দেশ বিদেশ

মেয়াদোত্তীর্ণ

দুই মাসে ৩৪ কোটি টাকার ওষুধ ধ্বংস

স্টাফ রিপোর্টার

২০ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

ভেজাল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির কারণে যাদের একবার জেল-জরিমানা করা হয়েছে, তারা যদি ফের একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হন, তবে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে (যার শাস্তি যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ড) মামলা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি একেএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এই নির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে, হাইকোর্ট বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে চিকিৎসকদের কমিশন খাওয়ার কড়া সমালোচনা করেন। এ সময় আদালত, ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিনিধি (রিপ্রেজেন্টিটিভ) দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে সেটা বন্ধ করতে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতিকে নির্দেশনা দেন। যেন এ ধরনের কোনো অনিয়ম বা অন্যায় না হয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি এবং বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির পক্ষে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের জন্য ইতোমধ্যে যাদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে, তারা যদি আবার একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হন, তখন তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের জন্য মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। তিনি বলেন, ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের জন্য এখন ৭ দিন বা ১ মাস বিনাশ্রমে দণ্ড দেয়া হচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হলে যাবজ্জীবন এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। ফলে যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, তারা যেন মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণ, বিক্রি না করেন। আদালতকে উদ্ধৃত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিনিধি (রিপ্রেজেন্টিটিভ) দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে সেটা বন্ধ করার জন্য ওষুধ শিল্প মালিক সমিতিকে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন এ ধরনের কোনো অনিয়ম বা অন্যায় না হয়ে থাকে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরবর্তীতে আদালত আদেশে বা নির্দেশনা দিতে পারেন। অপরদিকে, আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, একটা আবেদন ছিল ওষুধের নাম যেন বাংলায় লেখা থাকে। আমরা প্যাকেট খুলে দেখিয়েছি, বাংলায় লেখা আছে। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ইংরেজিতে লেখা। আদালত ওষুধের পাতায় বাংলায় চেয়েছেন। ওষুধের পাতায় ইংরেজিতে লেখা আছে। আমরা বলেছি, ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে বসব। বসে যতটুকু সম্ভব। অলরেডি অনেকগুলো বাংলায় হয়ে গেছে। আদালতের চাওয়া শতভাগ যেন হয়। এর আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে, গত ১লা আগস্ট থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল, ভেজাল ওষুধ বিক্রয়ে গৃহীত কার্যক্রম শীর্ষক প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গত দুই মাসে ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। একই সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গত ১ আগস্ট থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদ বাশার। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে ১৩ হাজার ৫৯৩টি ফার্মেসি পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টে ৫৭২টি মামলা করা হয়। এতে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে দুটি ফার্মেসি সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়াও একই সময়ে ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধংস করা হয়েছে। গত ১০ই মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। এ বিষয়ে পরের দিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতবেদন যুক্ত করে গত ১৭ই জুন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন গত ২৪ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেছিলেন। এরপর গত ২৮শে জুন ওই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর সারা দেশে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার, জব্দ ও ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রুলসহ নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status