বাংলারজমিন

কুলসুমের মুখে স্বামী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

১৬ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

কুলসুম বেগম (৪৮)। নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মন্নর আলীর মেয়ে। পরকীয়ার কারণেই দ্বিতীয় স্বামী হাশিমকে হত্যা করেছে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ও আদালতে স্বামী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে ঘাতক কুলসুম। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল তার পরকীয়ার তৃতীয় স্বামী আক্তার হোসেন (৫৬)সহ আরো কতেক সহযোগী। আক্তার হোসেনের বাড়িও লক্ষ্মীপুর গ্রামেই। কুলসুম স্বীকার উক্তিতে বর্ণনা করে, ‘রাগ করে হাশিমের বাড়ি থেকে চলে আসার পরও সম্প্রতি মাঝেমধ্যে দেওড়া যেতাম। স্বামী হাশিমের সঙ্গে রাত্রিযাপন করতাম। হাশিমও আমাদের বাড়িতে (লক্ষ্মীপুর) আসত। রাতে থাকত। এসব কিছু কৌশলে পরকীয়ার স্বামী আক্তারের কাছে গোপন রাখতাম। কিন্তু পরকীয়ার স্বামীর কারণে হাশিমকে ঝামেলাও মনে হতো। কারণ সে জেনে গেলে আমার ওপর ক্ষেপে যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ই অক্টোবর আমাদের বাড়ির পাশে ছিল আব্দুল্লাহ শাহ’র মাজারে উরস। সেখানে আসে হাশিম। উরস থেকে রাত ৮টার দিকে আমার কাছে আসে। আমি ছোট একটি ঘরে হাশিমকে নিয়ে থাকি।

আমাদের মধ্যে শারীরিক মিলনও ঘটে। এক পর্যায়ে হাশিমের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ি। হাশিমের বাম কান বরাবরে লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করি। মাটিতে পড়ে যায়। হাশিমের মাথাটি একটি ইটের মধ্যে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে নাক ও কান দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। আক্তারসহ আরো কয়েকজনকে ডেকে আনি। তারা হাশিমের পরনের শার্ট খুলে তার গলায় পেঁছিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করি। পরে সকলে মিলে রাত ১০টার দিকে টেনে পাশের খালি মাঠে ফেলে আসি।’ নিহত হাশিমের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, কুলসুমের প্রথম বিয়ে হয়েছিল সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর গ্রামে। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী মারা যায়। ৫ বছর আগে স্থানীয় কিছু লোকের সহায়তায় একই ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের প্রয়াত গোয়াছ মিয়ার ছেলে আবদুল হাশিমের (৫০) সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। হাশিমেরও প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছে ১৫ বছর আগে। কিছুদিন ভালোই চলছিল কুলসুম ও হাশিমের দাম্পত্য জীবন। মাজার পূজারি ছিল হাশিম। বছর তিন আগে রাগ করে লক্ষ্মীপুর চলে যায় কুলসুম। হাশিম ও তার স্বজনরা অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। নিজ গ্রামের আক্তার হোসেনের সঙ্গে প্রথমে পরকীয়া পরে গোপনে বিয়ে করে ফেলে কুলসুম। বিয়ের বিষয় হাশিমের কাছে গোপন রাখে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকবার দেওড়ায় হাশিমের বাড়িতে গিয়েছে কুলসুম। যখনই একে অপরের সঙ্গে দেখা হয় স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিকই ছিল তাদের। এ বিশ্বাসই কাল হয়েছে হাশিমের জন্য। সরল মনেই ওই দিন কুলসুমের কাছে গিয়েছিল। কুলসুম আর তার পরকীয়ার স্বামী আক্তারের গোপন পরিকল্পনা জানা ছিল না সহজ সরল হাশিমের। তাই শেষ পর্যন্ত তার নিজের স্ত্রীর দ্বারাই খুন হতে হলো। নাসিরনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, কুলসুম তার পরকীয়ার স্বামী আক্তার হোসেনের সহায়তায় হাশিমকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন আদালতে। আরো দু’জনের নামও বলেছেন। এছাড়াও আরো কয়েকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সবাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status