বাংলারজমিন

‘বিকট শব্দে যাত্রীদের ঘুম ভেঙে যায়’

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে

১৩ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৮:০৪ পূর্বাহ্ন

দু’টি ট্রেনের সংঘর্ষের সময় রাত তখন আনুমানিক পৌনে ৩ টা। যাত্রীদের অনেকেই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ বিকট শব্দে সকল যাত্রীর ঘুম ভেঙে যায়। মনে হয়েছিল যেন বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। পুরো ট্রেন তখন অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ভেতর থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। চোখের সামনে তখন অনেকের মৃত্যু হতে দেখি। এরপর স্থানীয়রা উদ্ধার করে কসবা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও পরে জখম গুরুতর হওয়ায় আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মঙ্গলবার ভোর রাত  পৌনে ৩ টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষে আহত যাত্রী সিএনজি চালক কাউছার (২৮) ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই বর্ণনা করেন। কাউছার হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার উত্তর শ্যামলী গ্রামের আবদুল জলিলের পুত্র। তিনি আরও জানান, শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে তিনি (কাউছার) ও তার মামাতো ভাই আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন, তার মামাতো ভাই ইয়াসিন রাজমিস্ত্রী ছিলেন। সে বাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে মারা গেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
সিলেটে মাজার জিয়ারত শেষে মা, স্ত্রী, মেয়ে. ভাগ্নে বউসহ পরিবারের  ৫ জনকে নিয়ে একই ট্রেনে চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪৫)। তিনি জানান, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখিছি, কারও পা নেই, কারও মাথা থেকে মগজ বেরিয়ে গেছে। স্থানীয়রা টেনে আমাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে, তবে পরিবারের অপর ৪ সদস্য কোথায় আছে, বেঁচে আছে কি-না তাও তিনি জানেন না। কুমিল্লা পুলিশ সুপার আহতদের দেখতে হাসপাতালে এলে তিনি পরিবারের ৪ সদস্য বেঁচে আছে কি-না, কিংবা কোথায় আছে তা খুঁজে বের করার অনুরোধ করেন। কুমিল্লা জজকোর্টে একটি মামলার হাজিরা দিতে আসছিলেন মৌলভীবাজারের আবদুস ছোবহান, তার শ্যালক সফিক ও ভাই আবদুস ছালাম। দু’টি ট্রেনের সংঘর্ষের সময় অন্য যাত্রীদের সহায়তায় তিনি ও তার সঙ্গে অপর ২ জন বেরিয়ে আসেন। তিনি জানান, তাদের পাশের একটি বগি সংঘর্ষের সময় উপরে উঠে যাওয়ায় অনেকের কান্নার শব্দ শুনতে পান, ভোররাত হওয়ায় তখন স্টেশনে তেমন লোকজন ছিল না, সময়মতো উদ্ধার না হওয়ায় অনেকেই মারা যান।
এদিকে দুর্ঘটনার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) ওই ৩ জন ছাড়া অপর ১০ জনকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এরা হচ্ছেন সুনামগঞ্জের রেজাউল করিম, চাঁদপুরের হাসান, রোজিনা আক্তার, জুবায়ের, রোজিনা বেগম, হবিগঞ্জের মুক্তা, সুমন, নাছিমা, ফিরোজা ও শ্রীমঙ্গলের সেনেল। কুমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সফিউল জানান, ১৩ জনকে আহত অবস্থায় এ হাসপাতালে আনা হয়, এদের মধ্যে ১০ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও চাঁদপুরের ফারহানা আক্তার (১০) নামের এক শিশু জরুরি বিভাগে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের দুপুরে দেখতে এসে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এ হাসপাতালে যে ৩ জন ভর্তি রয়েছে তাদের চিকিৎসার খরচ জেলা পুলিশ থেকে বহন করা হবে। দুপুর সোয়া ১টার দিকে একই হাসপাতালে আহতদের দেখতে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান ও জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status