বাংলারজমিন

পোরশায় জমি লিজ নিয়ে আম বাগান তৈরির হিড়িক

পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি

১৬ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত নওগাঁর পোরশায় কৃষকদের জমি লিজ নিয়ে আম বাগান তৈরির হিড়িক পড়েছে। জেলার সাপাহার ও পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা কৃষকদের নিকট থেকে দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে জমি লিজ নিয়ে বড় বড় নতুন নতুন আম বাগান তৈরি করছেন। এসব আম বাগানে রোপণকৃত আম গাছের মধ্যে অধিকাংশই আম্রপালী জাতের গাছ। বাগান তৈরি করতে উচ্চ মূল্য দিয়ে জমি লিজ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর জমি লিজ দিয়ে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন জমি মালিকরা।
জানা গেছে, গত মৌসুমে আম্রপালী জাতের আম বাজারে উচ্চ মূল্যে কেনা-বেচা হয়েছে। এতে লাভবান হয়েছেন কৃষক চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আরো লাভবান হতে নতুন করে পরিকল্পনা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। নিজেদের জমিতে বাগান লাগানো শেষ করে অন্যের জমি দীর্ঘ মেয়াদি লিজ নিয়ে বড় বড় বাগান তৈরি করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) ১৮ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জমি লেনদেন চলছে। গাছ লাগিয়ে ১০ বছর আম খেয়ে রোপণকৃত গাছসহ জমি ছেড়ে  দেবেন লিজ গ্রহণকারী। এতে ধানের তুলনায় জমি লিজ দিয়ে অনেক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তাই ধান চাষ ছেড়ে দিয়ে এখন আম বাগান তৈরি করার জন্য জমি লিজ দিচ্ছেন এ এলাকার কৃষকরা। কৃষকদের মতে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ ২০ মণ। বর্তমান বাজার দর হিসাবে ২০ মণ ধানের দাম র্স্বোচ্চ সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এর মধ্যে এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করে খরচ বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকে মাত্র ২ হাজার টাকা। আর বাগান লিজ দিলে কোনো রকম খরচ ছাড়াই জমির মালিক পাচ্ছেন ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা। উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউপির সহড়ন্দ গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক জানান, তিনি তার বেশ কয়েক বিঘা জমি বাগান করতে লিজ দিয়েছেন প্রতি বিঘা ২০ হাজার টাকা দরে। ধান চাষ করা থেকে এটাই তিনি অনেক লাভবান মনে করে জমি লিজ দিয়েছেন।
স্থানীয় আমচাষি ও জমি লিজ গ্রহণকারী আলহাজ রেজাউল ইসলাম জানান, আম্রপালী আমে প্রচুর লাভ হবে জেনেই তিনি উচ্চ মূল্যে জমি লিজ নিচ্ছেন। আর আম্রপালী বাগান করছেন।  
জানা যায়, ভারতের গবেষকরা পৃথিবীর বিস্ময়কর এক আম সৃষ্টি করেছেন। আর নাম দিয়েছিলেন আম্রপালী। ভারতের শ্রেষ্ঠ নর্তকীর নাম ছিল আম্রপালী। ১৯৭৮ সালে ভারতের আম গবেষকরা দশহোরি ও নিলাম-এই দুটি আমের মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে আম্রপালী আমের জাত উদ্ভাবন করেন। এই জাতের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত বাংলাদেশের আবহাওয়ার কারণে উন্নত জাতের আম এক গাছে এক বছর ফল ধরে, পরের বছর তেমন ফল ধরে না। কিন্তু আম্রপালী জাতের গাছে প্রতিবছরই ফল ধরে। এর মিষ্টতার পরিমাণ ল্যাংড়া বা হিমসাগরের চেয়েও অনেক বেশি। গাছ বামন আকৃতির। এসব গাছের ফলনও অনেক বেশি। পাঁচ হাত দূরত্বে এক হেক্টর জমিতে দেড় হাজার আম্রপালীর চারা রোপণ করা যায়। আমের আকার লম্বাটে। আষাঢ় মাসে পাকে। গড় মিষ্টতার পরিমাণ ২৩ শতাংশের বেশি। আঁটি সরু। সুস্বাদু আঁশবিহীন। ১৯৯০ সালে প্রথম বাংলাদেশে আম্রপালীর চারা আসে। প্রতি হেক্টরে ১৬ টন আম্রপালী আম ফলে। ১২-১৪ বছর বয়স হলে গাছ কেটে নতুন চারা লাগালে ভালো হয়। বয়সী আম্রপালী গাছের ফল ছোট হয় এবং ফলনও কমে যায়। আম্রপালী অতুলনীয় মিষ্টি স্বাদযুক্ত একটি আম। এর রং ও গন্ধ অসাধারণ। আমটি ওজনে ৭৫ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। কম আঁশযুক্ত এই আমটির খোসা পাতলা এবং আঁটিও পাতলা। আম্রপালী সাধারণত ফজলি আমের পরে পাকে। বাজারে আমটির ব্যাপক চাহিদা থাকায় ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এই আমের বাগানের সংখ্যা। বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম্রপালী জাতের এই আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহফুজ আলম জানান, আম্রপালী আমের বাগান তৈরির জন্য পোরশা উপজেলার মধ্যে সব থেকে বেশি জমি লিজ হয়েছে গাঙ্গুরিয়া ইউপিতে। গত বছর পোরশা উপজেলায় মোট সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আম্রপালী আম চাষ হয়েছিল। তবে বর্তমানে এ উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমি ছাড়িয়ে গেছে এ জাতের আম বাগান। এখন ফাঁকা জমিগুলোতে আমন ধান রয়েছে। এ ধান উঠলে আবার নতুন করে চাষিরা বাগান তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম্রপালী জাতের এই আমের চাহিদা অনেক থাকায় বাজারে এর মূল্য চাষিদের জন্য সন্তোষজনক। আমটির চাহিদা এরকম চলমান থাকলে গোটা পোরশা উপজেলার সমস্ত জমিতে আম্রপালী বাগান গড়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status