প্রথম পাতা

শ্রমিক নিয়োগে সিঙ্গাপুর মডেল

মিজানুর রহমান

১৭ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

বিদেশে কর্মী বা শ্রমিক প্রেরণে ‘সিঙ্গাপুর মডেল’ এখন বেশ আলোচনায়। পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানিতে এ মডেল অনুসরণ করা যায়। সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে সৌদি তথা মধ্যপ্রাচ্যের নিয়োগকর্তার বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে জনশক্তি রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের তরফে প্রত্যেক শ্রমিকের প্রি-রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার যে সরকারী সিদ্ধান্তের কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেটি সিঙ্গাপুর মডেলেরই প্রতিফলন- বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এটি কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, মালয়েশিয়াসহ সব দেশের জন্যই কার্যকর হতে পারে। এতে কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনায় নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ যেমন সহজ হবে, তেমনি কোন শ্রমিক অঘটন ঘটালে তাকেও দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। শ্রমিকদের প্রাপ্য আদায়সহ তার অধিকার, স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সমুদয় বিষয়ে হোস্ট কান্ট্রির পাশাপাশি শ্রমিক প্রেরণকারী হিসাবে বাংলাদেশও তা নিশ্চিত করতে পারবে। সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবসাইটে থাকা নোটিশ মতে, যে কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে তার কিছু তথ্য দূতাবাসকে আগাম জানাতে হবে। প্রথমত: যাকে নিয়োগ দেয়ার আগ্রহ রয়েছে সেই এমপ্লোয়ির আইপিএসহ বিস্তারিত দূতাবাসকে জানাবে কোম্পানী। তার পাসপোর্ট কপি এবং লেটার অব অথরাইজেশনও সরবরাহ করতে হবে। যে এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি ওই শ্রমিক বা কর্মচারীর কাগজপত্র প্রসেসিং করবে তারও কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এজেন্সিকে নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিকের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ই-এ ফর্মের একটি কপি দূতাবাসের সরবরাহ করতে হবে। সমুদয় কাগজপত্রসহ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের একদিন দূতাবাসে আসতে হবে। প্রদত্ত ডকুমেন্টের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে দূতাবাসের শ্রম বিভাগের তরফে ডকুমেন্টগুলোর মূল কপি সত্যায়ন করে দেয়া হবে এবং ফটোকপি দূতাবাসের সংরক্ষণ করা হবে। এ জন্য কোম্পনীকে শ্রমিক প্রতি ১২ ডলার জমা দিতে হয়। ওই সত্যায়নের পরই বাংলাদেশ থেকে একজন শ্রমিক সিঙ্গাপুরে যাবে।

ভিন্নমত জানিয়ে এক প্রবাসীর চিঠি, হাই কমিশনার বললেন ‘ভোগান্তির’ অবকাশ নেই: সিঙ্গাপুরে অনেক বছর ধরে কাজ করেন আবদুর রহিম। তিনি দেশটিতে সাধারণ ওয়ার্কার হিসাবেই গিয়েছিলেন। সিঙ্গাপুরের আইনে শ্রমিকদের জন্য পড়াশোনা করে নিজের অবস্থানের উন্নতির যে সুযোগ রয়েছে তার খানিকটা কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ করা আবদুর রহিম শ্রমিক নিয়োগে সিঙ্গাপুরের ইউনিক ওই মডেল নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলে মানবজমিনে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি নব প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমটির কিছু ত্রুটি তুলে ধরে এটি পূনর্বিবেচনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি দাবি করেন- সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিরা তাদের দক্ষতা, পরিশ্রম এবং দায়িত্বশীলতার কারণে একটি অনন্য অবস্থানে রয়েছে। ফলে, বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীরা সিঙ্গাপুর তথা বহির্বিশ্বের যে কোনো কোম্পানির পছন্দে প্রথম কাতারে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। চিঠিতে তিনি সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান এবং শ্রম কাউন্সিলর আতাউর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেন- হাই কমিশনার যোগদানের পর পূর্বের সব গ্লানি-ব্যর্থতা মুছে দিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। শ্রম কাউন্সিলও তার কাজের মাধ্যমে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু তাদের দু’জনের প্রশংসনীয় কাজের মধ্যেও একটি সিদ্ধান্তে প্রবাসীদের কষ্টে ফেলে দিয়েছে।

সিদ্ধান্তটি হলো, এখন থেকে নতুন কোন শ্রমিক সিঙ্গাপুরে আসতে হলে হাইকমিশন থেকে তার ডকুমেন্ট আগেই সত্যায়িত করতে হয়। আর এই সত্যায়নের প্রক্রিয়াটি আবেদনকারী কোম্পানিকে করতে হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিয়ে এটি করতে হয়। প্রক্রিয়াটি ‘বাড়তি ঝামেলা’ তৈরি করছে। ওই প্রবাসীর মতে, কোন কোম্পানি চায় না একজন শ্রমিক নিয়োগের জন্য হাইকমিশনের লাইনে দাঁড়াতে। এটিকে অনেকে ‘ভোগান্তি’ মনে করে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার পরিবর্তে ভারত, মিয়ানমার বা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকছে। শুধু তাই নয়, ঝামেলা মেনে নিয়েও যেসব কোম্পানী আইপিএ আবেদন করছে তাদের ঢাকায় মিনিস্টার অব ম্যানপাওয়ার থকে অজানা কারণে রিজেক্ট করা হচ্ছে। ওই প্রবাসীর দাবি- এসব কারণে তার পরিচিতি একাধিক কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে নতুন শ্রমিক আনার চিন্তা না করে অন্য দিকে যাচ্ছে। তিনি এ-ও বলেন, দূতাবাসের সত্যায়ন সংক্রান্ত ‘ঝামেলা’র জন্য অনেক এজেন্ট কোম্পানীগুলোকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতেও নিরুৎসাহিত করছেন!

তবে, বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, না, শুরুতে বিষয়টি না বুঝার কারণে কিছু সমস্যা হয়েছিল। এখন আর কোন অসুবিধা নেই। এই সত্যায়ন যে কোম্পানী এবং শ্রমিক উভয়ের স্বার্থেই করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য রেকর্ড রাখা হচ্ছে তা কোম্পানীগুলোর কাছে বাংলাদেশ ভালভাবেই তুলে ধরতে পেরেছে। সিঙ্গাপুরকে সিস্টেমমানা দেশ হিসাবে উল্লেখ করে হাই কমিশনার বলেন, কোম্পানীগুলোর এ নিয়ে এখন আর কোন অভিযোগ নেই। মধ্যসত্ত্বভোগীরা হয়তো নাখোশ। আর ভোগান্তি বা ঝামেলার যে কথা বলা হচ্ছে তা মোটেও ঠিক নয়। যেহেতু এটি মেশিনে নয়, মানুষের হাতে হয়, সুতরাং অপেক্ষার সময় কম-বেশী হওয়ার অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু দূতাবাসের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে যত দ্রুত সম্ভব সত্যায়নের কাজটি সম্পন্ন করার। অন্তত কোম্পানীর প্রতিনিধিকে বাড়তি এক মিনিটও যেনো অপেক্ষায় থাকতে না হয়। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া কমেনি বলেও দাবি হাই কমিশনারের।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status