দেশ বিদেশ

খাতুনগঞ্জে মলিনমুখে পিয়াজ সিন্ডিকেট

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২০ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

সেপ্টেম্বর থেকে শুরু। মাত্র কয়েক মাসে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পিয়াজ সিন্ডিকেটের চিবুকটা চকচকে হয়ে উঠেছিল। সেই ভাবটা এখনো আছে। তবে মুখটা মলিন হয়ে গেছে। ভাঁজ পড়েছে কপালেও। কারণ পিয়াজের দাম এখন অর্ধেক কমে গেছে।

চার-পাঁচগুণ বেশি লাভ হয়তো এ বছর আর জুটবে না। তাই মুখ আর কপালের করুণ এই দৃশ্য। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের শঙ্কা-সাগরপথে  পিয়াজ এসেই দাম কমে অর্ধেক, আর আকাশ থেকে নামলে কি হবে। এদিকে আকাশের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরে আরো ৪১৩ টন পিয়াজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
 
ব্যবসায়ীরা জানান, সাগরপথে পিয়াজ আসলেও গুদামে রাখা পিয়াজ যাতে লাভেই বিক্রি করা যায়, তা নিয়েও কলকাটি নাড়ছেন পিয়াজ সিন্ডিকেটের জনকেরা। আমদানি করা নতুন পিয়াজ বাজারে না ছেড়ে পুরণো আধা পচা পিয়াজই বাজারে ছাড়ছে তারা।

সূত্রমতে, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মাত্র ১৪ জনের মতো পিয়াজ আমদানিকারক রয়েছেন। যারা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে পুরো চট্টগ্রামের বাজারকে জিম্মি করে ইচ্ছেমতো পিয়াজের দাম বাড়িয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর তারা পাইকারি কেজিপ্রতি ২০-২২ টাকার পিয়াজক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ১২০-১৩০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন।

মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পিয়াজ খরচসহ ৪২ টাকা কেজি কেনা পড়লেও তা বিক্রি করেছেন ২২০-২৩০ টাকা পর্যন্ত। যা খুচরা পর্যায়ে ২৪০-২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রিীকরা হয়। আর এই পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত একের পর এক অভিযান ও সিন্ডিকেটের সাথে মতবিনিময় সভা করে গলদঘর্ম হয়ে উঠে।

এরপরও সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চার-পাঁচগুণ বেশি লাভে পিয়াজ বিক্রিী করে শ’ শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত স্বাদের সেই পিয়াজসাগরপথে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায় শনিবার। খালাস হওয়ার পর বাজারে পৌঁছায় রোববার। তাতেই সোমবার থেকে বাজারে পিয়াজের দাম নেমে আসে অর্ধেকে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পিয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০-১৩০ টাকা, মিশর ও চীনের পিয়াজপ্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা। তবে এ পিয়াজ আগের আমদানি করা।

চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল জানান, রোববার পর্যন্ত বন্দরে মিয়ানমার থেকে আসা ৮৪ টন এবং চীন ও মিশর থেকে আমদানি করা ১১৪ টন পিয়াজখালাস হয়েছে। যা খাতুগঞ্জের বাজারে প্রবেশ করেছে।

এছাড়া চীন, মিশর, পকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা আরো ৪১৩ টন পিয়াজ খালাসের অপেক্ষায় আছে। এদিকে মিশর থেকে বিমানে পিয়াজনিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আসছে। সবমিলিয়ে চাহিদার চেয়েও অনেক বেশি পিয়াজআমদানি করা হয়েছে। ফলে একরাতেই পিয়াজের দাম কমে গেছে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ খান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সমপাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস এ প্রসঙ্গে বলেন, পিয়াজ সংকটের আগে বাজার যখন স্বাভাবিক ছিল তখন গড়ে প্রতিদিন আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টন পিয়াজআমদানি হতো। এখন ভারত থেকে পুরোপুরি পিয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪০০ টন পেয়াজ খালাস হচ্ছে।

আমদানি করা পিয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরেও খালাস হয় রোববার। এ পিয়াজ সারাদেশে নেয়া হচ্ছে। ফলে সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে প্রতিকেজি পিয়াজ ১২০-১৩০ টাকা, মিশর ও চীনের পিয়াজ প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। তবে এ পিয়াজ আগের আমদানি করা পিয়াজ। আর এতেই সিন্ডিকেটের মুখ মলিন হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে।

খাতুনগঞ্জ পিয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা জাবেদ ইকবাল বলেন,  পেয়াজ যা আছে তা বর্তমান চাহিদার হিসেবে পর্যাপ্ত। প্রতিদিন খাতুনগঞ্জে যে পরিমাণ পিয়াজ আসছে তার সবটুকু বিক্রি হচ্ছে না। ফলে মজুদও বাড়ছে। ইতিমধ্যে এয়ার কার্গোতে পিয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এদিকে দেশী পিয়াজও বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ফলে পিয়াজের বাজারে ধস নামবে।
তিনি বলেন, দাম যদি আরো কমে যায় তাহলে লোকসানের ঝুঁকি বাড়বে। তাই সবার মধ্যে ভীতি কাজ করছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে আমদানিকারকরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status