শেষের পাতা

৩০ বছর আগের সাগিরা হত্যা

ছিনতাইকারী নয় জড়িত স্বজনরা

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৯:১৪ পূর্বাহ্ন

ত্রিশ বছর আগের ঘটনা। রাজধানীর ভিকারুন নিসা নূন স্কুল থেকে আট বছরের শিশু সাহারাতকে আনতে যান মা সাগিরা মোর্শেদ সালাম। পথিমধ্যেই সিদ্ধেশ্বরীতে গুলি করে হত্যা করা হয় সাগিরাকে। ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৯৮৯ সালের ২৫শে জুলাই বিকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। সবাই জানতো ছিনতাইকারীদের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে তাকে। গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিতে গেলে বাধা দেন সাগিরা। তারপরই পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। কিন্তু দীর্ঘ তদন্তের পর জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছিনতাইকারী না, পেশাদার কিলারের গুলিতেই প্রাণ দিতে হয়েছে সাগিরা মোর্শেদ সালামকে।

এ ঘটনায় নিহতের স্বামী আব্দুস সালাম বাদি হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ১১ই জুলাই চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত করে পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় বাদীর ভাই ও ভাবীসহ জড়িত ৪ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চার জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গত ১০ই নভেম্বর আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯)কে রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১২ই নভেম্বর মামলার বাদির ভাই ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০) ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪)কে ধানমন্ডিতে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৩ই নভেম্বর বেইলি রোড থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মো. মারুফ রেজা (৫৯)কে। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আসামিরা।  পারিবারিক কারণেই ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে হত্যা করা হয় সাগিরাকে। এ বিষয়ে গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন, পিবিআইয়ের প্রধান (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার।

জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৯০ সালে এ মামলার চার্জশীট দেয়া হয় একজনের বিরুদ্ধে। দু’জন সাক্ষী জানান, সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে  এ মামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ঘুরে যায় মামলার পুরো দৃশ্যপট। ১৯৯১ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ মামলার তদন্ত স্থগিত করেছিলেন।

মামলার তদন্তের বিষয়টি সমপ্রতি রাষ্ট্রপক্ষকে জানান, ডিবির কর্মকর্তা। বিষয়টি নজরে আসে হাইকোর্টের। ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত ও বিচার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন আদালত। মামলার পুন:তদন্তের নির্দেশ পায় পিবিআই। ৯০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় আরো দুইমাস সময় চায় পিবিআই। এরমধ্যেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার জনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরী বারডেম হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৮৫ সালে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ দেশে ফিরে ৯৫৫ আউটার সার্কুলার রোডস্থ রাজারবাগে বাবার বাসায় তার মা, বড় ভাইদের সঙ্গে বসবাস করেন।

এক বাসায় থাকার কারণে ডা. হাসান আলী চৌধুরীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনের সঙ্গে ভাই আব্দুস ছালাম চৌধুরীর স্ত্রী সগিরা মোর্শেদের গৃহস্থালীর ব্যাপারে দ্বন্দ্বের শুরু হয়। স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিনের সঙ্গে সাগিরার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই ভাড়াটে খুনি দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এই মামলায় গ্রেপ্তার মারুফ রেজা তৎকালীন সময়ে সিদ্ধেশ্বরী এলাকার নামকরা সন্ত্রাসী এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status