বাংলারজমিন

৩০ ফুট খাড়া মই বেয়ে পারাপার

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

১৭ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:১৩ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরে একটি মূল ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। এক পাশে রাখা আছে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু লোহার মই। এর সংযোগ সড়ক হয়নি এখনো। সংযোগ সড়ক না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাড়া মই বেয়ে লোকজনকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পারাপার হতে হচ্ছে। ব্রিজের পর সড়ক নেই, আছে জলাশয়। প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচের পরও কবে এর সুফল পাওয়া যাবে সেই প্রশ্ন রয়েছে এলাকাবাসীর। তবে সুনির্দিষ্ট করে মাস কিংবা বছর বলতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ বলছেন, অচিরেই এর সমাধান হবে।

তুরাগ নদীর একপাশে সিটি করপোরেশনের ২১নং ওয়ার্ডের খালিশাবর্থা এলাকা আর অন্যপাশে কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর গ্রাম। নদীর ওপর প্রায় ৩০ ফুট উঁচু ব্রিজ। ব্রিজের পূর্ব পাশে সংযোগ সড়ক নেই। নদীতে খেয়া নৌকা থাকলেও অনেক সময় থাকে না মাঝি। তাই খাড়া মই বেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজে ওঠা-নামা করে এভাবেই নদী পারাপার হতে হয়, কোমলমতি শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত নানা বয়সী নারী-পুরুষকে। কোটি টাকা ব্যয়ের এই ব্রিজের ওপর ভেজা লাকড়ি শুকাতে দেখা গেছে গত সপ্তাহে। এর উপর দিয়ে পায়ে হাঁটা ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচলের পথ নেই, সেখানেই স্থানীয়রা লাকড়ি কিংবা ধান শুকানোসহ নানা কাজে ব্যবহার করছে। তারা বলছেন, দুই বছর আগে ব্রিজের মূল অংশ নির্মাণ হলেও এখনো ব্রিজ এপ্রোজ তৈরি হয়নি। ব্রিজের পূর্বপাশে মাছের চাষ হচ্ছে। জলাশয় অনেক এলাকা জুড়ে। ওই জমি এখনো অধিগ্রহণ হয়নি। অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। কাজেরই ব্রিজ এপ্রোজ তৈরি শেষ করা হলেও কবে জমি অধিগ্রহণ করে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হবে সে বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের পরও এর পুরোপুরি সুফল পেতে আরো কত বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে সেই ধরনের প্রশ্ন রয়েছে এলাকাবাসীর মনে। তারা মনে করছেন, এটির পুরোপুরি সুফল পেতে শুধু চলাফেরায় নয়, স্থানীয় কৃষি পণ্য বিপণন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাভাবে সমৃদ্ধ হতে পারবেন তারা। নদীর আশপাশের দু’পাড়ের লোকজন এখনো কোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার করতে না পেরে মালামাল আনা-নেয়াসহ অনেককেই ৮-১০ কিলোমিটার দূরত্বের পথ ঘুরে যানবাহনে চলাচল করতে হয়। আবার অনেক সময় ফেরি পারাপারের মাঝি না থাকায় একটু ভিন্ন পথের লোকজনকে শিক্ষার্থী কিশোরী-তরুণী কিংবা নারীদেরও বৈঠা ঠেলে নৌকা যোগে নদী পারাপার হতে দেখা গেছে। মূল ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষে হয়েছে দু’বছর আগে। এখন শুরু হয়েছে ব্রিজ এপ্রোচ বা বায়াডাক নির্মাণের কাজ। ধীরগতিতে চলছে এরও নির্মাণ কাজ। এর নির্মাণ কাজে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে এলাকাবাসীর রয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা। আবার নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। মূল ব্রিজের পশ্চিম দিকের সংযোগ সড়কের দু’দিকেই কিছুটা কাত হয়ে গেছে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার আগেই। নির্মাণজনিত ত্রুটি বা মান সঠিক না হওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ব্রিজ এপ্রোচটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সদর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্মকর্তাগণ বলছেন, ডিজাইনের কিছু ত্রুটি আর স্থানীয় লোকজনের অসহযোগিতার কারণে কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে, তবে শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই।

এপ্রোচের পর সড়ক নেই, আছে জলাশয়। তাই এটা নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এর কোনো সুফল আশা করতে পারছেন না এলাকাবাসী। তবে আশার কথা শোনাচ্ছেন, গাজীপুর এলজিইডি বিভাগের কর্মকর্তাগণ।
গাজীপুরের স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল বারেক এ বিষয়ে বলেন, জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের স্বার্থে মানসম্মতভাবে দ্রুত ব্রিজের পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ করে এবং প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে ব্রিজের পূর্বদিকের সড়ক তৈরির দাবি রয়েছে স্থানীয়দের। ব্রিজ নির্মাণের পর নগরের মাস্টারবাড়ি এলাকা থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর এলাকার ওই ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হলে, পূর্বপাশের খালিসা বর্থা, বিপ্রবর্থা, মীরেরগাঁও, কাউলতিয়া এবং পশ্চিম পাশের সাকাশ্বর, বরাবসহ মধ্যপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও নগরের নছর মার্কেট, বাঘিয়া, আমবাগ, কোনাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এমনকি চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারীগণ বর্তমানের ভোগান্তি এড়িয়ে বিকল্প পথে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে সহজেই চলাচল করতে পারবেন। এতে সময় এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে দূর-দূরান্তের লোকজনের।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status