দেশ বিদেশ
‘তবু আমি জুডিশিয়াল পরীক্ষায় অংশ নেবো’
রাশিম মোল্লা
৮ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৯:০১ পূর্বাহ্ন
সুদীপ দাশের স্বপ্ন বিচারক হওয়ার। কিন্তু তার সে স্বপ্ন পূরণে বাধা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। অনেক আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। এরপর ২০১৭ সালে ১১তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করেন। পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য প্রবেশপত্রও পান। কিন্তু শুধু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি সুদীপ। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। ফের ২০১৮ সালে ১২তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করেন। যথাসময়ে প্রবেশ পত্র পান। সে বার তিনি একজন শ্রুতি লেখকের জন্য আবেদন করেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে(বিজেএস)। কিন্তু মৌখিকভাবে তার সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবে শ্রুতি লেখক না পাওয়ায় আবেদন বাতিল হলেও নীরব প্রতিবাদ স্বরূপ ১২তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন সুদীপ। আজ শুক্রবার ১৩ তম বিজেএস পরীক্ষা। এই পরিক্ষাতেও তিনি অংশ নেবেন।
ইতোমধ্যে তিনি প্রবেশপত্রও পেয়েছেন। শ্রুতি লেখকের জন্য আবেদন করে ছিলেন বিজেএসে। কিন্তু বিজেএসও তার আবেদন গ্রহণ করেননি। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজিএস) ১৩তম পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য শ্রুতিলেখক চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু গতকাল ওই রিট আবেদন কার্যতালিকা (কজলস্ট) থেকে বাদ (আউট অব লিস্ট) করে আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর ফলে আজ শুক্রবার ৮ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিজিএস পরীক্ষায় রিটকারী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুদীপ দাস শ্রুতিলেখকের সুবিধা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী কুমার দেবুল দে। তিনি বলেন, এই আবেদন নিয়ে হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। খুব দ্রুতই আমরা অন্য একটি বেঞ্চে যাবো। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সুদীপ দাস বলেন, তবু আমি নিরব প্রতিবাদ স্বরূপ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবো। হয়তো কিছু লিখতে পারব না। পরিক্ষার হলে যখন সবাই লিখতে ব্যস্ত থাকবেন, তখন আমি বসে থাকব। আমি শুধু আমার জন্য আইনী লড়াই করেনি। আমার এ লড়াই সকল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য। আগে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা বিসিএস পরিক্ষায় অংশ নিতে পারতো না। একজন দৃষ্টিবন্ধির অবিরাম লড়াইয়ের কারণে আজ আমরা বিসিএস পরিক্ষায় নিতে পারছি। হয়তো একদিন সহকারী জজ পরিক্ষায় শ্রুতি লেখক দিয়ে পরিক্ষায় অংশ নিতে পারবো। কথা হয় সুদীপ দাশের সঙ্গে। তিনি জানান, জন্ম থেকেই তিনি এক চোখে দেখতে পান না। ১০০ ওয়াটের টেবিল ল্যাম্প চোখের সামনে নিয়ে লেখাপড়া করতেন তিনি। বাল্বের প্রচণ্ড তাপে মাথা গরম হয়ে যেতো। মাথায় খুব যন্ত্রণা করতো। কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায় তার দ্বিতীয় চোখটিও। তবুও তিনি লেখাপড়া থামাননি। তার পিতা রেলওয়ে কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র দাশ। স্কুল শিক্ষিকা মাতা মিরা দাশের দ্বিতীয় সন্তান সুদীপ। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা গ্রামে। তার পিতা প্রদীপ চন্দ্র দাস রেলওয়ের নিরীক্ষক ছিলেন। পিতার কর্মস্থল চট্টগ্রাম হওয়ায় সেখানেই সুদীপ দাসের লেখাপড়া। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের লতিফপুর আলহাজ্ব আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে উত্তর কাকতলী আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ২০১৪ সালে অনার্স ও ২০১৬ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। তিনি ১২তম বিজিএসসির পরীক্ষায় শ্রুতি লেখক না পাওয়ায় খালি খাতা জমা দেন সুদীপ দাস। এরও আগে একই কারণে ১১তম পরীক্ষায় তিনি বসতে পারেননি। তবুও এমন প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এখন স্বপ্ন দেখেন বিচারক হবার। একাধিকবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত প্রচলিত আইনের কারণে শ্রুতিলেখক না পেয়ে হল থেকে বেরিয়ে যান সুদীপ।
সুদীপ বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় বরং তারা এখন সমাজের সম্পদ। ইতিমধ্যে সমাজে প্রতিবন্ধীরা সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। উদাহরণ টেনে বলেন, সাউথ আফ্রিকায় প্রধান বিচারপতি একজন অন্ধ ছিলেন। যাকে নেলসন ম্যান্ডেলা নিয়োগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও ভারতের তামিল প্রদেশ এবং পাকিস্তানেও অন্ধ বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ আমার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সেটা প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছি না। আমার ভিতর বিচারিক সক্ষমতা রয়েছে কিনা, তা প্রমাণের সুযোগ কি দেশের আইনে পাব না? ভুলে গেলে চলবে না, মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন, সুদীপ দাস সহকারী জজ পরিক্ষায় অংশ নিতে কোনো বাঁধা নেই। তিনি চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় যেমন শ্রুতি লেখক পেতেন, জুডিসিয়াল পরিক্ষাতেও সেই সুযোগটি যেন পান। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একজন ছাত্র হওয়া, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাস করে যদি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, উকিল বা অন্য যে কোন পেশায় নিযুক্ত হতে পারেন, তবে বিচারক হতে বাধা কোথায়?
