এক্সক্লুসিভ

বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে যুথী

স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ থেকে

১৯ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:২৮ পূর্বাহ্ন

সন্তানের জীবনের শ্রেষ্ঠত্বে যিনি সে পিতা অকালে মারা গেছেন। বাড়িভর্তি হাজারো স্বজন আর গ্রামবাসী। শোক আর কান্নার মাতম চলছে বাড়ির আঙ্গিনা চলছে শেষ গোসলের প্রস্তুতি। সে অবস্থায় বাবার একমাত্র মেয়েটির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার চূড়ান্তক্ষণ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে পরিজনদের হ্যাঁ-না দোটানা সিদ্ধান্তকালে যুথীর কানে বেজে উঠে বাবার অতীতের কিছু কথা। তার বাবা তাকে বলেছিলেন ‘লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে হবে’। এ কারণে বাবাকে শেষ বিদায় দেয়াকালে উপস্থিত না থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ছুটে আসে যুথী। কান্নারত অবস্থায় শেষ করে পুরো পরীক্ষা। ততোক্ষণে জানাজা আর দাফন হয়ে গেছে তার বাবার। উপজেলার হাটাব মধ্যপাড়া এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, হাটাব মধ্যপাড়া এলাকার হারেজ মিয়ার ছেলে জামান মিয়া (৪১)-এর হঠাৎ শ্বাসনালীতে ছিদ্র ধরা পড়ে। গত কয়েকদিন যাবৎ তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। রোববার রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জামান। সোমবার সকাল ১১টায় তার জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে দুই ছেলে ও একমাত্র মেয়ের মধ্যে জামান মিয়ার সবচেয়ে আদরের সন্তান ছিল তার মেয়ে যুথী। তিনি বলতেন- আমার ঘরে বেহেশত এসেছে। মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিতা বানানোর স্বপ্ন দেখতেন তিনি। যুথীকে বলতেন ‘মা তোমাকে পড়ালেখা করে অনেক বড় হতে হবে’। হাটাব দক্ষিণ বাড়ৈ শিশুনিকেতন ব্র্যাক স্কুলের এবার পিএসসি পরীক্ষার্থী যুথী সোমবার বাংলা বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়। বাড়িতে বাবার লাশ ফেলে শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া শিশু যুথী পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় সারাক্ষণ কান্নারত অবস্থায় পরীক্ষা সমাপ্ত করেন। পরীক্ষা শেষে পরীক্ষাকেন্দ্র কাঞ্চন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হল সুপার ও শিক্ষকগণ তার এ সাহসী সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে যুথী জানায়, তার বাবা তাকে অনেক ভালোবাসতো। তার বাবা চাইতো সে যেনো পড়ালেখা করে অনেক বড় হয়। এখন চূড়ান্ত এ পরীক্ষা না দিলে তার বাবার আত্মা হয়তো কষ্ট পেতো। এ কারণে নিজেকে কষ্ট দিয়ে বাবাকে বিদায় না দিয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে সে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, শিশুটির বাবা এমন সময় মারা গেছেন সেটা খুবই কষ্টদায়ক। তারপরও শিশুটি বাবা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। আমরা তার পরীক্ষার সময় যতোটা সহযোগিতা দরকার করেছি। হল সুপার পুরো সময় শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া এমন সুশিক্ষার্থীরাই এদেশের আগামীর ভবিষ্যৎ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status