বাংলারজমিন

কিছুতেই কমছে না পিয়াজের দাম

স্টাফ রিপোর্টার

৩ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না পিয়াজের বাজার। সিন্ডিকেটের কাছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগেই কাজে আসছে না। দাম কমিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। সমুদ্রবন্দরসহ আকাশপথেও পণ্যটি আনা হচ্ছে। এরপরও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে পিয়াজের দাম।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই এক থেকে দেড় হাজার টন পিয়াজ দেশে আসছে। সরকারি উদ্যোগে মিশর, চীন, এমনকি পাকিস্তান থেকেও পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যসায়ীরা বলছেন, বাজারে পিয়াজের সরবরাহ কম তাই দাম কমছে না। তবে কাওরান বাজারের পিয়াজের আড়তে দেখা যায় ভিন্নচিত্র। সেখানে বস্তা বস্তা পিয়াজ সাজানো আছে। অবশ্য ক্রেতা কম আসছে। আর দাম আকাশচুম্বী। প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পিয়াজের দাম চাওয়া হচ্ছে ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা। কেজিতে দাম পড়ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। যা খুচরা বাজারে গিয়ে বিক্রি হবে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়।

দামের এই কারসাজিতে জড়িতদের কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। ভোক্তারা বলছেন, দামে কারসাজিতে জড়িতদের চিহ্নিত এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিতসহ পিয়াজের সরবরাহ বাড়ালেই দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। যাতে কেউ অতিরিক্ত দামে পিয়াজ বিক্রি করতে না পারে।

গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার, ধানমণ্ডি, রায়ের বাজার, কাঁঠালবাগানের কাঁচাবাজারে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ২৪০-২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই দামেই বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মিয়ানমার ও মিশর থেকে আমদানি করা পিয়াজ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর গাছসহ নতুন পিয়াজ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানমণ্ডির মধুবাজারে নিম্নমানের দেশি পিয়াজ ২৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। রায়ের বাজারে মানভেদে দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে, বাজারে আসতে শুরু করেছে দেশে উৎপাদিত নতুন পিয়াজ। যা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, কৃষকরা নতুন পিয়াজ ঘরে তুললেও বাজারে ছাড়ছে কম। ফলে দাম কমছে না। কাঁঠালবাগানের পিয়াজের খুচরা বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, নতুন পিয়াজ বাজারে পুরোপুরি না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না। নতুন  পিয়াজ আসতে শুরু করেছে। কিন্তু কৃষকরা বাজারে কম ছাড়ছে। তবে ১০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি আসতে শুরু করলে পিয়াজের সংকট কমবে। তখন দাম কমবে।
কাওরান বাজারের পিয়াজ বিক্রেতা রবিউল বলেন, প্রথম থেকেই দাম বাড়ানোর জন্য আমাদেরকেই (ব্যবসায়ীদের) দায়ী করা হচ্ছে। আমরা নাকি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াই। কিন্তু সরকার এত পিয়াজ আমদানি করছে, সেগুলো কোথায় যাচ্ছে? বাজারে সরবরাহ কম কেন? অথচ শুনলাম টিসিবি (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) নাকি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। তাদের মতো আরো যারা বড় বড় ব্যবসায়ী আছেন তারা নিজেদের স্বার্থে কিছু একটা করছে। তাই বাজারে পিয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে। সেজন্য দামও এতটা চড়া।
জুয়েল নামের এক ক্রেতা বলেন, আসলেই এই সিন্ডিকেটে কারা জড়িত এটা অনুসন্ধান করে সরকারের বের করা উচিত। সরকার তো চায় দাম কমাতে। কিন্তু সিন্ডিকেটকারীরা এতই শক্তিশালী যে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। শুধু পিয়াজের দাম নয়, এই সিন্ডিকেট চক্র সুযোগ বুঝে সব  নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায়। একজন ভোক্তা হিসেবে এটা যেমন ক্ষোভের বিষয়। তেমনি সাধারণ ক্রেতারাও সমানভাবে ভুক্তভোগী। বিশেষ করে এতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেশি ভোগে। পিয়াজ এখন তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য কিনতে পারা দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার। এই অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাধীন দেশে এটা কাম্য নয়।

পিয়াজের পাইকারি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের ভুল আছে। দাম বাড়ার পর যতো উদ্যোগ নেয়া হয়। আগে থেকে কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয় না। এখানে সিন্ডিকেট আছে এটা ঠিক। তবে সরকারের উচিত ছিল পিয়াজের সংকট হওয়ার আগেই আমদানি শুরু করা। সরকার তা করেনি। আর এই দুর্বলতার সুযোগেই এক ধরনের সিন্ডিকেট হয়েছে। এখন যারা এটা করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এখানেও সরকার তেমন কিছু করছে না। অথচ তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হলে অন্তত সিন্ডিকেট হতো না। এতে দাম কিছুটা হলেও কমতো। তিনি বলেন, পিয়াজের চাহিদা আগে যেমন ছিল এখনো তেমন আছে, শুধু সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়ে গেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status