দেশ বিদেশ

পিয়াজ আসছে, দাম কমছে

৬৬ হাজার টনের এলসি খোলা হয়েছে এসেছে ৭ হাজার টন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৮ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৯:০৮ পূর্বাহ্ন

পিয়াজের সংকট কাটাতে ৬৬ হাজার টন আমদানির অনুমতিপত্র (এলসি) খোলা হলেও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যটি এসেছে মাত্র ৭ হাজার টন। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বাকি পিয়াজ আসতে আরো ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগতে পারে। এদিকে ২৬০ টাকায় ওঠা পিয়াজ এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজখবর নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর দেশে পিয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। পিয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে বেশি কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। পণ্যটি আমদানি করতে নতুন দেশ খুঁজতে শুরু করে বাংলাদেশ। এ জন্য চীন, উজবেকিস্তান, মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে পিয়াজ আমদানির এলসি খোলেন বড় শিল্পপতিরা। প্রতিটি বন্দরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পিয়াজ খালাস করা হয়। বিকল্প দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি, বড় শিল্পপতিদের আমদানিতে সম্পৃক্ত করা ও কম মার্জিনে এলসি খুলতে ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। চীন, মিসরের বিকল্প বাজার থেকে ৬৬ হাজার টন পিয়াজ আমদানির এলসি খোলা হলেও গত দেড় মাসে পিয়াজ এসেছে ৭ হাজার টন। এসব দেশ থেকে আমদানি চললেও পিয়াজের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সেপ্টেম্বরে যে পিয়াজের দর কেজিতে ছিল ৩০-৪০ টাকা, তা এখন ২৬০ টাকায় উঠেছে। অবশ্য গতকাল থেকে কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মিশর থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩০৬ টন পিয়াজ এসেছে। পাশাপাশি চীন থেকে ৮৭৬ টন, মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ২২৮ টন, তুরস্ক থেকে ৮৬ টন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১১২ টন এবং পাকিস্তান থেকে ১৩৯ টন পিয়াজ বন্দরে এসেছে। গত ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ই নভেম্বর পর্যন্ত এই ৫ হাজার ৯৪৭ টন পিয়াজ এসেছে। জানা গেছে, বিশেষ ছাড়ে বড় শিল্পপতিরা এলসি খোলার পর চট্টগ্রাম বন্দরে ৪টি জাহাজে এসেছে মাত্র ৭ হাজার টন পিয়াজ। এখনও পিয়াজবোঝাই দুটি জাহাজ আছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এদিকে মিয়ানমার থেকে গত বৃহস্পতিবার ৩টি ট্রলারে ৪৫৯ টন পিয়াজ এসেছে। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর এ নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টন পিয়াজ এসেছে মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমারের পিয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কেনা হলেও দেশের বাজারে তা ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেছে সিন্ডিকেট। জানা গেছে, ভারতের বিকল্প দেশ হিসেবে এবার মিসর থেকেই সবচেয়ে বেশি পিয়াজ আমদানি হচ্ছে। দেশটি থেকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ ৫টি চালানে ৫৫ হাজার টন পিয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। কিন্তু এসেছে মাত্র আড়াই হাজার টন। মিসর ছাড়াও চীন থেকে সাড়ে ৪ হাজার টন পিয়াজ আমদানির অনুমতি নেয়া হয়েছে। পাকিস্তান থেকে দুই হাজার ২০০ টন পিয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এর বাইরে তুরস্ক থেকে ৮২০ টনের মতো আমদানির অনুমতিপত্র নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পিয়াজের জাহাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নোঙর করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। পাইপলাইনে থাকা জাহাজ এলে বাড়তি সুবিধা পাবে। পিয়াজের বাজার স্বাভাবিক করতে এই বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। টেকনাফ স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের গত ১৩ দিনে ১১ হাজার ১৩৫ টন পিয়াজ খালাস হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর ৮৯৪ টন পিয়াজ এসেছিল মিয়ানমার থেকে, যা এরই মধ্যে খালাস শেষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছার কথা রয়েছে। বর্তমানে টেকনাফ স্থলবন্দরে ২৫ হাজার বস্তার এক হাজার টন পিয়াজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের প্রথম দিন থেকে গত ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত দেশে দেড় লাখ টন আমদানি করা পিয়াজ ঢুকেছে। এর মধ্যে আগস্টে ঢুকেছে ৬৭ হাজার ৭৩৭ টন। সেপ্টেম্বরে এসেছে ৭৬ হাজার ২৭৭ টন। অন্যদিকে চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৪২৭ টন পিয়াজ।

