বাংলারজমিন
অপু এখনো জানে না মা বেঁচে নেই
নুরুল আমিন, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) থেকে
১৩ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৮:০৫ পূর্বাহ্ন
অপু এখনো জানে না তার মা আর বেঁচে নেই। সে জানে তার মা নানা বাড়ি বেড়াতে গেছেন। তার জন্য পটেটো নিয়ে আসবেন। নানা বাড়ি থেকে নারিকেল পিঠা আনবেন। অপুর কচি মুখে এমন কথা শুনে বাড়ি শুদ্ধ সবার চোখ জলে ভরে ওঠে। অপুকে সান্ত্বনা দেয়ার কোন ভাষা খোঁজে পান না স্বজনরা। তার মা পিয়ারা খাতুন (৩৮) ছোট সন্তান অপুকে বাড়ি রেখে তিনি বাবার বাড়ি লাকসামে বেড়াতে যান। শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে তিনি চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেন রাত সাড়ে ১২ টার সময়। বি.বাড়িয়া মন্দবাগ স্টেশনে ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ট্রেনের বগিতেই তিনি প্রাণ হারান। স্বজনরা পিয়ারার মরদেহ শনাক্ত করে মঙ্গলবার চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের বাগাডাইয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এসময় পিয়ারার ছোট সন্তান অপু মায়ের নিথর দেহের উপর লুটিয়ে পড়ে। সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না-কাটি করতে থাকে। অপু বিলাপ করে বলে, আম্মা আমার পটেটো কই। তুমি না বলেছিলে, আমার জন্য পটেটো নিয়ে আসবে। কই কথা বলো না কেন? অপুর বুক ফাটা কান্নায় দর্শনার্থীসহ স্বজনদের চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে থাকে। অপুকে কেউই সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না। আত্মীয়ারা বলেন, মায়ের সাথে নানা বাড়ি যাওয়ার জন্য অপু খুব করে কান্না করছিলো। সামনে পরীক্ষা থাকায় মা তাকে সাথে করে বেড়াতে নিতে চাননি। এ সময় অপু রাগ করে মাকে আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বলেছিলো, ‘আমাকে একা রেখে যাও, তুমি মরব্থে.... । শিশু অপুর কথাটা সত্য হবে তা কেউ ভাবেন নি। অপু গাদ্দিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। মাকে হারিয়ে সে এখন অনেকটাই আশ্রয়হীন।