।
শাড়ীর দোকান নীল আঁচলে দেখা যায়, সেখানেও ১০ থেকে ২০ শতাংশ মূল্য ছাড়ের পোস্টার লাগানো। কিন্তু দোকানে ক্রেতা নেই। দুই একজন আসছেন, তবে না কিনে দেখেই চলে যাচ্ছেন। নীল আঁচলের জি এম আবুল খায়ের বলেন, এই ছাড় আমাদের মাঝে মাঝে থাকে। এটা ক্রেতা আকর্ষণের জন্য  নয়। এর জন্য যে বাড়তি ক্রেতা পাচ্ছি তাও নয়। বরং বিক্রি আগের থেকে অনেকটা কমে গেছে। বর্তমানে সব ব্যবসাতেই একটু মন্দাভাব। ক্রেতারাও ভালো নেই। তারা চায় সাধ্যের মধ্যে পণ্য কিনতে।
ওদিকে রাজধানীর মিরপুর-১, মিরপুর-২ ও মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার বিপনী বিতানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে অনেক ব্রাণ্ডের দোকানে ১০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দিয়ে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্রান্ড হাউজ কালার এর একজন বিক্রয় কর্মী জানান, বছরের শেষ হিসেবে তারা নির্ধারিত পণ্যে ৫০ ভাগ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এমনিতে বিক্রি কম। তিনি বলেন, শীতের পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য অনেকে এখন ফুটপাতের দোকান থেকে কিনে নিচ্ছে। কারণ সবাই খচর বাঁচাতে চায়। এদিকে পোশাকের পাশাপাশি, জুতা, কসমেটিক এর দোকানে এভাবে ছাড় দিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায়। ক্রেতা বাড়াতে ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানে দেয়া হচ্ছে ক্যাশব্যাকসহ নানা অফার।
রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা তাসনুভা বলেন, আট ঘণ্টা অফিস আর সড়ে তিন ঘণ্টার যানজট ঠেলে কাজ করার পর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বের হতে ইচ্ছে হয় না। এছাড়া বাচ্চাদের সময় দেয়া এবং অন্য জমে থাকা কাজ তো আছেই। এজন্য কেনাকাটার সময়ই বের করতে পারি না। তাই অনলাইন কেনাকাটা তার জীবনকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি জিনিস কিনতে আগে পুরো বিপণিবিতান ঘুরতে হতো। এতে অনেক সময় নষ্ট হতো। এখন ঘরে বসেই পছন্দের জিনিস পেয়ে যাচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status