শেষের পাতা

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ঢাকার দুই কোম্পানির

স্টাফ রিপোর্টার

৩ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:০৫ পূর্বাহ্ন

এবারের গণশুনানিতে বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কৌশল করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। আর এর বিরোধিতা করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকরা। তারা বলেছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ডিজিটাল। বিদ্যুতে   সুক্ষ্ম চুরি হচ্ছে। দুর্নীতি ও অপচয় হচ্ছে এই সেক্টেরে। তা আগে বন্ধ করতে হবে। এগুলো করতে পারলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলে ভোক্তারা মনে করেন।  গতকাল রাজধানীর টিসিবি অডিটোরিয়ামে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) এবং ডেসকো (ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনার শুনানিতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহকরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) এই শুনানির  আয়োজন করেছে।
সকালে ডিপিডিসি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০২০ সময়কালে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ভিত্তিতে বিতরণ ব্যয় দাঁড়াবে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ১ দশমিক ২৪ টাকা। এ প্রেক্ষিতে ডিপিডিসি তার প্রযোজ্য বিতরণ রেট বর্তমানের শূন্য দশমিক ৮৩ টাকা থেকে ৪১ পয়সা বৃদ্ধি করে ১ দশমিক ২৪ টাকার প্রস্তাব করেছে। যা শতকরা ৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিইআরসি এর কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, শূন্য দশমিক ৮৩ টাকা থেকে ৪ পয়সা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এতে প্রায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
শুনানিতে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম ডিপিডিসির কাছে জানতে চান, দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে ডিপিডিসির কত টাকা বকেয়া আছে। ডিপিডিসির পক্ষে থেকে জানানো হয়, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাছে ৬৪ কোটি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাছে ৯৪ কোটি টাকা বকেয়া আছে। শামসুল আলম আরো জানতে চান, বিপুল পরিমাণ বকেয়া থাকলেও কেন লাইন কাটা হচ্ছে না? জবাবে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন্স) এটিএম হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা দুই সিটি কর্পোরেশনকে বকেয়া পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদেরকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা না হয়, তাহলে আগামী জানুয়ারি মাসে তাদের সব বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়া হবে। শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বলেন, এখন বিদ্যুতের সুক্ষ্ম চুরি হচ্ছে। ডিজিটাল চুরি। এটা রোধ করতে হবে। তিনি বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর কারণে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি তুলেন। সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স শুনানিতে বলেন, এবারের  বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ডিজিটাল। সরাসরি কত বৃদ্ধি হবে তা বলা হয়নি। কিন্তু ডিমান্ড চার্জ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খাতে স্থায়ীভাবে বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। কৌশল করে প্রতি ইউনিটে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যতোক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি ও অপচয় রোধ না করা হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রস্তাব মানি না। তিনি বলেন, সিবিএ-কে কিছু দালাল তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে। আমরা সুষ্ঠু ট্রেড ইউনিয়ন চাই। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি গণশুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, ঢাকার বাইরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বেশ উদ্বেগ দেখেছি। তিনি বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব মানা যায় না। গণশুনানিতে মুঠোফোন গ্রাহক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের দাম কিভাবে কমানো যায় সেদিকে নজর দেয়ার  পরামর্শ দিয়েছেন।
ডিপিডিসি’র শুনানিতে ভোক্তা নিরাপত্তা জামানত খাতের সম্পূর্ণ টাকা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখা এবং সেই জামানতের ওপর যে সুদ আসবে, সেই সুদসহ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার সুপারিশ করেছে বিইআরসি এর কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার সময় প্রত্যেক গ্রাহককে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হয়। এই অর্থ বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজেদের আয় হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু আইন অনুযায়ী ভোক্তা বিদ্যুৎ লাইনটি ছেড়ে দিলে এই নিরাপত্তা জামানতের অর্থ ভোক্তাকে ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু কোনও বিতরণ কোম্পানি তা ফেরত দেয় না। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি শুনানিতে জানায়, ভোক্তা নিরাপত্তা জামানত খাতের সম্পূর্ণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা আবশ্যক। নিরাপত্তা জামানতের ওপর অর্জিত মুনাফাও একই ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরিত করা সমীচীন। এই হিসাবের মূল এবং মুনাফার অর্থের পৃথক পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নিরাপত্তা জামানতের মুনাফা বিতরণ কোম্পানির আয় হিসাবে ‘অন্যান্য আয়’ খাতে প্রদর্শন করার বদলে ভোক্তাকে নিরাপত্তা জামানতের অর্থ মুনাফাসহ ফেরত দেয়ার লক্ষ্যে পৃথক হিসাবে সংরক্ষণ করা সমীচীন। এই বিবেচনায় কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ভোক্তা নিরাপত্তা জামানত খাতের ৫১৯ কোটি ৭ লাখ টাকার বিপরীতে ১৮ কোটি ২ লাখ টাকা ‘অন্যান্য আয়’ হিসাবে বিবেচনা করেনি।
 বিকালে একই স্থানে বিইআরসি’র বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিতে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ডেসকো(ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীদ সারোয়ার। কোম্পানিটি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ দশমিক  শূন্য ৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ডেসকো।বর্তমান পাইকারি দর বিবেচনায় এ প্রস্তাব, পাইকারি দাম বাড়ালে সমন্বয় করার আবেদন করেছে বিতরণ কোম্পানিটি। তিনি বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সিস্টেম লস ৭ দশমিক ১১ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এরপর মনে হয় আর খুব বেশি কমানো সম্ভব হবে না। হয়তো ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা কঠিন হবে। এর মধ্যে অনেকটা টেকনিক্যাল লোকসান। ১৩২ কেভি লেভেলে অপরেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিবেচনায় ৩৩ কেভি ও ১৩২ কেভি লেভেলের ২০ পয়সা পার্থক্য নির্ধারণের আবেদন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে বিলুপ্ত হওয়া পাওয়ার ফ্যাক্টর শুদ্ধিকরণ চার্জ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে ডেসকো।
শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম এবং সদস্য মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ, মাহমুদ উল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। আজ  ৩রা ডিসেম্বর শেষ দিনে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও  বিকালে ওজোপাডিকোর প্রস্তাবের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status