বিশ্বজমিন

আমি অল্পবয়স্কার সঙ্গে সেক্স করিনি: প্রিন্স অ্যান্ড্রু

মানবজমিন ডেস্ক

১৮ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন

বৃটিশ রাজপরিবারের প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে অল্পবয়স্কা এক তরুণীর সঙ্গে যৌনতায় মিলিত হওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। শনিবার রাতে বিবিসি’র নিউজ নাইট অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেছেন, যে রাতে তিনি ওই মেয়ের সঙ্গে সেক্স করেছেন বলা হচ্ছে, সেদিন তিনি পিজ্জা এক্সপ্রেস-এ শিশুদের একটি পার্টিতে যোগ দিয়ে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। নিউজ নাইট অনুষ্ঠানে প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে মার্কিন বিলিয়নিয়ার জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে রীতিমতো জিজ্ঞাসাবাদ করেন উপস্থাপিকা এমিলি মেইটলিস।

জেফরি এপস্টেইন শিশু যৌন নির্যাতনকারী হিসেবে সাজা পান। পরে কারাগারেই তিনি আত্মহত্যা করেন। আর এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। এমনকি এপস্টেইনের হাতে ‘যৌন দাসী’ হিসেবে বন্দী ছিলেন এমন এক নারী পরে দাবি করেন যে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু তার সঙ্গে জোরপূর্বক সেক্স করেন।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সাক্ষাৎকারে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর কণ্ঠ বার বার কাঁপছিল। এমনকি তোতলাচ্ছিলেন। আবার এপস্টেইনের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে তিনি পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও দিয়েছেন। অ্যান্ড্রু দাবি করেন, এপস্টেইনের কোনো বাড়িতে কোনো পাচারকৃত নারীর সঙ্গে তিনি যৌন সম্পর্কে মিলিত হননি। তবে তিনি নিশ্চিত করেন যে, এপস্টেইনের নিজস্ব বিমানে তিনি চড়েছেন, যেটি এখন প্রায় কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। তিনি এ-ও স্বীকার করেছেন যে, তিনি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত দ্বীপ, পাম বিচের বাড়ি ও নিউ ইয়র্কের প্রাসাদে রাত্রিযাপন করেছেন। অ্যান্ড্রু বলেন, ‘আপনি যদি পুরুষ হয়ে থাকেন, তাহলে কারও সঙ্গে সেক্স করাটা একটি ইতিবাচক কাজ। আর কোনো ইতিবাচক কাজ ভুলে যাওয়াটা খুব কঠিন। কিন্তু এমন কিছু আমার মনে পড়ছে না।’
এপস্টেইনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক ডজন অল্পবয়স্ক মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চলছিল। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারে অ্যান্ড্রু বলেন, এ বিষয়ে তার মধ্যে অনুশোচনা কাজ করছে।

ভার্জিনিয়া জিউফ্রে নামে যে নারী দাবি করছেন যে, তিনি অ্যান্ড্রুর সঙ্গে সেক্স করেছেন, সে ব্যাপারে উপস্থাপিকা প্রশ্ন করেন। প্রিন্স এই দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। জিউফ্রে দাবি করেছিলেন যে, লন্ডনে ২০০১ সালের ১০ই মার্চ একটি নাইটক্লাবে পার্টি শেষে অ্যান্ড্রুর এক বন্ধু ম্যাক্সওয়েলের বাড়িতে তার সঙ্গে সেক্স করেন তিনি। এ বিষয়ে প্রিন্স বলেন, ‘সে রাতে আমি শিশুদের সঙ্গে ছিলাম। আমি বিয়েট্রিসকে নিয়ে পিজ্জা এক্সপ্রেসে একটি পার্টিতে যাই সম্ভবত বিকেলে। তখন সারাহ (স্ত্রী) বাড়িতে ছিল না। আর পরিবারের মধ্যে এই নিয়ম ছিল যে, যদি একজন বাইরে থাকে, তাহলে আরেকজন বাড়িতে থাকবেন।’

তবে জিউফ্রে নামে ওই নারীর সঙ্গে অ্যান্ড্রুর জড়িয়ে ধরা একটি ছবি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। তবে প্রিন্স বলেন, এ ধরণের ছবির বিষয়ে তার কিছুই স্মরণে নেই। তিনি বলেন, ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে এটি সম্ভবত ম্যাক্সওয়েলের (ওই বন্ধু) বাসার উপরের তলায় তোলা হয়েছে। তিনি নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে বলেন, রাজপরিবারের অংশ হিসেবে তিনি কাউকে জড়িয়ে ধরা বা এ ধরণের কাজ করেন না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই টুইটারে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে বহু নারীর জড়িয়ে ধরার ছবি অনেকে শেয়ার করতে থাকেন।

শনিবার ওই সাক্ষাৎকার শেষে জিউফ্রে নিজেও এ ব্যাপারে টুইট করেন। তিনি বলেন, প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ওই সাক্ষাৎকার মূলত নিজের সুনামকে রক্ষার জন্যই। কিন্তু এতে করে আরও অনেক প্রশ্ন হাজির হয়েছে।
অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল কেন তিনি বার বার এপস্টেইনের বাড়ীতে গেলেও সেখানে দৃশ্যত বন্দী মেয়েদের দেখেন নি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে কর্মচারিদের দেখতে দেখতে তিনি অভ্যস্ত। তাই সেখানে কোনো বৈসাদৃশ্য তার চোখে পড়েনি।

সাক্ষাৎকারে প্রিন্স নিশ্চিত করে বলেছেন যে, নিজের রাজকীয় বাড়িতে এপস্টেইনকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এমনকি ২০০৬ সালের মে মাসে এক অল্পবয়স্কা মেয়েকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে কারাগারে গিয়ে মুক্তি পাওয়ার পর তা উদযাপনে এপস্টেইন পার্টি করলে, সেখানে থাকার কথাও নিশ্চিত করেন প্রিন্স। এছাড়া প্রিন্স বিয়েট্রিসের ১৮তম জন্মদিনেও এপস্টেইনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। তবে তিনি দাবি করেন, এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারির বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না।

তার এই বক্তব্যের পর এপস্টেইনের হাতে নির্যাতিতাদের পক্ষে কাজ করা আইনজীবী গ্লোরিয়া অ্যালরেড বলেন, টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার না দিতে গিয়ে তিনি যদি শপথ গ্রহণ করে স্বাক্ষ্য দিতে সম্মত হন, তা-ই বেশি কাজের হবে।
প্রসঙ্গত, প্রিন্স অ্যান্ড্রু হলেন বর্তমান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের তৃতীয় সন্তান ও দ্বিতীয় ছেলে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status