ইতোমধ্যে তিনি প্রবেশপত্রও পেয়েছেন। শ্রুতি লেখকের জন্য আবেদন করে ছিলেন বিজেএসে। কিন্তু বিজেএসও তার আবেদন গ্রহণ করেননি। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজিএস) ১৩তম পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য শ্রুতিলেখক চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু গতকাল ওই রিট আবেদন কার্যতালিকা (কজলস্ট) থেকে বাদ (আউট অব লিস্ট) করে আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর ফলে আজ শুক্রবার ৮ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিজিএস পরীক্ষায় রিটকারী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুদীপ দাস শ্রুতিলেখকের সুবিধা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী কুমার দেবুল দে। তিনি বলেন, এই আবেদন নিয়ে হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। খুব দ্রুতই আমরা অন্য একটি বেঞ্চে যাবো। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সুদীপ দাস বলেন, তবু আমি নিরব প্রতিবাদ স্বরূপ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবো। হয়তো কিছু লিখতে পারব না। পরিক্ষার হলে যখন সবাই লিখতে ব্যস্ত থাকবেন, তখন আমি বসে থাকব। আমি শুধু আমার জন্য আইনী লড়াই করেনি। আমার এ লড়াই সকল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য। আগে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা বিসিএস পরিক্ষায় অংশ নিতে পারতো না। একজন দৃষ্টিবন্ধির অবিরাম লড়াইয়ের কারণে আজ আমরা বিসিএস পরিক্ষায় নিতে পারছি। হয়তো একদিন সহকারী জজ পরিক্ষায় শ্রুতি লেখক দিয়ে পরিক্ষায় অংশ নিতে পারবো। কথা হয় সুদীপ দাশের সঙ্গে। তিনি জানান, জন্ম থেকেই তিনি এক চোখে দেখতে পান না। ১০০ ওয়াটের টেবিল ল্যাম্প চোখের সামনে নিয়ে লেখাপড়া করতেন তিনি। বাল্বের প্রচণ্ড তাপে মাথা গরম হয়ে যেতো। মাথায় খুব যন্ত্রণা করতো। কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায় তার দ্বিতীয় চোখটিও। তবুও তিনি লেখাপড়া থামাননি। তার পিতা রেলওয়ে কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র দাশ। স্কুল শিক্ষিকা মাতা মিরা দাশের দ্বিতীয় সন্তান সুদীপ। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা গ্রামে। তার পিতা প্রদীপ চন্দ্র দাস রেলওয়ের নিরীক্ষক ছিলেন। পিতার কর্মস্থল চট্টগ্রাম হওয়ায় সেখানেই সুদীপ দাসের লেখাপড়া। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের লতিফপুর আলহাজ্ব আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে উত্তর কাকতলী আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ২০১৪ সালে অনার্স ও ২০১৬ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। তিনি ১২তম বিজিএসসির পরীক্ষায় শ্রুতি লেখক না পাওয়ায় খালি খাতা জমা দেন সুদীপ দাস। এরও আগে একই কারণে ১১তম পরীক্ষায় তিনি বসতে পারেননি। তবুও এমন প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। এখন স্বপ্ন দেখেন বিচারক হবার। একাধিকবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত প্রচলিত আইনের কারণে শ্রুতিলেখক না পেয়ে হল থেকে বেরিয়ে যান সুদীপ।
সুদীপ বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় বরং তারা এখন সমাজের সম্পদ। ইতিমধ্যে সমাজে প্রতিবন্ধীরা সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। উদাহরণ টেনে বলেন, সাউথ আফ্রিকায় প্রধান বিচারপতি একজন অন্ধ ছিলেন। যাকে নেলসন ম্যান্ডেলা নিয়োগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও ভারতের তামিল প্রদেশ এবং পাকিস্তানেও অন্ধ বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ আমার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সেটা প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছি না। আমার ভিতর বিচারিক সক্ষমতা রয়েছে কিনা, তা প্রমাণের সুযোগ কি দেশের আইনে পাব না? ভুলে গেলে চলবে না, মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন, সুদীপ দাস সহকারী জজ পরিক্ষায় অংশ নিতে কোনো বাঁধা নেই। তিনি চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় যেমন শ্রুতি লেখক পেতেন, জুডিসিয়াল পরিক্ষাতেও সেই সুযোগটি যেন পান। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একজন ছাত্র হওয়া, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাস করে যদি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, উকিল বা অন্য যে কোন পেশায় নিযুক্ত হতে পারেন, তবে বিচারক হতে বাধা কোথায়?