বাংলারজমিন

বেনাপোল কমিউটার ট্রেন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে

৩ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:৩৩ পূর্বাহ্ন

খুলনা বেনাপোল রুটের কমিউটার ট্রেন ও ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন এখন চোরাচালানী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ রুটে পরিনত হয়েছে। এই ট্রেন দুটি এখন মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। খুলনার জিআরপি থানার অধীনে যশোর ও বেনাপোল জিআরপি ফাঁড়ির কতিপয় কর্মকর্তা, সদস্য এবং ট্রেন বিভাগের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের  প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় ভারত থেকে চোরাই পণ্য এবং মাদকদ্রব্য আসছে। এর বিনিময়ে এদেশ থেকে মূল্যবান সম্পদ ও সোনা চালান পাচার হচ্ছে হরহামেশায়। সীমান্তবর্তী এলাকার থানা, পুলিশ ক্যাম্প ও তদন্ত কেন্দ্রর হাত থেকে মুক্তি পেতে চোরাচালানি ও মাদক ব্যবসায়ীরা ট্রেন রুট বেছে নিয়ে অবাধে তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া,এই দু’টি ট্রেনে যাত্রীদের চেয়ে ভারতীয় পণ্য সামগ্রী ও মাদকের চালান বহন হচ্ছে হরহামেশায়। আর চোরাচালান ও মাদকের চালান পাচারে এই রুটে কথিত পুলিশের সোর্স আদায়কারী হিসেবে কাজ করছে ২০ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কাছে বিভিন্ন পেশার ট্রেন যাত্রীরা অসহায়। ট্রেন সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, দিনে দুই বার খুলনা বেনাপোল রুটে কমিউটার  ট্রেন ও সপ্তায় ছয় দিন বেনাপোল ঢাকা রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। সকাল ৬টায় খুলনা থেকে কমিউটার ট্রেন যাত্রী নিয়ে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসার সময় চোরাচালানিদের পাশাপাশি বেনাপোল ও যশোর অঞ্চলে কর্মরত চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ যাত্রী হিসেবে বেনাপোলে গন্তব্যে পৌঁছায়। বেনাপোল থেকে ওই কমিউটার ট্রেন খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে বেনাপোল স্টেশনের দক্ষিণ পশ্চিম পাশ থেকে চোরাচালানী ও মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের অবৈধপন্য অবাধে কমিউটার ট্রেনে তোলে। তাছাড়া, চোরাচালানীরা কমিউটার ট্রেন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চেইন টেনে ইচ্ছা মাফিক বিভিন্ন পয়েন্টে থামিয়ে চোরাচালানি ও মাদকদ্রব্য ট্রেনে তুলতে কৌশল অবলম্বন করেন।
সূত্রগুলো বলেছে, যশোর জিআরপি ও বেনাপোল জিআরপি ফাঁড়ির কতিপয় কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে যশোর শহরের রেলগেটের সোহাগ, হাসান মুন্সী, বাস্তহারা সংগঠনের সভাপতি দাবিদার সোহরাব হোসেন, আবুল হোসেন, নাভারন ষ্টেশনের তাজ, আবুল হোসেনের ভাইরা ভাই শাহআলম, টাইগারসহ ২০ জনের একটি সিন্ডিকেট বেনাপোল কমিউটার ও বেনাপোল এক্সপ্রেস মাদক পাচার ট্রেন নিয়ন্ত্রণ করছেন। সূত্রগুলো আরো দাবি করেছেন, এই কারবার চালিয়ে সোহরাব হোসেন নাভারণ রেলস্টেশনের পিছনে দোতলা বাড়ি বানিয়েছেন। তিনি নাভারণ স্টেশনের সামনে বাস্তহারা সংগঠনের অফিস বানিয়ে এই অবৈধ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন চোরাচালানি ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ন্যূনতম ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা আদায় করছে পাকশি জিআরপি থানার অধীনে যশোর জিআরপি, বেনাপোল জিআরপি ফাঁড়ি পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে। বেনাপোল কমিউটার ট্রেনটি ফের দুপুর ১২টায় খুলনা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।  বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রাতে এসে সকাল ৯টার দিকে বেনাপোল পৌছে সেখান থেকে দুপুর দেড়টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বেনাপোল কমিউটার ট্রেনটি বাংলাদেশের ওপার ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্তের তেরঘর, সাদীপুর, পুটখালী, ভূলোট, রঘুনাথপুর, বাহাদুরপুর সীমান্ত থেকে কসমেটিকস, শাড়ি, চাদর, ইমিটেশন, ভারতীয় কাপড়চোপড়সহ খাদ্য সামগ্রী পাচার হয়ে যশোর, অভয়নগর, দৌলতপুর ও খুলনা রেলস্টেশন এলাকায় নামছে। বেনাপোল এক্সপ্রেসের মাধ্যমে চোরাচালানি ও মাদকের চালান নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল থেকে খুলনা ৯৫ কিলোমিটার রেললাইনে স্টেশন বাদে মাদক ব্যবসায়ীদের চুক্তি মোতাবে বেনাপোলের ভবের বেড়, তালসারী, দিঘীরপাড়া নাভারণ লাল ব্রিজ, যশোরের খড়কি, চেঙ্গুটিয়া স্টেশনের অদূরে, ফুলতলা, ফুলবাড়ি গেট অদূরে ট্রেন দাঁড়িয়ে যায় । এসব জায়গায় মাদকের মালামাল নামায়। বিজিবিতে কর্মরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, তল্লাশী কার্যক্রম চালাতে তাদেরকে ট্রাক্সফোর্স গঠন করতে হয়।  ট্রাক্সফোর্স গঠন ছাড়া তারা অভিযান চালাতে পারেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন  ট্রেন যাত্রী জানান, বেনাপোল কমিউটার ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটির কার্যক্রম দেখলে মনে হয় এটি চোরাচালানি পণ্য ও মাদকের চালান বহনে নিয়োজিত রয়েছেন। বেনাপোল থেকে কমিউটার ট্রেন ছাড়লে চোরাচালানি ও মাদক ব্যবসায়ীদের দাপটে ট্রেনের আসন গুলোতে বসার কোন ব্যবস্থা থাকে না। তাই অবিলম্বে  নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত দু’টি ট্রেনে অব্যাহতভাবে অভিযান চালিয়ে এহেন পরিস্থিতি থেকে যাত্রী সাধারণকে রক্ষা করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ  কামনা করা হয়েছে। যশোর জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই তারিকুল ইসলাম জানান, পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ মাদক ব্যবসা করে না। যদি কেউ করে তাহলে যাত্রীসাধারণ আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন। বেনাপোল জিআরপি পুলিশের ইনচার্জ কামাল হোসেন জানান, বেনাপোল স্টেশনে এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটে না। তারপরও বিষয়টি দেখবো। খুলনা জিআরপি থানার অফিসার ইনচার্জ ফয়জুর ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status