পিয়াজের গড় আমদানি মূল্যেও বড় ধরনের ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসের চার সপ্তাহে টনপ্রতি ১৯০ থেকে ৩১৪ ডলার দরে পিয়াজ আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়। কেজি পড়ে ১৬ থেকে ২৭ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসের চার সপ্তাহে টনপ্রতি ২৪৬ থেকে ৫৯৫ ডলারে পিয়াজের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়। এতে দাম পড়ে ২১ থেকে ৫১ টাকা। আর সর্বশেষ এ মাসের প্রথম পাঁচ দিনে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে গড়ে টনপ্রতি ৬২৩ ডলার দরে, কেজিপ্রতি দর ৫৩ টাকা। এ দামের সঙ্গে জাহাজভাড়া ও অন্যান্য খরচ যুক্ত হবে। কিন্তু পাইকারি বাজারে যেকোনো পিয়াজ (পচন না ধরা) কয়েক গুন বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে তিন দফায় কেজিতে ১২০ টাকা বেড়ে শনিবার দেশি পেয়াজের দাম দাঁড়ায় ২৬০ টাকায়। গলির দোকানে ২৭০ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে গতকাল রোববার ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে দেশি পিয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। বর্তমানে ২৪০ টাকা দরে কিক্রি হচ্ছে। দেশি হাইব্রিড পিয়াজ ২০০ টাকা এবং মিশরের পিয়াজ ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারে পিয়াজ বিক্রেতা আজিজ দেশী ভালো মানের পিয়াজ প্রতিকেজি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আগের দিন যার দাম ছিল ২৬০ টাকা। মিশরের বড় বড় সাইজের পিয়াজ বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়, যা আগের দিন বিক্রি করেছেন প্রতিকেজি ২০০ টাকায়।
তিনি বলেন, গতকাল সকালে শ্যামবাজার থেকে প্রতিকেজি ১৮ টাকা কমে পিয়াজ কিনতে পেরেছি, তাই ২০ কমে বিক্রি করতে পারছি। তবে এতেও তিনিসহ ক্রেতারা কেউ সন্তুষ্ট নয়। কারণ ৩০-৪০ টাকার পিয়াজ এখনও বিক্রি করতে হচ্ছে ২৪০ টাকায়।

কাওরান বাজারের খুচরা পিয়াজ বিক্রেতা মাইনুল বলেন, সব ধরনের পিয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে। গতকাল তিনি দেশি ভালো মানের পিয়াজ বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ২৩০ টাকায়। যা আগের দিন বিক্রি করেছিলেন ২৫০ টাকায়। দেশি হাইব্রিড পিয়াজ বিক্রি করছেন ২০০ টাকায়, আগের দিন যা ছিল ২২০ টাকা; পাকিস্তানি প্রতিকেজি পিয়াজ বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়, আগের দিন ছিল ২০০ টাকা। কাওরান বাজারের আড়তদার মেসার্স মাতৃভান্ডারের মালিক কালাম বলেন, আজ (গতকাল) পাইকারি বাজারে সব ধরনের পিয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কম। তাই এর প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। কাওরান বাজারের আড়তদার মমতাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক কাজী মোস্তফা বলেন, আমি পাবনা, ফরিদপুর আর রাজবাড়ীর পিয়াজ বিক্রি করে থাকি। এসব দেশী পিয়াজের দাম একটু বেশি থাকে। গতকাল পাবনার বাজারে পিয়াজের দাম কিছুটা কম। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নতুন পাতা পিয়াজ ওঠা শুরু করেছে। আর এ মাসের শেষের দিকেই পিয়াজ ওঠা শুরু করবে। তখন প্রতিদিন কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমতে শুরু করবে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে পিয়াজের সাময়িক সংকট পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুফে নিয়েছে। তিনি দেশে উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status