দেশ বিদেশ

ব্যাংক কর্তাদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক, সুদহার এক অঙ্কে আনতে কমিটি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছেন, ব্যাংকের উৎপাদনশীল খাতের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা এবং খেলাপি ঋণ কমাতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এর পর আগামী ১লা জানুয়ারি থেকে শিল্পখাতের ঋণের সুদহার হ্রাস এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু হবে। গতকাল এনইসি সম্মেলন কক্ষে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকারত্ব দিনদিন বাড়ছে। এই বেকারত্ব কমাতে হলে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। উৎপাদনশীল খাতকে বাঁচাতে ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সুদহার এক অঙ্কে নেমে আসেনি কেন এবং খেলাপিঋণ দিন দিন কি কারণে বাড়ছে সেটা তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিটি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ১লা জানুয়ারি থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, এই কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হবে। কমিটির সদস্য সংখ্যা হতে পারে মোট সাতজন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই কমিটি কী কারণে খেলাপি ঋণ ও সুদ হার বাড়ে, তার কারণ খুঁজে বের করবে। এছাড়া কী পদক্ষেপ নিলে খেলাপি ঋণ কমানো যাবে তার সুপারিশ দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই অনুসারে কাজ করবে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলে ৩১শে ডিসেম্বরের পর থেকে খেলাপি ঋণ ও ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এরপর তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা প্রজ্ঞাপন বা সার্কুলারের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ব্যাংকগুলো এখন ৬ থেকে থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে আমানত সংগ্রহ করছে এবং ঋণের শ্রেণিভেদে সাড়ে ৯ সাড়ে ২০ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল-ঋণখেলাপি)। বলেছিলাম ঋণখেলাপি বাড়বে না, বরং সামনে ধীরে ধীরে এর হার কমবে। কিন্তু আপনারা বলছেন এনপিএল বাড়ছে। এনপিএল বাড়ার মূল কারণ সুদের হার। বাংলাদেশের মতো এত বেশি সুদ বিশ্বের আর কোথাও নেই।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আশা করি ১০ বছর পরে আমাদের ব্যালেন্স শিট পরিষ্কার হবে। তিনি বলেন, আমরা একটি জায়গায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারিনি, সেটা হচ্ছে এনপিএল। এনপিএল বাড়ার একটি কারণ হলো আমাদের সুদহার অনেক বেশি। আমাদের মতো এত ‘হাই ইন্টারেস্ট রেট’ পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। তিনি বলেন, আমরা সবাই বসেছিলাম কীভাবে সুদহার কমানো যায় অথবা কমপিটিটিভ একটা এনভায়রনমেন্টে আনা যায়। সবাই আমরা একবাক্যে স্বীকার করেছি যে, সুদহার কমাতেই হবে। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনলে আমাদের এনপিএল অনেক কমে যাবে। সুদহার কমলে আমাদের সঙ্গে বিদেশিরা ব্যবসা করে শান্তি পাবে, কোনো প্রশ্ন করবে না। বিদেশিরা আমাদের এলসিগুলো গ্রহণ করবে। দেশের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়ার কারণে নিয়মিত গ্রাহকরাও এখন খেলাপি হয়ে গেছে। সে কারণেই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ অবশ্যই কমবে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। তবে অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা মামলাগুলো ব্যাংকের সুদহার কমিয়ে আনতে বাধা হিসেবে কাজ করেছে বলেও মনে করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণ এদেশের সকল নাগরিকের অর্থ, তাদের কষ্টার্জিত টাকা। সুতরাং তাদেরও একটা বক্তব্য আছে। আমি তাদের হয়ে বলেছিলাম, যে এটা বাড়বে না। এটা দুঃসাধ্য কাজ না, যদি আমরা সঠিক রাস্তায় থাকি। এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে পারি তাহলে সেটা সম্ভব।
খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য দেয়া বিশেষ সুবিধার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৪-১৫ শতাংশ সুদ দিয়ে খেলাপিরা ঋণ শোধ করে শেষ করতে পারবে না। কারণ, একদিকে সুদ দেয়, অন্য দিকে এটা বাড়তে থাকে। এটা দিয়ে কুলাতে পারে না। সুদ হার কমালে মন্দ ঋণ স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জিডিপির প্রবৃদ্ধি বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জিডিপি কমলেও আমাদের দেশের জিডিপি কমার কোন ভয় নেই। কারণ আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কখনো কমবে না। বরং বাড়বে।

অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে খেলাপি ঋণ বিক্রির বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে খেলাপি ঋণ বিক্রিসহ কয়েকটি পক্রিয়া বিবেচনাধীন রয়েছে। যেগুলো ক্যাবিনেটে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে খেলাপিঋণ বিক্রির বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৬ মাসে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে সরকারি-বেসরকারি মিলে মাত্র ১১টি ব্যাংক। এখনও বেসরকারি খাতের ৩৭টি ব্যাংকের ঋণের সুদহার ১২-২০ শতাংশের ঘরে। এদিকে সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেন। বর্তমানে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status